বিটি বেগুন চাষে ঝুঁকছে যশোরের কৃষকরা
লাভজনক হওয়ায় বিটি বেগুন চাষে ঝুঁকছেন যশোরের কৃষকরা। এ জেলায় বিটি বেগুনের চারটি জাত ব্যাপকভাবে চাষাবাদ হচ্ছে। আর কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা করছে যশোর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের কৃষি সরেজমিন গবেষণা বিভাগ।
সরেজমিনে মাঠ পরিদর্শন ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ অঞ্চলে বারি বিটি বেগুন-১, বারি বিটি বেগুন-২, বারি বিটি বেগুন-৩ এবং বারি বিটি বেগুন-৪ সবচেয়ে বেশি চাষ হয়। জৈব পদার্থ ও পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি এবং উঁচু জমিতে এ বেগুন সবচেয়ে বেশি ভালো হয়। জমিতে সেচ প্রয়োগের পরে মাটি মালচিং করতে হয়। এরপর সার প্রয়োগ করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হয়। এ জন্য আগাছা নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে আগাছা বেশি হলে নিড়ানী দিয়ে জমি আগাছামুক্ত করতে হয়। প্রয়োজনীয় নিড়ানী ও মাটি মালচিং করলে গাছের শিকড়ের বৃদ্ধি ভাল হয়। আবহাওয়া ও মাটির অবস্থা ভেদে ৪-৬টি সেচ প্রয়োগ করতে হয়। চারা রোপনের ১২০ থেকে ২০০ দিন পর্যন্ত ফসল সংগ্রহ করা যায়। ভাল ব্যবস্থাপনায় হেক্টর প্রতি ৫০-৬০ টন বেগুন উৎপাদন সম্ভব।
গবেষণায় প্রমাণিত হয়, অধিক ফলন এবং কম কীটনাশক ব্যবহারের কারণে বিটি বেগুন চাষ করতে কৃষক অনেক বেশি আগ্রহী। এ বেগুন চাষে অধিক ফলন হয় ও কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। এছাড়া উৎপাদন খরচও যেমন অনেক কম, তেমনি বাজারে এর দামও ভালো।
কৃষি গবেষকরা বলছেন, ২০১৪ সালে প্রথম মাঠ পর্যায়ে বিটি বেগুন চাষাবাদ শুরু হয়। কীটনাশকের ব্যবহার কমে যাওয়ায় অন্যান্য জাতের বেগুনের তুলনায় বিটি বেগুন চাষে ছয় গুণ বেশি আয় হয়।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বারি বিটি জাতের এই বেগুন কৃষি সরেজমিন গবেষণা বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী চাষ করে অনেকেই এরই মধ্যে লাভবান হয়েছেন। এজন্য বিটি বেগুন চাষে আগ্রহ হয়ে উঠছে স্থায়ীয় কৃষকরা।
সরেজমিন কৃষি গবেষণা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বেগুন চাষের সময় ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমনে বেশিরভাগ বেগুন মাঠেই নষ্ট যায়। এজন্য প্রতি বছর ১৭ থেকে ২০ লাখ মেট্রিক টন কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। ফলে বেগুন চাষের খরচ বেড়ে যায়। কৃষকরা এ থেকে খুব বেশি লাভবান হতে পারেন না। তাছাড়া প্রচুর পরিমানে কীটনাশকের ব্যবহার মানবদেহের জন্যও ক্ষতিকর। পোকার আক্রমণে সহনীয় হিসেবেই বিটি-১,২,৩, ও ৪ নামে চারটি নতুন জাত উদ্ভাবন করে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। এসব জাতের বেগুনে ডগা ও পোকা আক্রমণ করতে পারে না। ফলে বিষমুক্ত বেগুন উৎপাদন সম্ভব হয়।
ঝিনাইদহের শৈলাকুপা উপজেলার চাষি আলিম উদ্দিন বলেন, ‘বিটি বেগুন পরিবেশবান্ধব। এতে কোনও ধরনের বালাইনাশক স্প্রে করার প্রয়োজন পড়ে না। কৃষি গবেষণা বিভাগের কর্মকর্তাদের অনুরোধে বিটি বেগুনের চাষ শুরু করি। এই চাষে খরচও কম। লাভ বেশি।’
দেশি জাতের বেগুন চাষি শাহজাহানের উদাহরণ দিয়ে কৃষক আজাদ হোসেন জানান, শাহজাহান প্রতিদিন সকাল-বিকাল জমিতে কীটনাশক স্প্রে করেন। এর জন্য তাকে কীটনাশক কিনতে হয়। আবার কীটনাশক জমিতে ব্যবহারের জন্য লেবার রাখতে হয়। তার প্রতিদিন কমপক্ষে এক হাজার টাকা খরচ হয়। বিটি বেগুন চাষ করলে এ খরচ লাগে না।
এদিকে দেশি জাতের বেগুন চাষি শাহজাহান বলেন, ‘দেশি বেগুন চাষ করলে কীটনাশক কিনতে গিয়েই অনেক টাকা খরচ হয়। তবে আমার পাশের জমিতে কীটনাশক ছাড়াই বিটি বেগুন চাষ করতে দেখেছি। আমিও আগামীতে এই বেগুন চাষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
যশোর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কাওসার উদ্দীন আহম্মদ বলেন, ‘প্রথম অবস্থায় কৃষকদের বিটি বেগুন চাষে আগ্রহী করতে বেগ পেতে হয়েছে। কিন্তু উৎপাদনে সাফল্য দেখে অন্য কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বেগুনের এ জাতটি কৃষকদের ভাগ্য পরিবর্তনে সহায়ক হবে।’
যশোর কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশে ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন বেগুন উৎপাদন হয়। যা মোট সবজির ৩০ ভাগ। আমরা শৈলকুপায় বারি বিটি বেগুনের প্রদর্শণী দেখেছি। আমরা দেখেছি, দেশি জাতের বেগুনে প্রচুর পরিমানে স্প্রে করা লাগত। কিন্তু বারি বিটি বেগুন চাষে কোনো স্প্রে করা লাগে না। ফলে কৃষকের খরচ কম হয়। লাভ বেশি হয়। আমারা যশোরাঞ্চলে এ বেগুন চাষ ছড়িয়ে দিতে চাই।’
(ঢাকাটাইমস/২৩মার্চ/পিএল)