একাত্তরে অস্ত্র জমা দিয়েছি, ট্রেনিং নয়: মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৫ ডিসেম্বর ২০২০, ২০:৩৭| আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২০, ২০:৪১
অ- অ+

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধীতাকারীদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আমরা একাত্তরে অস্ত্র জমা দিয়েছি কিন্তু ট্রেনিং জমা দেয় নাই। আপনারা বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কথা বলবেন আমরা কি আপনাদের চুমো দেবো? না বুঝে ভাস্কর্য নিয়ে বলে থাকলে ক্ষমা চান, আর যদি জেনেশুনে বলে থাকেন তাহলে পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকেন।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ও বাংলাদেশের সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা উচ্ছেদের হুমকির প্রতিবাদে গৌরব ’৭১ আয়োজিত মহাসমাবেশে তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন।

শনিবার বিকালে রাজধানীর শ্যামপুরের ধোলাইরপাড় উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এ মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের সহযোগিতায় ছিলেন শেখ রাসেল ফাউন্ডেশন ইউএসএ (বাংলাদেশ শাখা)।

মুসলিম দেশে ভাস্কর্য থাকতে পারলে বাংলাদেশে থাকতে দোষ কি- এমন প্রশ্ন রেখে মন্ত্রী বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধীতা কখনো সহ্য করা হবে না। বঙ্গবন্ধুর দেশে তার ভাস্কর্য হবেই, এতে কোন সন্দেহ নাই।’

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস এম.পি, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক। উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নাছির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য সানজিদা খানম, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইবুনালের সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নির্মল রোজারিও, আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি বাবু নির্মল রঞ্জন গুহ এবং সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খায়রুল হাসান জুয়েল প্রমুখ।

মুক্তিযুদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, এ উপমহাদেশে আলেম নামের কিছু ভণ্ড আছে। যারা একসময় ইংরেজি ভাষাকে হারাম বলে মুসলমানদের পিছিয়ে দিলেন। একাত্তরেও কিছু ভাড়াটিয়া আলেম ফতোয়া দিল পাকিস্তান ভাঙলে ইসলাম ভেঙে যাবে। আজকে আবার ফতোয়া দেয়া হলো, ভাস্কর্য নাজায়েয। আমি বাবুনগরীদের কাছে বিনয়ের সাথে প্রশ্ন রাখতে রাখতে চাই, আপনারা আগের ফতোয়াবাজধারীদের মতো। আমার ধারণা আপনারা তাদেরই উত্তরসূরী। আপনারা ধর্মকে সামাজিক কাজের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করাতে চান।ধর্মকে পুঁজি করে মানুষকে বিভ্রাম্ত করতে চান।

মন্ত্রী আরো বলেন, আরে ভাস্কর্য তো আপনাদের শানের পাকিস্তানেও আছে। অধিকাংশ মুসলিম দেশে ভাস্কর্য আছে। আমি হালাল-হারামের কথায় বাদই দিলাম। আমার প্রশ্ন, সব মুসলিম দেশে যদি ভাস্কর্য থেকে থাকে তাহলে বাংলাদেশে থাকতে দোষ কি? আসল কথা হলো আপনারা বঙ্গবন্ধুকে সহ্য করতে পারেন নাই। কারণ বঙ্গবন্ধুর কারণে আপনাদের পাকিস্তান টিকে নাই।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক বলেন, এদেশে থাকতে হলে বঙ্গবন্ধুকে মেনে থাকতে হবে। তার ভাস্কর্য এদেশের মোড়ে মোড়ে হবে। এটা তোমাদের মেনে নিতে হবে।

মামুনুল হক ও ফয়জুল করিমকে উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তোমরা বলেছো বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দিবা। কিন্তু সে কাজ করতে আসলে এদেশের মুক্তিকামী মানুষ তোমাদের বঙ্গোপসাগরে ফেলে দিবে।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি বাবু নির্মল রঞ্জন গুহ বলেন, একাত্তরের বিরোধিতাকারীরা, পঁচাত্তরের ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধীতা করছে। এ প্রেক্ষিতে গৌরব’ ৭১ প্রতিবাদী এই মহাসমাবেশ আয়োজন করেছে। আমরা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ এতে সংহতি প্রকাশ করছি।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু বলেন, শকুনরা আবার জেগে উঠেছে। তারা আবার জাতীয় পতাকাকে আঘাত করতে চায়। আর বসে থাকার সময় নাই। এখনই প্রতিবাদের ঝড় বইয়ে দিতে হবে। বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু মানে জাতীয় পতাকা। কাজেই বঙ্গবন্ধুর অবমাননা সহ্য করা হবে না। মামুনুল হককে সারাদেশের কোথাও নামতে দেবো না। যেখানে পাবো সেখানে তাকে প্রতিহত করা হবে।

ব্যরিষ্টার তুরিন আফরোজ বলেন, বঙ্গবন্ধু প্রশ্নে আপোষ হবে না। বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু মানে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের পতাকা। ইসলাম, কুরআন মৌলবাদীদের পৈতৃক সম্পত্তি নয়। আমরা ও ইসলাম জানি, কুরআন আমরাও পড়ি। শরীয়তের প্রশ্ন তুলবেন না, শরীয়ত আমরাও জানি।

গৌরব ৭১ এর সভাপতি এসএম মনিরুল ইসলাম মনির সভাপতিত্বে এবং সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক এফএম শাহীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন গৌরব ৭১ এর সহ সভাপতি হাবিবুর রহমান রোমেল, শেখ রাসেল (ইউএস ইঙ্ক) এর রবিউল ইসলাম রূপম, আওয়ামী নেতা নেহেরীন মোস্তফা দিশি, ঢাকা দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন, ঢাকা -৪ ও ৫ এর সকল ওয়ার্ডের কাউন্সিলরবৃন্দ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকবৃন্দসহ শ্রেণি পেশার মানুষ।

(ঢাকাটাইমস/০৫ডিসেম্বর/বিইউ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
সিটি কলেজে অনিয়ম তদন্তে ‘বাধা দিতেই’ কিচ্ছা-কাহিনী নির্ভর সংবাদ সম্মেলন
ফিরে দেখা ৯ জুলাই: দেশজুড়ে সকাল-সন্ধ্যা ‘বাংলা ব্লকেড’ ঘোষণা
ফেনীতে বন্যার অশঙ্কায় ১৩১ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত
সৌদিতে এক সপ্তাহে ১৭ হাজারের বেশি অভিবাসী গ্রেপ্তার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা