১১ বছরেও হয়নি হত্যার বিচার, বাদী-বিবাদীর আপসের অভিযোগ

কোরবান আলী, ঝিনাইদহ
  প্রকাশিত : ০৩ মার্চ ২০২১, ১৭:২৯
অ- অ+

ঝিনাইদহ সদর পৌরসভার মুরারীদহ গ্রামের ভ্যানচালক রেজাউল হত্যার বিচার ১১ বছরেও হয়নি। উল্টো আসামিদের সঙ্গে নিহতের স্ত্রী বাদী আনজিরা খাতুনের আপসের অভিযোগ করেছেন রেজাউলের বড় ভাই আদিল উদ্দিন।

তিনি বলেন, ‘বাদী লিখিত এজাহারে নাম উল্লেখ করে মামলা করলেও পরবর্তীতে স্বাক্ষ্য প্রদানের সময় আদালতে তাদের নাম এড়িয়ে গেছে। আমার ভাইয়ের বউ টাকা নিয়ে হত্যা মামলাটির অপমৃত্যু ঘটিয়েছে। নোটারি পাবলিকে দেওয়া তার শপথ নামায়ও তা প্রমাণিত হয়েছে। যে কারণে আমরা বিচার পাচ্ছি না। থানায় একাধিকবার জীবননাশের আশঙ্কা করে জিডি ও মামলা দায়েরের পরও আসামি বসির ও তার সহযোগিদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি আমার ভাই রেজাউল। তারা তাদের হত্যা মিশন বাস্তবায়ন করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি। এখন বাদীকে টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে আলোচিত রেজাউল হত্যা মামলাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমি আমার ভাই হত্যার বিচার চাই। আমি আদালতের মাধ্যমে এ মামলার বাদী পরিবর্তন চাই। আমার ভাইয়ের বউ টাকা নিয়ে মামলা আর চালাচ্ছে না। আমি তার জায়গায় বাদী হতে চাই।’

তবে বাদী আনজিরা খাতুনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে কিছু জানি না। আমি কোন আপস করিনি। আসামিদের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে।’

এদিকে বিচারাধীন এ মামলার নিয়োজিত পিপি ইসমাইল হোসেন জানান, এখনও ডাক্তার, ম্যাজিস্ট্রেট ও কেসের আইও এই তিন জনের সাক্ষী বাকি আছে। সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলে রায় হবে। দেরিতে হলেও আইনি জটিলতা কাটিয়ে এ মামলার রায়ে প্রমাণিত হত্যাকারীর জেল হবে বলে রাষ্ট্র পক্ষ মনে করেন।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ‘মুরারীদহ গ্রামের গোলাম আকবরের ছেলে রেজাউল ও তার বড় ভাই আদিল উদ্দিনের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ ছিল একই এলাকার মৃত রহিম বক্সের ছেলে বসির উদ্দিনের। এ নিয়ে রেজাউল ও আদিল উদ্দিনকে হুমকি, মারধর ও তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে আসছিল বসির উদ্দিন। এর বিচার পেতে আদালতের দারস্ত হয় আদিল উদ্দিন। এ ঘটনা নিয়ে ২০০৮ সালের ১৬ আগস্ট বসিরসহ নয়জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় হামলা ও মারধরে এজাহার দায়ের করেন আদিল উদ্দিন। এছাড়াও পরের বছর ২১ অক্টোবর রাজ্জাক, বসির ও কবিরের বিরুদ্ধে যেকোন সময় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে খুন-জখমের বিষয়ে থানায় জিডি করেন আদিল।

আসামিদের জবানবন্দি অনুযায়ী, এরপরই ক্ষিপ্ত হয়ে বসির ও তার সহযোগিরা। শুরু করে হত্যার পরিকল্পনা। ভ্যানচালক রেজাউলকে হত্যা করতে ৫০ হাজার টাকা চুক্তি করেন শহরের আরাপপুর মাঝিপাড়া এলাকার রনজিত বিশ্বাসের সঙ্গে। ঘটনার দিন ২০১০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে মোবাইলে রেজাউলকে ডেকে নিয়ে ক্যাডেট কলেজের পেছনের জনৈক দেলোয়ার হোসেনের বাগানে নিয়ে যায় রঞ্জিত। সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করছিল আরাপপুর মাঝিপাড়ার আকতার, সদর উপজেলার হুদাপুটিয়া গ্রামের মঞ্জুর আলম, আরাপপুর এলাকার রাজু শেখ ও আরাপপুর বিশ্বাস পাড়ার আরিফ হোসেন। তারা রেজাউলের হাত-পা বেঁধে ছুরিকাঘাতে তাকে হত্যা করে। পরে তাকে মৃত নিশ্চিত করে গামছা খুলে মাটিতে পুতে দেয়।

এ ঘটনার পরদিক সকালে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। হত্যার ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে সদর থানায় হত্যা মামলা করেন। পরে বশিরসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঝিনাইদহ সদর থানার তৎকালীন এসআই নিরব হোসেন। এর মধ্যে বশির বাদে অন্যদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

তবে এরই মধ্যে বাদী আনজিরা খাতুন পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে ২০১২ সালের ৩০ জুন আপসে মিমাংসা করে বলে অভিযোগ উঠে। যা দেখিয়ে প্রধান পরিকল্পনাকারী বশির জামিন পায়। জামিনে মুক্ত হয়ে প্রধান হত্যাকারী রঞ্জিতও ঢাকায় পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পর মামলাটি ঝিমিয়ে পড়লে নিহতের ভাই আদিল উদ্দিন আদালতে পুনরায় পিটিশন দিয়ে চার্জশিটে না রাজি হলে মামলার তদন্তভার যায় সিআইডি পুলিশের হাতে। সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক হুমায়ন কবীর ২০১৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর ওই ছয়জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। তবে এখনও রায় হয়নি মামলাটির। বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছে নিহতের পরিবার।

(ঢাকাটাইমস/৩মার্চ/পিএল)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
জলবায়ু উদ্বাস্তু ৮ হাজার পরিবার সাতক্ষীরা শহরে এসে নতুন ফাঁদে
সাউথইস্ট ব্যাংক ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কো-ব্র্যান্ডেড ক্রেডিট ও প্রিপেইড কার্ড উদ্বোধন
সিটি ব্যাংক ও আইবিএ-ঢাবির যৌথভাবে ‘এক্সিকিউটিভ লিডারশিপ ট্রেনিং গ্রোগ্রাম’-এর চুক্তি 
ঝিনাইদহে পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলায় ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা