ফেনীতে ছয় বছরে বাখরাবাদের ১৩ কোটি টাকার গ্যাস চুরি!

আরিফ আজম, ফেনী
 | প্রকাশিত : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ২১:০৮

ফেনীতে লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। জেলাজুড়ে যত্রতত্র অনুমোদনহীন সংযোগ, ভুয়া বিল বই তৈরি করে গ্রাহকদের কাছ থেকে বিল আদায় এমনকি হাজার হাজার ফুট লাইন বসিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। বাখরাবাদের গুঁটি কয়েক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে গড়ে উঠা ওই চক্র দিবারাত্রি অবৈধ সংযোগ দিয়ে থাকেন। শুধুমাত্র শহরের একটি অবৈধ লাইনের মাধ্যমে গত ৬ বছরে ১৩ কোটি টাকার বেশি গ্যাস চুরি হয়েছে।

বুধবার বাখরাবাদের সমন্বয়ে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, র‌্যাবের বিশেষ অভিযানে অবৈধ লাইনটি উচ্ছেদ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে ফেনী পৌরসভার ১৪নং ওয়ার্ড রামপুরে মহাসড়কের র‌্যাব ক্যাম্প সমুখস্ত স্থান থেকে শুরু হয়ে প্রায় ৭ কিলোমিটার এলাকায় অবৈধ গ্যাস লাইন স্থাপন করেন তৎকালীন ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনির আহাম্মেদ। ওই এলাকায় ১৪৩টি রাইজার স্থাপন করে ৬-৭ হাজার গ্রাহক থেকে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়।

বুধবার অবৈধ গ্যাস লাইন উচ্ছেদে সদর উপজেলা সহকারী কমিশানার (ভূমি) আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ও সহকারী কমিশনার এনএম আবদুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আজগর আলী, বাখরাবাদের নোয়াখালী অঞ্চলের ডিজিএম সগির আহম্মদ ও মো. সোলায়মান, ফেনী এরিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক সাহাবুদ্দীন, শহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক সুদ্বীপ রায়, ফেনী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ওমর হায়দার প্রমুখ অংশ নেন।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, বিপুলসংখ্যক র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যদের নিয়ে পৌরসভার রামপুর এলাকায় অবৈধ গ্যাস লাইন উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করা হয়। ওই এলাকায় অবৈধ স্থাপনার মধ্যে ৭০ শতাংশ পরিমাণ প্রায় ৭ কিলোমিটার অবৈধ গ্যাস লাইন তুলে নেয়া হয়েছে।

বাখরাবাদের ডিজিএম সগির আহম্মদ জানান, ২০০ চুলার সংযোগ থেকে প্রতিমাসে বাখরাবাদের ১৮ লাখ টাকার গ্যাস চুরি করেছে। দীর্ঘদিন ধরে এ লাইন উচ্ছেদের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বুধবারের অভিযানে ৯ হাজার ৫২০ ফুট অবৈধ গ্যাস লাইন উচ্ছেদ ও ৪২টি রেগুলেটর জব্দ করা হয়।

বাখরাবাদের ফেনী এরিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক সাহাবুদ্দীন জানান, পশ্চিম রামপুরে অবৈধ গ্যাস লাইন সংযোগের ঘটনায় ২০১৮ সালের ১২ মার্চ বাখরাবাদের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। ওই মামলার বাদী তৎকালীন এরিয়া ব্যবস্থাপক আবু সাঈদ সরকার। একমাত্র আসামি সাবেক পৌর কাউন্সিলর মনির আহম্মদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।

এর আগে ২০১৮ সালের ১২ মার্চ ওই এলাকায় অবৈধ গ্যাস লাইন উচ্ছেদে অভিযান চালান তৎকালীন সহকারী কমিশনার সোহেল রানা। তিনি ঘটনাস্থল থেকে ৩ জনকে আটক করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই কাউন্সিলর মনিরের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ওপর হামলা চালানো হয়। পরে র‌্যাব-৭ এর সদস্যরা এগিয়ে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শহরের বারাহিপুর এলাকার সাহেব বাজার, বরইয়া রাস্তার মাথা, মৌলভী ইব্রাহীম সড়ক, বারাহিপুর রেল গেইটের আলম ব্যাপারী বাড়ি, শিবপুর নূরানী মাদরাসা সড়ক, শহীদ মেজর সালাহউদ্দীন বীর উত্তম মোড, একাডেমি এলাকার মোল্লার দোকান সংলগ্ন স্থান, নাজির রোড, বিরিঞ্চি আতিকুল আলম সড়ক, আলোকদিয়াসহ শহর ও জেলার বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে সংযোগ দিয়ে গ্যাস ব্যবহার হচ্ছে। এসব সংযোগ থেকে অনেকেই প্রতিমাসে মাসোহারা আদায় করেন।

জানা গেছে, অবৈধ গ্যাস সংযোগ থেকে উৎকোচ আদায়ের ঘটনায় গিয়াস উদ্দিন নামের এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে বাখরাবাদের গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।

বাখরাবাদের ডিজিএম সগির আহম্মদ জানান, কোন অনিয়মের সাথে বাখরাবাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৭ফেব্রুয়ারি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :