চট্টগ্রাম বন্দরের বে-টার্মিনাল প্রকল্প ৮০৩ একর ভূমি পেয়েছে

অবশেষে বহুল কাঙ্ক্ষিত বন্দরের বে-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতার সুরাহা হলো। এ কাজে প্রয়োজনীয় ৮০৩ একর খাস জমি অধিগ্রহণের অনুমোদন দিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়।
গত মঙ্গলবার ভূমি মন্ত্রণালয় অধিগ্রহণ-২ এর উপসচিব আসাদুজ্জামান স্বাক্ষরিত চিঠিতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে ভূ-সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইনে ওই ৮০৩ একর জায়গা নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সচিবকে হস্তান্তর করতে বলা হয়েছে। এর ফলে বে-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের জটিলতার অবসান ঘটলো।
এছাড়া ওই ভূমির মধ্যে ৮০২ একর সরকারি খাস জমি হওয়ায় বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যেই বন্দর পাচ্ছে হাজার কোটি টাকার এ জায়গা। এর আগে চট্টগ্রাম বন্দর তার নিজস্ব তহবিল থেকে বে টার্মিনালের জন্য ৬৮ একর জমি কিনেছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় ভূমি বরাদ্দ কমিটি বে-টার্মিনালের জন্য প্রস্তাবিত ৮০৩ একর খাস জমি অধিগ্রহণের জন্য আটকে ছিল। সর্বশেষ মঙ্গলবার ব্যক্তি মালিকানাধীন দশমিক ৭৯ একরসহ মোট ৮০৩ দশমিক ১৭ একর ভূমির অনুমোদন পেয়ে এই প্রকল্প আশার আলো দেখল।
পরবর্তী ধাপে এখন জেলা প্রশাসন ভূমি অধিগ্রহণের ৭ ধারায় এর মূল্যমান নির্ধারণ করবে। গণপূর্তসহ বিভিন্ন সংস্থার সরেজমিন সার্ভে শেষ নির্ধারণ করা মূল্য পরিশোধের জন্য বন্দরের কাছে ৮ ধারা নোটিশ জারি করবে। এর ১২০ দিনের মধ্যে নামমাত্র মূল্যে পাওয়া অর্থ বন্দর পরিশোধ করবে। এছাড়া টাকা পাওয়ার ৭ দিনের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকেরা তাদের পাওনা বুঝে নিয়ে জায়গা ছাড়বেন। বন্দরকে সেই জায়গা হস্তান্তর করবে জেলা প্রশাসন। এরপরই শুরু হবে বে-টার্মিনাল নির্মাণের কাজ।
এদিকে বন্দর সূত্র জানায়, প্রায় ৫০ লাখ টিইইউস কনটেইনার ধারণক্ষমতার বে-টার্মিনাল প্রকল্প আন্তর্জাতিক মানের বন্দর হিসেবে গড়ে তুলতে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে সিঙ্গাপুর, আরব আমিরাত, দক্ষিণ কোরিয়া ও সৌদি আরবসহ সাতটি দেশ।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, তিনটি টার্মিনালের একটি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক) এককভাবে এবং অপর দুটি বিল্ড-অপারেট অ্যান্ড ট্রান্সফার (বিওটি) ভিত্তিতে নির্মিত হবে। যা চালু হবে ২০২৬ সালের মধ্যে।
ভূমি জটিলতার অবসান প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর সচিব উমর ফারুক ঢাকাটাইমসকে বলেন, বে-টার্মিনাল প্রকল্পের কাজ বন্দর কর্তৃপক্ষ অনেক আগেই হাতে নিয়েছে। বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে ৬৮ একর জায়গা কিনে নিয়েছিল এবং বাকিটা সরকারি খাস জমি হওয়ায় ভূমি উন্নয়নের কাজ চলমান ছিল। এখন ভূমি মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বে টার্মিনাল প্রকল্পে নতুন আশার আলো দেখা যাচ্ছে। বর্তমানে সেখানে ট্রাক টার্মিনালে কাজ চললেও ভূমি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মূল বে-টার্মিনাল নির্মাণের নকশা ও অন্যান্য কাজ শুরু হয়ে যাবে। এর ফলে বিশ্বে চট্টগ্রাম বন্দর হবে প্রথম সারির বন্দর। জাহাজ জট বলে কিছু থাকবে না। পণ্য পরিবহন খরচ কমে যাবে। এর সুফল পাবে পুরো দেশ।
এর আগে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর বে-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে পতেঙ্গা থেকে হালিশহর এলাকার সাগর উপকূলে টার্মিনালটি নির্মাণের সুবর্ণ সুযোগকে কাজে লাগানোর জন্য এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। অপার সম্ভাবনার এই প্রকল্পে থাকবে রেল, সড়ক ও নৌ-পথের সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা।
বন্দর ব্যবহারকারীদের মতে, বে টার্মিনাল হলে প্রায় ১২ মিটার ড্রাফট এবং ২৮৫ মিটার দৈর্ঘের পাঁচ হাজার টিইইউস ধারণ ক্ষমতার জাহাজ এখানে ভিড়ানো যাবে। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের জট অনেকাংশে কমে যাবে। সময় ও আমদানি-রপ্তানি খরচও কমবে। (ঢাকাটাইমস/২৫জুন/পিএল)

মন্তব্য করুন