ফুল দিয়ে শিক্ষার্থীদের বরণ, প্রাণ ফিরেছে ঢাবির হলে

ঢাবি প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৫ অক্টোবর ২০২১, ০৯:৩৫| আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২১, ০৯:৫৯
অ- অ+

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত বছরের মার্চে ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেওয়ার পর নিস্তব্ধতার মধ্য দিয়ে দেড় বছর পার করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোও। দীর্ঘদিন পর সেই নিস্তব্ধতা ভেঙে হলে আসতে শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের ফুল দিয়ে বরণ করছেন সংশ্লিষ্ট হল কর্তৃপক্ষ। তাদের পদচারণায় প্রাণ ফিরেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে।

মঙ্গলবার সকাল আটটায় হলগুলো খুলে দেওয়া হয়। এরপর স্নাতক চতুর্থ বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীরা করোনার টিকা নেওয়ার সনদ দেখিয়ে সকাল ৮টা থেকে হলে উঠছেন। শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিচ্ছেন হলের আবাসিক শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

সকালে বিভিন্ন হলে ঘুরে দেখা যায়, হলের প্রবেশপথে শিক্ষার্থীদের থেকে টিকা গ্রহণের সনদ ও হল কার্ড দেখে তাদের ছাত্রত্ব চিহ্নিত করছে সংশ্লিষ্ট হল কর্তৃপক্ষ। এরপর ফুল দিয়ে তাদের বরণ করে নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের দেওয়া হচ্ছে একটি মাস্ক, চকোলেট ও একটি নির্দেশনা।

কর্তৃপক্ষের এমন ব্যবস্থাপনা দেখে খুশি শিক্ষার্থীরা। শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, সকাল আটটায় হলগেটে এসে নিজের কাগজপত্র দেখিয়েছি। হল কর্তৃপক্ষ আমাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নিয়েছে। অনেকদিন পরে এমন দৃশ্য আমাকে বেশ ভালোই লেগেছে।

হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের স্নাতকোত্তরের এক শিক্ষার্থী বলেন, বরণ করে নেওয়ার বিষয়টি ভালো লাগছে। হল কার্ড ও টিকা কার্ড প্রদর্শন করে হলে উঠতে পারছি। হলে ফিরতে পেরে আমার যে পরিমাণ ভালো লাগছে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।

দেশে করোনা শনাক্তের পর গত বছরের ১৮ মার্চ থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোও খালি করে দেওয়া হয়। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ১৯টি হল ও চারটি হোস্টেলে ২৬ হাজারের মতো শিক্ষার্থী থাকছে, যদিও এগুলোর শিক্ষার্থী ধারণ ক্ষমতা এর প্রায় অর্ধেক।

স্মরণকালের সবচেয়ে দীর্ঘ ছুটিতে সেই শিক্ষার্থীদের যে আবাসন নিয়ে যে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছিল, তার অবসান হলো আজ। তবে এখনও করোনার অবসান না হওয়ায় সব শিক্ষার্থী এথনই হলে উঠতে পারছে না। শুধুমাত্র স্নাতক চতুর্থ বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীরা হলে উঠছেন। ধাপে ধাপে শিক্ষার্থীদের হলে তোলার পরিকল্পনা নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

হল খোলার পরে হল কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষার্থীদের জন্য বেশ কিছু নিয়ম বেধে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

হলের জন্য যেসব নিয়ম পালন বাধ্যতামূলক সেগুলো হলো

# কক্ষের বাইরে গেলে সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে নিয়মিত ও সার্বক্ষণিক সঠিক নিয়মে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরতে হবে।

# স্বাস্থ্যবিধি পালনের জন্য সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে।

# স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী পরস্পরের কাছ থেকে কমপক্ষে ১ মিটার (৩ ফুট) দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

# কোনো কক্ষের মেঝেতে শোয়া যাবে না। এক বিছানায় একাধিক ব্যক্তি শোয়া যাবে না। কেবল আবাসিক ও ধৈতাবাসিক শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করতে পারবেন।

# কোনো বহিরাগত বা বাহির থেকে আসা কাউকে কক্ষে অবস্থান করতে দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনসাপেক্ষে কক্ষে ও কক্ষের বাহিরে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।

# শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ শুরু এবং কক্ষের প্রয়োজনীয় আশপাশ সবসময় নিজ দায়িত্বে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং এক্ষেত্রে হল প্রশাসন সহযোগিতা প্রদান করবে।

# হল ডাইনিং, ক্যান্টিন, মেস, দোকান, সেলুন, টিভি রুম, অডিটোরিয়াম, অতিথিকক্ষ, পাঠাগার, মসজিদ ও উপাসনালয়ে ভিড় করা যাবে না। এসব স্থানে সামাজিক দূরত্ব মেনে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।

# ডাইনিংয়ে পালাক্রমে খেতে হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত অতিথিকক্ষে শিক্ষার্থীদের সমাবেশ বন্ধ থাকবে।

# বেড়ানো ও ঘোরাঘুরি থেকে বিরত থাকতে হবে এবং সভা-সমাবেশ, রেস্তোরাঁ, পার্টি ও গণপরিবহন এড়িয়ে চলতে হবে।

ক্যান্টিন-ক্যাফেটেরিয়ার জন্য যেসব নিয়ম মানা বাধ্যতামূলক

# নিয়মিত ও সার্বক্ষণিক নিয়মমাফিক নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক।

# স্বাস্থ্যবিধি পালনের জন্য সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী পরস্পরের কাছ থেকে কমপক্ষে ১ মিটার (৩ ফুট) দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

# প্রবেশ-বহির্গমন পথে ভিড় এড়িয়ে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে।

# ক্যান্টিন-ক্যাফেটেরিয়ায় একাধিক ফটক থাকলে সেগুলোর মধ্যে একটি প্রবেশের জন্য এবং অন্যটি বহির্গমনের জন্য ব্যবহার করতে হবে।

# সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বসার ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং অপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্র অপসারণের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

# ক্যান্টিন-ক্যাফেটেরিয়ায় পালাক্রমে খাবার খেতে হবে। তবে বোতলজাত পানীয় এবং ডিসপোজেবল পাত্রে খাবার সংগ্রহ করে রুমে বসে খাওয়া নিরাপদ।

# একই সময়ে কর্মীদের সংখ্যা সীমিত রাখতে ১০-১৫ মিনিটের ব্যবধানসহ শিফট পরিচালনা করতে হবে।

# স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে ব্যবহৃত ছুরি-চামচ, খাবারের পাত্র, কাপ ইত্যাদি পুনর্ব্যবহারের আগে ডিটারজেন্ট দিয়ে যথাযথভাবে পরিষ্কার করতে হবে।

# প্রত্যেকবার ব্যবহারের আগে খাবারের টেবিলসহ অন্যান্য আসবাবপত্র জীবাণুমুক্ত করতে হবে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্বক্ষণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।

# দরজা ও জানালা খোলা রেখে বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

# কোনো নির্দিষ্ট সমস্যার ব্যাপারে দায়িত্বরত ম্যানেজার বা সুপারভাইজারকে জানাতে হবে।

(ঢাকাটাইমস/৫অক্টোবর/আরএল/এমআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ: টঙ্গীর তিন বিএনপি নেতাসহ ৪ জন বহিষ্কার
পশ্চিমবঙ্গের একই এলাকা থেকে নিখোঁজ ৫০০ বিবাহিত তরুণী!
রপ্তানি বৃদ্ধি ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য জাপানি সহায়তায় পরীক্ষাগার নির্মাণ হবে
ঝিনাইদহে সুদীপের মৃত্যু ঘিরে রহস্য
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা