ফোনকল পেলেই অক্সিজেন নিয়ে ছুটে যান ইয়াছিন শরীফ
মোটরসাইকেলে চালকের পেছনে অক্সিজেনের সিলিন্ডার নিয়ে বসা এক যুবক। গন্তব্য পরশুরাম উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের মালিপাথর গ্রামে। করোনার উপসর্গে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া রোগীর জন্য অক্সিজেন প্রয়োজন- রবিবার রাতে এমন ফোনকল পেয়েই অক্সিজেনের সিলিন্ডার নিয়ে ছুটে যান। করোনার শুরু থেকেই এ কার্যক্রম চলছে। এই কর্মসূচির উদ্যোক্তা পরশুরাম উপজেলা যুবলীগ সভাপতি ইয়াছিন শরীফ মজুমদার। ফেনীর পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার ৯ ইউনিয়নে বিনামূল্যে অক্সিজেন সরবরাহের এ কাজ করেন তিনি।
চিথলিয়া ইউনিয়নের অলকা গ্রামের এক বাসিন্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। রবিবার রাতে তার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় ফোন করা হয় শরীফকে। এরপর হাসপাতালে অক্সিজেন সংকট থাকায় তিনি পৌঁছে দেন সিলিন্ডার।
করোনার শুরুর দিকে গত বছরের ২০ জুলাই থেকে ‘হ্যালো অক্সিজেন সেবা’ নামে সামাজিক কর্মসূচির উদ্যোগ নেন ইয়াছিন। তিনি বলেন, ‘নিজস্ব অর্থায়নে প্রথমে পাঁচটি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে সেবা শুরু করি। কিছুদিন পর বন্ধুবান্ধবও এ কাজে সহায়তা করতে এগিয়ে এলেন। নিজের ও বন্ধুদের অর্থায়নে এখন ২০টি সিলিন্ডার আছে।’
আবদুর রহিম হৃদয়, নুরুল ইসলাম সিজান, আমিনুল ইসলাম রানা, সাইফুল ইসলাম, জোটন চন্দ্র দাস ও আজিজুল হাকিম আরাফাত নামের ছয়জন যুবক এই অক্সিজেন সেবায় নিয়োজিত আছে।
ইয়াছিন জানান, ৫ জুলাই পর্যন্ত ৮০০-এর বেশি রোগীর বাড়িতে ও হাসপাতালে অক্সিজেনের সিলিন্ডার পৌঁছে দিয়েছেন। এজন্য কোনো টাকা নেয়া হয় না। এছাড়া করোনায় আক্রান্ত এমনকি উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ২৭ জন ব্যক্তিকে দাফন করেছে তার নেতৃত্বাধীন দাফন টিম। করোনাকালে দুস্থ ও কর্মহীন মানুষের জন্য ত্রাণ ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণের কাজও করেছেন তারা।
ইয়াছিন বলেন, করোনা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। ফলে এখন প্রচুর অক্সিজেনের চাহিদা। কোনো ব্যক্তি অক্সিজেনের অভাবে যেন মারা না যান সেজন্য তারা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন।
গত বছরের নভেম্বরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হুমায়ুন শাহরিয়ার। তিনি জানান, হাসপাতালে ভর্তির পর প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট অনুভব হচ্ছিল। তখন হাসপাতাল অক্সিজেন দিতে না পারায় ইয়াছিনদের খবর দিই। ইয়াছিন ও তার স্বেচ্ছাসেবকরা অক্সিজেন নিয়ে ছুটে আসেন। তাদের দেয়া দুটি অক্সিজেনের মাধ্যমে দুইদিন পর্যন্ত সেবা নিয়েছি।
পরশুরাম সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান চৌধুরী আসিফ বলেন, কয়েকজন তরুণের উদ্যোগে হ্যালো অক্সিজেন সেবা একটি মহতি উদ্যোগ। অক্সিজেন নিয়ে মূমূর্ষ রোগীদের পাশে দাঁড়ানোয় তাদের সাধুবাদ জানাই।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ইয়াছিন আলাউদ্দিন ডালিম বলেন, ‘ইয়াছিন শরীফ মজুমদারের নেতৃত্বে হ্যালো অক্সিজেন সেবা দারুণ সাড়া জাগিয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের চাপ বেড়ে গেলে আমরাও তাদের সহযোগিতা নিচ্ছি। অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯০ এর উপরে থাকা রোগীদের বাড়িতে তারা অক্সিজেন পৌঁছে দেন।’
(ঢাকাটাইমস/৬জুলাই/কেএম)