করোনার দাপট: লোকসানে ময়মনসিংহের লক্ষাধিক মাছ চাষি

আজহারুল হক, ময়মনসিংহ
 | প্রকাশিত : ২৩ জুন ২০২১, ১৯:১১

করোনাভাইরাসের দাপটে অনেকটাই পড়ে গেছে দেশের অর্থনীতি। কর্মহীন হয়ে পড়েছন অগণিত মানুষ। সচ্ছল অনেক পরিবারও আজ সংকটে। ময়মনসিংহও এর বাইরে নয়।

জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ময়মনসিংহ জেলায় প্রায় এক লাখ ১২ হাজার মাছ চাষি রয়েছেন। হ্যাচারি রয়েছে ৩১৭টি। প্রতিবছর এক লাখ ৮০ হাজার কেজি পোনা এবং প্রায় চার লাখ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়। জেলার ৫৩ লাখ ১৩ হাজার ১৬৩ জনের চাহিদা রয়েছে এক লাখ ২৬ হাজার মেট্রিক টন। ফলে উদ্ধৃত্ত হয় দুই লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন। যা বাইরের জেলায় বিক্রি করতে হয়। করোনার কারণে উদ্ধৃত্ত মাছ বিক্রি না হওয়ায় এখন চাষিদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। সরকারি হিসেবেই ৫৮ হাজার ৪৬৭ জন মাছ চাষির আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৩৫ কোটি দুই লাখ ২২ হাজার টাকা।

জেলার ত্রিশাল উপজেলার মৎস্যগ্রাম খ্যাত ধলার ভাই ভাই মৎস্য হ্যাচারির স্বত্ত্বাধিকারী ও বাংলাদেশ ফিস হ্যাচারি অ্যান্ড ফার্ম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা এমএ বাতেন জানান, ময়মনসিংহের উৎপাদিত উদ্বৃত্ত মাছ রাজধানীসহ বিভিন্ন নগর ও জেলা শহরে বিক্রি করা হয়। গণপরিবহন স্বাভাবিকভাবে চালু না হওয়া, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ থাকায় শহরের মানুষ গ্রামে চলে যাওয়ায় রাজধানীসহ শহর, বন্দর ও নগরীতে মাছের চাহিদা কমে গেছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে, মাছের বেচাকেনা কমে যাওয়ায় পোনার চাহিদা কমে গেছে। যে পোনা এক টাকায় বিক্রি হতো এখন পঞ্চাশ পয়সা দরে অর্থাৎ অর্ধেক মূল্যেও বিক্রি হচ্ছে না। ফলে পোনার উৎপাদনও হৃাস পেয়েছে। এতে করে কোটি কোটি টাকার মাছ বেচাকেনা বন্ধ হয়ে গেছে। এই অবস্থায় অনেকের হ্যাচারি বন্ধের উপক্রম হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি বন্ধ হয়ে গেছে। সরকার কম সুদে অথবা প্রণোদনা আকারে হ্যাচারিগুলোকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে তাহলে হ্যাচারি ও মাছের ব্যবসা আবারো নতুন করে দাঁড় করানো সম্ভব হবে। অন্যথায় হ্যাচারি ও মাছের ব্যবসায় যে ধস নেমেছে তা থেকে উত্তরণের কোনো উপায় নেই বলেও মনে করেন তিনি।

ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বয়রা গ্রামের মাছ চাষি রুবেল মিয়া জানান, করোনার আগে শিং মাগুর ১৬ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা মণে বেচাকেনা হতো। এখন ৬/৭ হাজার টাকায় ক্রেতা পাওয়া যায় না। করোনায় গত দেড় বছরে লোকসান গুনতে গুনতে তার মতো অনেকেই পুঁজি হারিয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে।

মৎস্য গ্রাম ধলার ক্ষুদ্র মৎস্যচাষি, ফড়িয়া ও শ্রমিকরা জানান, দিনের পর দিন গণপরিবহন ও ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক না হওয়ায় রেণু পোনা ও পোনামাছ বিক্রির সাথে জড়িত হাজারো ফড়িয়া, ক্ষুদ্র চাষি ও ব্যবসায়ী এখন বেকার হয়ে পড়েছেন। তাদের পরিবারে দেখা দিয়ে অভাব।

ময়মনসিংহ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দিলীপ কুমার সাহা স্বীকার করে বলেন, দেড় বছর ধরে করোনার কারণে ময়মনসিংহ জেলার ৫৮ হাজার ৪৬৭ জন মৎস্যচাষির আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩৩৫ কোটি দুই লাখ ২২ হাজার টাকা। তবে তিনি দাবি করে জানান, জেলায় মাছের উৎপাদনে কোনো ঘাটতি হয়নি। বরং প্রতিবছর চাহিদা পূরণ করে দুই লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন উদ্ধৃত্ত হয়। যা জেলার বাইরে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয়। কোনো চাষি যদি বাইরে মাছ সরবরাহের ক্ষেত্রে গণপরিবহন সুবিধা চায়, তবে মৎস্য অধিদপ্তর সেই সহযোগিতা প্রদান করবে। এসব চাষিদের নামে তালিকা মোবাইল নম্বরসহ মৎস্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। সরকার যদি মৎস্যচাষিদের জন্য প্রণোদনা দেয়, তখন ওই তালিকা অনুযায়ী চাষিদের সহায়তা প্রদান করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/২৩জুন/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :