ইকবাল-ইকরামদের পেছনে কারা, খুঁজছে পুলিশ

কুমিল্লা প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৪ অক্টোবর ২০২১, ২২:৫১
ইকবাল-ইকরামসহ চার আসামির রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।

কুমিল্লা নগরীর একটি পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ রাখার অভিযোগে ইকবাল ও ইকরাম হোসেনসহ চারজনকে সাত দিনের রিমান্ডে পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। ঘটনার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেলেও এর পেছনে কারা কলকাঠি নেড়েছে সে ব্যাপারে এখনও মুখ খুলেননি আসামিরা। ঘটনা পেছনে কারা রয়েছে সেটা বের করার চেষ্টা করছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে সেটা বেরিয়ে আসবে বলে আশা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সূত্রে জানা যায়, চার আসামির মধ্যে ইকরাম ও ইকবালকে প্রাধান্য দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। এর মধ্যে ইকরাম ৯৯৯ নম্বরে কল করে পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ থাকার কথা পুলিশকে জানান। আর ইকবাল পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআনের একটি কপি রাখেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে নেতৃত্ব দিচ্ছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি সাইফুল ইসলাম। সঙ্গে আছেন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা।

রবিবার বিকাল পর্যন্ত খবরে জানা যায়, প্রথম দিন ইকরাম ও ইকবালকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও ঘটনার নেপথ্যে কারা রয়েছেন সে ব্যাপারে তারা এখনো মুখ খোলেনি। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নেপথ্যের লোকদেরই খুঁজছে।

সূত্র আরও জানায়, ইকরাম ও ইকবাল দুজনই মাদকসেবী। টুকটাক মাদক কারবারের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুমিল্লার একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে জানান, বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। তারা প্রতিটি বিষয় ধরে ধরে এগোনোর চেষ্টা করছেন। ঘটনার গভীরে কাদের ইন্ধন আছে, তা খুঁজে বের করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

শনিবার বেলা ১২টার দিকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মামলায় চারজনকে কুমিল্লা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়। পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। বিচারক মিথিলা জাহান নিপা তাদের সাত দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। ইকবাল ও ইকরাম ছাড়া বাকি দুজন হলেন ফয়সাল ও হুমায়ুন। তারা স্থানীয় মাজারের খাদেম বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার রাতে ইকবালকে কক্সবাজার থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শুক্রবার বেলা ১২টায় কুমিল্লা পুলিশ লাইনসে এনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

পুলিশ জানায়, কুমিল্লা নগরীর ১৭নং ওয়ার্ড দ্বিতীয় মুরাদপুর লস্করপুকুর এলাকার নূর আহম্মদ আলমের ছেলে ইকবাল। ইকবালের মা আমেনা বেগম জানান, ইকবাল ১৫ বছর বয়স থেকেই নেশা শুরু করেন। দশ বছর আগে বরুড়া উপজেলায় বিয়ে করেন তিনি। তার এক ছেলে রয়েছে। পাঁচ বছর আগে ইকবালের স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে যায়। এরপর ইকবাল জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মিয়াবাজার এলাকার কাদৈর গ্রামে বিয়ে করেন। এই সংসারে তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ইকবালের স্ত্রী-সন্তান এখন কাদৈর গ্রামে থাকে।

মা আমেনা বেগম আরও জানান, ইকবাল নেশাগ্রস্ত হয়ে নানানভাবে পরিবারের সদস্যদের ওপর অত্যাচার করতেন। বিভিন্ন সময় রাস্তাঘাটে হাঁটেন। গোসলখানার দরজা বন্ধ করে ইয়াবা সেবন করেন। ইকবাল মাজারে মাজারে থাকতে ভালোবাসতেন। বিভিন্ন সময় আখাউড়া মাজারে যেতেন। কুমিল্লার বিভিন্ন মাজারেও তার যাতায়াত ছিল।

ইকবাল পঞ্চম শ্রেণি পাস। দশ বছর আগে বন্ধুদের সঙ্গে অন্য পাড়ার আরও কিছু ছেলের সঙ্গে মারামারি হয়। এ সময় ইকবালকে পেটে ছুরিকাঘাত করে। তখন ইকবালের প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়।

আমেনা বেগম বলেন, তারপর থেকে অপ্রকৃতস্থ ইকবাল। তার চলাফেরার কারণে বিভিন্ন সময় চুরির অপবাদে তাকে স্থানীয়রা মারধর করতো। ইকবাল ভালো ক্রিকেটও খেলতে পারতেন বলেও জানান তার মা।

পুলিশের একটি সূত্র বলছে, ইকবাল মাদক সেবনের পাশাপাশি টুকটাক মাদক ব্যবসা করতেন। অপ্রকৃতস্থ হলে তিনি মাদক ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতেন না। এ ঘটনায় কারো ইন্ধন থাকতে পারে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইকবালের পরিবার স্থানীয় ১৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ সোহেলের মালিকানাধীন বস্তি এলাকায় ভাড়া থাকে। তাদের নানা কাজে সহায়তা করতেন কাউন্সিলর। পুলিশ বলছে, কাউন্সিলরের এক ভাতিজার সঙ্গে ইকবালের ঘনিষ্ঠতা আছে। তিনিও মাদকসেবী। ইকবাল রঙয়ের কাজ করতেন। মাঝে মাঝে নির্মাণ কাজের সহযোগী হিসেবেও কাজ করতেন।

ঘটনার দিন ৯৯৯-এ কল করেন ইকরাম হোসেন (৩০)। ইকরাম নগরীর কাশারিপট্টির রিকশাচালক বিল্লাল হোসেনের ছেলে। তিনি বিবাহিত হলেও উগ্র ও মাদকাসক্ত হওয়ায় স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা হয়নি। তিনি পাইপ মিস্ত্রির কাজ করেন। ঘটনার রাতে ইকরাম ছোট ভাইয়ের সঙ্গে ঝগড়া করে বেরিয়ে যান। সারারাত বাইরে থাকেন তিনি। পরদিন সকালে নানুয়ার দিঘির পাড়ে গিয়ে ৯৯৯-এ কল করেন ইকরাম। তারপর পুলিশ ঘটনাস্থলে হাজির হয়। সিসিটিভি ফুটেজে ইকবাল মসজিদে যাওয়ার দুই মিনিট পর ইকরামকে ঘটনাস্থলে দেখা যায়।

একটি সূত্রে জানা যায়, ইকরামকে পুলিশ ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে। ঘটনার পর থেকে তিনি পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইকরাম কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কুপন্থী হিসেবে পরিচিত। কুমিল্লার একটি অভিজাত মার্কেটের মালিকের নাতির সঙ্গে তার সুসম্পর্ক। ওই ব্যক্তিও মাদকসেবী। পুলিশ সবগুলো ঘটনার হিসাব মেলানোর চেষ্টা করছে।

ইকরামের মা সেলিনা আক্তার বলেন, স্থানীয় বখাটেদের সঙ্গে মিশে আমার ছেলে নষ্ট হয়ে গেছে।

গত ১৩ অক্টোবর নগরীর নানুয়ার দিঘির পাড়ের একটি অস্থায়ী পূজামণ্ডপে হনুমানের মূর্তির ওপর কোরআন শরিফ রাখার খবর ছড়িয়ে পড়লে কুমিল্লাসহ সারাদেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় চাঁদপুরে পাঁচজন, নোয়াখালীতে দুজন ও কুমিল্লায় একজনের প্রাণহানি ঘটে। এছাড়া রংপুরের পীরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে আগুন ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

(ঢাকাটাইমস/২৪অক্টোবর/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

মির্জাপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: দুই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল

রিভিউয়ের মাধ্যমে হোল্ডিং ট্যাক্স সহনীয় পর্যায় নিয়ে আসা হবে: সিসিক মেয়র

এসএসসির ফলাফলে গোপালগঞ্জ জেলায় তৃতীয় রাবেয়া-আলী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ

নড়াইলে বজ্রপাতে স্কুলছাত্র ও গাভীর মৃত্যু

টানা দ্বিতীয়বার ভান্ডারিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান হলেন মিরাজুল ইসলাম

সালথায় ১২ কেজি গাঁজাসহ তিন মাদককারবারি গ্রেপ্তার

সাংবাদিকের ওপর হামলার প্রতিবাদে সিরাজদিখান রিপোর্টার্স ইউনিটির মানববন্ধন 

সোনারগাঁয়ে দুই কোটি টাকার ইয়াবাসহ কারবারি গ্রেপ্তার

এসএসসিতে যশোর বোর্ডে সেরা সাতক্ষীরা

রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটি

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :