সেনাবান্ধব সেনাবাহিনীর গল্প!
আমার আগের লেখায় ‘পুলিশবান্ধব পুলিশিং’ প্রসঙ্গে লিখেছিলাম। আজ আপনাদের ‘সেনাবান্ধব সেনাবাহিনীর’ একটি মহান গল্প শোনাতে এসেছি। এটাকে ভালোবাসার অমর কাহিনিও বলতে পারেন।
সেনাবাহিনীর ইউনিফর্ম পরিহিত এই কর্মকর্তার নাম দেওয়ান মোহাম্মদ তাছওয়ার রাজা। তাঁর আরও একটি পরিচয় আছে। তিনি বাংলার বিখ্যাত মরমী সাধক হাসন রাজার প্রপৌত্র।
নাম যেমন রাজা, সিলেট ক্যাডেট কলেজের প্রাক্তন ছাত্র কর্নেল রাজা আক্ষরিক অর্থেই ছিলেন রাজপুত্র। তাঁর চলা ফেরা, আচার ব্যবহার, পোশাক-পরিচ্ছেদ, মানবিকতা সবই ছিল রাজার মতো।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন সেনা কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে যিনি শারীরিক অসুস্থতার কারণে গত সাত বছরের বেশি সময় ধরে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে কোমায় রয়েছেন।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল দেওয়ান মোহাম্মদ তাছাওয়ার রাজার চাকরির মেয়াদের শেষ দিন ছিল গত ১২ অক্টোবর। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তাকে কর্নেল র্যাঙ্কে উন্নীত করা হয়। তার পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে হাসপাতালের কক্ষেই সম্পন্ন হয় পদোন্নতির আনুষ্ঠানিকতা।
মেডিকেলের বিছানায় অচল-অসাড় দেহ নিয়ে পড়ে থাকা এই উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা হয়তো জানতেও পারলেন না তাঁকে তাঁর বাহিনী কতটা আকাশছোঁয়া সম্মানে ভূষিত করেছেন, তবু বিশ্ব অবাক চোখে তাকিয়ে দেখলো মানবিকতার কী অনন্য নজির স্থাপিত হলো বাংলাদেশে।
সেনাবাহিনী দেখিয়ে দিলো একজন রাজাকে রাজার মতোই সম্মান করতে হয়। ভালোবাসতে হয়। বিশ্বাস রাখুন, যাঁরা তাদের একজন অসুস্থ কর্মকর্তার প্রতি এমন নজিরবিহীন সম্মান, সমমর্মিতা আর সীমাহীন ভালোবাসা প্রদর্শন করলেন, সেই বাহিনীকে কেউ কোনোদিন দাবিয়ে রাখতে পারবে না।
কর্নেল রাজা মহোদয় একজন রাজার মতোই বিদায় নিলেন। এমন বড় হৃদয়ের পরিচয় দেয়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে সশ্রদ্ধ সালাম জানাই।
আশা করতে ভালোবাসি, বাংলাদেশ পুলিশসহ অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সেনাবাহিনীর মতোই নিজেদের কর্মকর্তা, স্টাফ ও সদস্যদের প্রতি মানবিকতার এমন মহান নজির স্থাপন করবেন।
যাঁরা পথ দেখান তারাই সেরা।
স্যালুট বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
ভালোবাসার জশ হোক।
সূত্র: বিবিসি বাংলা; ছবি: আইএসপিআর
লেখক: সিনিয়র এএসপি, রংপুর আরআরএফ