হারিয়ে যাচ্ছে পাখিগুলো

নিজস্ব প্রতিনিধি, দিনাজপুর
  প্রকাশিত : ০৯ নভেম্বর ২০২০, ১৪:০১| আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২০, ১৪:১৪
অ- অ+

এক সময় দিনাজপুর জেলাসহ উত্তরাঞ্চলে নানা প্রজাতির প্রচুর পাখি দেখা যেত। পাখির কলকাকলিতে এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ বিরাজ করতো অঞ্চলটিতে। কিন্তু কালের বিবর্তনে ফল-ফসলে কীটনাশক প্রয়োগ, উপযুক্ত আবাসস্থল ও খাদ্যের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির এসব পাখি। এতে হুমকির মুখে পড়েছে জীব-বৈচিত্র্য।

এদিকে দিনাজপুরের পাখির অভয়াশ্রম ভাটিনা পাখি কলোনিতেও পাখি কমে গেছে। সেখানকার গাছে, মাঠে-ঘাটে, খেতে-খামারে তেমন চোখে পড়ে না হরেক রকম পাখিদের বিচরণ। ভেসে আসে না টুনটুনির কিচির-মিচির, কোকিল, ঘুঘু, বউ কথা কও পাখির সুমধুর সুর। এখন আর পাখির ডাকে ঘুম ভাঙে না উত্তরাঞ্চলের মানুষের।

এসব কথা জানালেন পাখিপ্রেমী হাজী সাইফুল ইসলাম। মোটর গ্যারেজের মালিক হাজী সাইফুল এখন এই পাখি টিকিয়ে রাখতে নিজের গ্রামের বাড়ির আশপাশের বিভিন্ন গাছে, কলস ও ডালি বেঁধে দিয়েছেন।

এক সময় দিনাজপুরের সদর উপজেলার নিভৃত পল্লী ভাটিনায় প্রকৃতির অপরূপ খেয়ালে বাসা বেঁধেছিল হাজার হাজার শামুক ভাঙ্গা পাখি। গ্রামের পুকুরপাড়ের বাঁশঝাড় আর বিভিন্ন গাছ ছিল তাদের স্থায়ী আবাসস্থল। এখানেই বাসা বেঁধে প্রজনন হতো অসংখ্য পাখির ছানা। পাখি দেখার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে ছুটে আসতো দর্শনার্থীরা। এরা আশপাশেই শামুক ঝিনুক খেয়ে জীবন ধারণ করতো। সন্ধ্যার আগেই সব পাখি ফিরে আসতো আবাসস্থলে। এই পাখিগুলো অঞ্চলভেদে শামুক ভাঙা, শামুক খৈল, এশিয়ান ওপেন বিল, ওপেন বিল স্টক ও হাইতোলা মুখ নামে পরিচিত। শামুক ভাঙা পাখির পাশাপাশি এখানে বাস করতো আরো বেশ কয়েক প্রজাতির পাখি।

বর্তমান প্রজন্মের অনেকে এসব দেশি পাখির সঙ্গে পরিচিত না। তারা এসব পাখির নামও জানে না। পাখির অভারণ্য পাখি কলোনিতে কিছু পাখি দেখা গেলেও দেশি পাখিগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এতে ভারসাম্য হারাচ্ছে পরিবেশ। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এই পাখি টিকিয়ে রাখার তাগিদ দিচ্ছেন প্রকৃতিপ্রেমী ও পরিবেশবিদরা।

ভাটিনা গ্রামের পাখিপ্রেমী মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেম জানান, পাখির অভয়াশ্রম ভাটিনা পাখি কলোনিতেও পাখি এখন কমে গেছে। এখানে হরেক রকম পাখির বিচরণ তেমন চোখে পড়ে না। আগের মতো আর সুমধুর সুরও ভেসে আসে না। যদিও গাছে-গাছে কলস টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ‘পাখি শিকার আইনত দণ্ডনীয়’ সাইনবোর্ড শোভা পাচ্ছে এ এলাকার কয়েকটি স্থানে। তারপরও আর নেই আগের মতো পাখি। এই ভাটিনা পাখি কলোনির প্রায় ২৫ বছরের ঐতিহ্য এখন হারিয়ে যেতে বসেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

তিনি বরেন, ফল-ফসলে কীটনাশক প্রয়োগ ও খাদ্যের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় পাখিগুলো।

মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেম এসব পাখি টিকিয়ে রাখতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনার পাশাপাশি জনসচেতনতার তাগিদ দেন।

এ বিষয়ে পরিবেশবিদ রোটারিয়ান আব্দুস সালাম তুহিন জানান, শালিক, কোকিল, ঘুঘু, দোয়েল, বাবুই, টুনটুনি, কাঠঠোকরা, পানকৌড়ি, ডাহুক, বালীহাঁস, বক, ক্যাসমেচি, বাবুই, মাছরাঙা, বটর, টেইটেরা, গোমড়া, প্যাঁচা, কাক ও চিলসহ বিভিন্ন পাখির আবাস ছিল দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলে। এখন আর এসব পাখি খুব একটা দেখা যায় না। এর অন্যতম কারণ হলো- কীটনাশকের অপব্যবহার, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে বন-জঙ্গল নিধন ও পাখি শিকার। উপযুক্ত আবাসস্থল ও খাদ্যের অভাবে দেশীয় প্রজাতির অনেক পাখি এখন হারিয়ে যাচ্ছে বলে জানান এই পরিবেশবিদ।

(ঢাকাটাইমস/৯নভেম্বর/পিএল)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ঝিনাইদহে সুদীপের মৃত্যু ঘিরে রহস্য
এসএসসির ফল প্রকাশের তারিখ ঘোষণা আগামী ১০ জুলাই
ভয়াবহ আর্থিক সংকটে দেশের ৬ বিশেষায়িত ব্যাংক, খেলাপি ঋণ-মূলধন ঘাটতিতে বিপর্যয়
লুকিয়ে রাখা বাচ্চা আমার কাছে পৌঁছে দিলে ২০ হাজার ডলার দেব: তানজিন তিশা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা