কারাগারের এক সেলে নিঃসঙ্গ সাহেদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:৩৩ | প্রকাশিত : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:২২

একসময় ব্যবসা-বাণিজ্য, টেলিভিশনে টক শো আর নানা ধান্ধা নিয়ে দিন-রাত ব্যস্ত সময় কাটনো রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদুল করিমের এখন নিঃসঙ্গ জীবন। প্রতারণার অভিযোগে একাধিক মামলায় গ্রেপ্তার সাহেদ বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্তরীণ। সেখানে একটি নির্জন সেলে একাকী নিভৃতে সময় কাটে তার।

কারাগারের সূত্রে জানা গেছে, প্রতারণার অভিযোগে আটক সাহেদ কোনো ডিভিশন পাওয়া বন্দি নন। তবু যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে তাকে একটি সেলে আলাদা রাখা হয়েছে।

ওই সেলেই অলস সময় কাটে তার। নিয়ম অনুযায়ী কারাগারে দুই বেলা খাবার দেয়া হয়। সকালে ঘুম থেকে উঠে তিনি কারাগার থেকে দেয়া খাবারে নাস্তা সারেন। এরপর সেলের মধ্যেই পায়চারি করে সময় কাটান। কখনো বা আবার ঘুমিয়ে পড়েন। কারাগার থেকে দেয়া খাবারেই চলে তার রাতের আহার। কারাবিধি অনুযায়ী কোনো বন্দি চাইলে বাড়তি খাবার কিনে খেতে পারেন। তবে একাকি সেলে আটক সাহেদকে সেটি করতে বেশি দেখা যায় না।

একসময়ের ‘গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ সাহেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে কারাগারে তেমন কেউ আসে না। অবশ্য করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে কারাগারে বন্দিদের সাক্ষাৎ সীমিত করে রেখেছে কর্তৃপক্ষ।

No description available.

কারাগারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কারারক্ষী বলেন, একসময়ে টকশো মাতিয়ে রাখলেও কারাগারে সাহেদের কথা বলার মতো কোনো সঙ্গী নেই। বিমর্ষ চেহারায় সাহেদকে একাকী সেলে দেখা যায়।

রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ জাল-জালিয়াতি, প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক বনে নিজেকে শিল্পপতি হিসেবে জাহির করেন। অন্যদিকে একজন সমাজবিশ্লেষক পরিচয়ে বিভিন্ন টেলিভিশন টক-শোতে হয়ে ওঠেন এক চেনামুখ। একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক হিসেবেও আবির্ভূত হন। তবে উত্থানের মতোই পতনও যেন ছিল তার ছায়াসঙ্গী।

বৈশ্বিক মহামারি করোনার সংক্রমণ দেশে বিস্তৃত হলে তার রিজেন্ট হাসপাতালকে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে অনুমোদন করিয়ে নেন সাহেদ। কিন্তু র‌্যাবের অভিযানে ধরা পড়ে তার প্রতিষ্ঠান থেকে করোনার জাল সনদ দেয়ার বিষয়টি।

এরপর একে একে বেরিয়ে আসে তার বিভিন্ন অবৈধ বাণিজ্য-বেসাতি, ধান্দাবাজি ও প্রতারণার খবর। এরপরই গা ঢাকা দেন তিনি। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। ভারতে পালিয়ে যাওয়ার প্রাক্কালে ২০২০ সালের ১৫ জুলাই সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্ত এলাকা থেকে সাহেদকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাবের একটি দল। বেশ কিছু দিন রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের পর তার জায়গা হয় কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহাবুবুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সাহেদকে একজন সাধারণ বন্দি হিসেবেই কারাগারে রাখা হয়েছে। তিনি কোনো ভিআইপি বা ডিভিশন পাওয়া বন্দি নন। তাকে আলাদাভাবে একটি সেলে একাকি রাখা হয়েছে।’

No description available.

সাহেদকে একটি সেলে একা রাখার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার সুভাষ চন্দ্র ঘোষ ঢাকাটাইমসকে বলেন, তিনি একজন আলোচিত বন্দি। তাই তাকে একটি সেলে রাখা হয়েছে। তবে তিনি কোনো ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দি নন।’

সাহেদের বিরুদ্ধে ঢাকাসহ সারা দেশে ৫০টির বেশি মামলা রয়েছে। মামলাগুলোর বেশির ভাগই প্রতারণার। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের মামলাও হয়েছে। এর মধ্যে দুটি মামলার তদন্ত করেছে র‌্যাব। ওই মামলায় র‌্যাব সাহেদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে। বর্তমানে ওই মামলাগুলো ঢাকা মহানগর সেশন জজ আদালতে বিচার চলছে।

এ ছাড়া সাহেদের বিরুদ্ধে র‌্যাব-৬ সাতক্ষীরার দেবহাটা থানায় করা অস্ত্র মামলার চার্জশিট ইতোমধ্যে আদালতে দাখিল করেছে। অন্য মামলাগুলোর তদন্ত চলছে।

সাহেদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া মামলায় সাক্ষগ্রহণ শুরু হয়েছে বলে জানান ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু।

(ঢাকাটাইমস/১৯সেপ্টেম্বর/এএ/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :