জামালপুরে কলেজ অধ্যক্ষের দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত শুরু

সোলায়মান হোসেন, জামালপুর
 | প্রকাশিত : ১৮ ডিসেম্বর ২০২০, ১৬:২৪

জামালপুর সদর উপজেলার দিগপাইত শামছুল ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মহির উদ্দিন তালুকদারের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে কলেজের কৃষি ডিপ্লোমা শাখার শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগে দুর্নীতি ও কোটি টাকা ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।

নিয়োগ বঞ্চিত শিক্ষকদের এমন অভিযোগে অধ্যক্ষের দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর।

অভিযোগে জানা গেছে, দিগপাইত শামছুল হক ডিগ্রি কলেজে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে কৃষি ডিপ্লোমা কোর্স চালু হয় ২০০৪-২০০৫ শিক্ষা বর্ষ থেকে। ২০০৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি কলেজ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই বছরের ১৯ মে ১০ জন শিক্ষক, একজন সহকারী লাইব্রেরিয়ান ও তিনজন কর্মচারী নিয়োগ দেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। ওই সময় শুধু পাঠদানের অনুমোদন ছিল।

দীর্ঘ ১৪ বছর পর ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর সরকারি আদেশে এই কলেজের ডিপ্লোমা কৃষি বিভাগ এমপিওভুক্ত হয়।

অথচ কলেজের এক পরিসংখানে ২০১৯ সালে কৃষি ডিপ্লোমা বিভাগে মাত্র তিনজন শিক্ষার্থী ছিল। আর কলেজের কৃষি ডিপ্লোমা শাখা এমপিওভুক্ত হতে দীর্ঘ সময় লাগায় প্রতিষ্ঠাকালে নিয়োগ প্রাপ্ত নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে চলে যান।

শাখা এমপিওভুক্ত হওয়ার পর অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী বর্তমান অধ্যক্ষ মো. মহির উদ্দিন তালুকদার আগে নিয়োগপ্রাপ্ত নন-এমপিও ১৩ জন শিক্ষক-কর্মচারীর পূর্বের নিয়োগের দালিলিক কাগজপত্র ও ম্যানেজিং কমিটির স্বাক্ষর জালিয়াতি করে তাদের স্থলে নতুন আটজনকে নিয়োগ দেখিয়ে এমপিওভুক্তির জন্য কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠান। তবে এখনো তাদের এমপিওভুক্তির আদেশ আসেনি।

প্রতিষ্ঠাকালে নিয়োগপ্রাপ্ত নন-এমপিও সাতজন শিক্ষক-কর্মচারীর নিয়োগের দালিলিক কাগজপত্র ও তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির স্বাক্ষর জালিয়াতি মাধ্যমে নতুন করে নিয়োগের বিষয়টি জানাজানি হয়। পরে কৃষি ডিপ্লোমা শাখায় চাকরি প্রত্যাশী নূরে হুদা মোহাম্মদ আলী নামে এক ব্যক্তি সাতজনের নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করেন। একই সঙ্গে তিনি কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা-পরিচালকের বরাবরে লিখিতভাবে অভিযোগও দেন।

চাকরিবঞ্চিত নূরে হুদা মোহাম্মদ আলী এই প্রতিবেদককে বলেন, আমাকে নিয়োগ দেয়ার জন্য ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত কলেজের ভারপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ জুলহাসের মাধ্যমে অধ্যক্ষ আমার কাছে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেছিলেন। আমি ঘুষ দিতে রাজি না হওয়ায় আমার পরিবর্তে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী পদে নুরুন্নাহার ওরফে আলপনাকে নিয়োগ দেয়া হয়।

এছাড়া একইসঙ্গে নিয়োগপ্রাপ্ত গণিত, পরিমিতি ও পরিসংখ্যান ননটেকনিক্যাল প্রশিক্ষক মোহাম্মদ খাজা মিয়ার নামও এমপিওভুক্তির তালিকায় রয়েছে। অথচ তিনি টাঙ্গাইল জেলার থনবাড়ি উপজেলার ইস্পিনপুন দাখিল মাদ্রাসায় গণিত প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

মোহাম্মদ আলী আরো অভিযোগ করে বলেন, প্রত্যেক শিক্ষক-কর্মচারীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকার ঘুষের বিনিময়ে জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় কোটি টাকা ঘুষ নিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন কলেজ অধ্যক্ষ এবং ওই সময়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। আমি এই নিয়োগ বাতিল চেয়ে উচ্চ আদালতে রিটপিটিশনও করেছি, যা বর্তমানে চলমান রয়েছে। কারিগরি অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগও করেছি। আমার অভিযোগ আমলে নিয়ে কর্তৃপক্ষ তদন্ত শুরু করেছেন। আমার বিশ্বাস সঠিক তদন্ত হলে কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্যসহ কলেজ অধ্যক্ষ এবং ওই ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি বেরিয়ে আসবে।

অভিযোগ অস্বীকার করে কলেজ অধ্যক্ষ মহির উদ্দিন তালুকদার বলেন, যদি কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি হয়ে থাকে তা আমার যোগদানের আগে হয়েছে। আমি এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নই।

তবে কলেজের একাধিক সূত্র ও অভিযোগকারী নুরে হুদা মোহাম্মদ আলী বলেন, এমপিওভুক্তির চার মাস আগে বর্তমান অধ্যক্ষ যোগদান করেন এবং জালিয়াতি ও কোটি টাকা নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে তিনি জড়িত রয়েছেন।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, নুরে হুদা মোহাম্মদ আলীর এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভাগীয় তদন্তও শুরু হয়েছে। অধিদপ্তরের ভোকেশনাল শাখার সহকারী পরিচালক বিমল কুমার মিশ্রকে প্রধান করে দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গত ৫ নভেম্বর কলেজের কৃষি ডিপ্লোমা শাখায় শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতি ও অনিয়মের এক দফা তদন্ত করে গেছেন।

তদন্ত কমিটির প্রধান কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বিমল কুমার মিশ্র এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা মহাপরিচালকের আদেশ বলে এই কলেজের কৃষি ডিপ্লোমা শাখার শিক্ষক নিয়োগের অনিয়মের তদন্ত শুরু করেছি মাত্র। সম্প্রতি ওই কলেজে গিয়ে নিয়োগদাতা কর্তৃপক্ষ, নিয়োগপ্রাপ্ত সকল শিক্ষক-কর্মচারী ও অভিযোগকারীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলেছি। বেশ কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছি।

বিমল কুমার বলেন, আদালতে মামলার বিষয়টি আদালতেই ফয়সালা হবে। আমরা বিভাগীয় তদন্তের অংশ হিসেবে নিয়োগ প্রক্রিয়ার আইনি দিক মাথায় রেখে আমরা এগুলো ভালো করে পর্যবেক্ষণ করবো। খুব শিগগির আমরা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবো।

তিনি বলেন, নিয়োগ সংক্রান্ত অনিয়মের তদন্তের বাইরেও আমরা কৃষি ডিপ্লোমা শাখার অস্তিত্ব সরেজমিন পরিদর্শন করে এই শাখার আলাদা কোনো অবকাঠামো পাইনি। এই শাখা চালুর করার পর থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য কৃষিভিত্তিক আধুনিক ল্যাব তো দূরের কথা কোনো ল্যাবই স্থাপন করা হয়নি এখানে। অনেকটা কাগজে কলমে চালু আছে বলে মনে হয়েছে।

বিগত চার বছরের ফলাফলে দেখা যায়, ২০১৬ সালে ৩১ জন শিক্ষার্থী পাস করেছে। এরপর কমতে কমতে সর্বশেষ ২০১৯ সালে পাস করেছে মাত্র তিনজন। এভাবে তো আর কৃষি ডিপ্লোমা শাখা চলতে পারে না। নিয়োগ সংক্রান্ত জালিয়াতির অভিযোগের তদন্তের পাশাপাশি আমরা এই শাখার হালনাগাদ নাজুক পরিস্থিতিও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।

(ঢাকাটাইমস/১৮ডিসেম্বর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

মির্জাপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: দুই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল

রিভিউয়ের মাধ্যমে হোল্ডিং ট্যাক্স সহনীয় পর্যায় নিয়ে আসা হবে: সিসিক মেয়র

এসএসসির ফলাফলে গোপালগঞ্জ জেলায় তৃতীয় রাবেয়া-আলী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ

নড়াইলে বজ্রপাতে স্কুলছাত্র ও গাভীর মৃত্যু

টানা দ্বিতীয়বার ভান্ডারিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান হলেন মিরাজুল ইসলাম

সালথায় ১২ কেজি গাঁজাসহ তিন মাদককারবারি গ্রেপ্তার

সাংবাদিকের ওপর হামলার প্রতিবাদে সিরাজদিখান রিপোর্টার্স ইউনিটির মানববন্ধন 

সোনারগাঁয়ে দুই কোটি টাকার ইয়াবাসহ কারবারি গ্রেপ্তার

এসএসসিতে যশোর বোর্ডে সেরা সাতক্ষীরা

রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটি

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :