জনপ্রতিনিধি-কর্মকর্তা জনগণের সেবক, সবাইকেই মর্যাদা দিতে হবে

শফিক আলম মেহেদী
 | প্রকাশিত : ১৮ জানুয়ারি ২০২২, ২১:৩৭

আমি তিনটা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলাম। পর্যটন, শ্রম এবং সর্বশেষ নৌ মন্ত্রণালয়। আমরা মাঠ প্রশাসন থেকে কাজ শুরু করেছি। সহকারী কমিশনার ও ম্যাজিস্ট্রেট থেকে সচিব পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ৩২ বছরের যাত্রাপথ। সেখানে এই ধরনের সমস্যা আমি ব্যক্তিগতভাবে ফেস করিনি। আমরা সরকারের প্রতিনিধির সাথে, বিশেষ করে ইউএনও থেকে শুরু হয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করার।

আমি সবসময় মনে করতাম যে, মানুষ আমাদের কাছে আসবে, আমরা সরকারের পক্ষ থেকে, সরকারের তরফ থেকে মানুষকে বিভিন্নভাবে সেবা দান করব। সেবা দান করতে আমরা বাধ্য। আমরা সেবক। কর্মকর্তা শব্দটিও আমি ব্যক্তিগতভাবে ইয়ে করি না। আসলে আমরা সেবক কিন্তু।

এখানে যদি মানসিকতা থাকে একজন সরকারি কর্মকর্তা নিজেকে জনসেবক ভাবে তাহলে কিন্তু কোনো সমস্যা নেই। পক্ষান্তরে যারা রাজনীতিবিদ এবং যারা স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি বা পার্লামেন্টের সদস্য তারাও জনগণের সেবক। আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক।

আমরা শুধু জীবিকা হিসেবে বেছে নিয়েছি সরকারি চাকরি। অন্যদিকে রাজনীতিবিদরা রাজনীতিকে জনসেবার মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এখানে কিন্তু আদর্শিক কোনো বিরোধ বা সংঘাত নেই। একটা স্বাধীন দেশের মানুষ আমরা‌। আমার এলাকার সরকারি কর্মকর্তাদের সেবা আমি নিচ্ছি, আবার আমরা চাকরি করার সময় অন্য জায়গায় সেবা দিচ্ছি। তাই আমি মনে করি বিচ্ছিন্নভাবে কারো কারো অভিজ্ঞতা এটা হতে পারে এবং এটা দুঃখজনক।

যদি কেউ যথাযথ মূল্য, মর্যাদা জনপ্রতিনিধিদের প্রদান না করে থাকে তাহলে আমি বলব যথাযথভাবে তার প্রশিক্ষণ হয়নি। সে যাতে তার গ্রুমিংটা হয়নি। কিন্তু এখন যে প্রশিক্ষণ নীতিমালা হয়েছে, এখন যে কর্মসূচিগুলো নেওয়া হচ্ছে সেখানে কিন্তু এই বিষয়টাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিভিন্ন অবস্থাতে আমরা যেন সচেষ্ট থাকি। জনগণ যদি খুশি থাকে আমাদের যে কর্মস্থল থাকে, অধিকারটা থাকে সেখানে জনগণকে সম্মান আমরা কীভাবে জানাবো।

আমরা তো সেবা দেব সরাসরি। এছাড়াও যারা জনগণের প্রতিনিধি থাকেন তাদের সম্মান করে আমরা কিন্তু জনগণকে সম্মান করছি। আমার কর্মক্ষেত্রের আওতাধীন যে মানুষ থাকবে তাদের প্রতিনিধিকে আমরা সম্মান করে নিজেরাও সম্মানিত হই এবং জনগণকেও সম্মানিত করি। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। আমি এই ধরনের অস্বস্তিকর পরিবেশের মুখোমুখি কখনো হইনি। আমি বলতে এখানে আমি একা না, আমার মনে হয় এখানে অধিকাংশ কর্মকর্তারই একটা অভিজ্ঞতা। সেই প্রশিক্ষণটা আমরা কিন্তু পেয়েছিলাম।

তো আমাদের কাজটা কী? আমাদের সামাজিকভাবে রাষ্ট্রীয়ভাবে মর্যাদার ব্যাপারও থাকে। সেটাও তো আমরা দুই পক্ষই ব্যাপারটা জানি। কে কোথায় অবস্থান করছি, সব মানক্রম থাকে না একটা। ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্সি তো থাকে। সেখানে একজন সম্মানিত সংসদ সদস্যের স্থান সরকারি কর্মকর্তাদের থেকে অনেক উপরে। এটা তো অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।

আরেকজন যখন সেটা পাবেন না আমার মনে হয় এটা যদি যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়, তাহলে এটা সংশোধন যোগ্য এবং এটা পাল্টাবে। এই মানসিকতার অপসংস্কৃতি যদি কোথাও ঘটে থাকে এরকম এটা কিন্তু অবশ্যই সংশোধিত হবে, পরিবর্তিত হবে।

আমরা যে ধরনের প্রশিক্ষণ পেয়েছিলাম আমাকে ট্রেনিংটা আমাদের অন্যভাবে মাইন্ড সেট আপকে গঠন করে দিয়েছিল। সেটা আমরা মনে রেখে যখন কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করেছি তখন কোনো সমস্যা কিন্তু হয়নি এবং আমি দেখিওনি। ওটা বিচ্ছিন্নভাবে সব সময় থাকে। দুই দিকেই হতে পারে ভারসাম্যহীনতা হয়। একার কারণে না। অনেক সময় একটা সম্পর্কের ভারসাম্যহীন হয়ে যায়।

আমার কথা হলো, আমরা চাকরিতে প্রবেশ করেই জেনে যাই আমাদের কী কাজ করতে হবে। কখন কোন পদমর্যাদায় আমরা আসীন হব এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যারা আছেন তারা তো আসলে পলিসি দেবেন। আমাদের মূল দায়িত্ব পলিসি বাস্তবায়ন।

একদল দেবেন জনপ্রতিনিধি, পার্লামেন্ট সদস্য উনারা আইন প্রণয়ন করবেন ‌। উনারা জাতীয় পলিসি নির্ধারণ করবেন। এবং মন্ত্রণালয়ভিত্তিক সেই পলিসিগুলো আমরা বাস্তবায়নের জন্য দায়ী থাকব। আমরা যে যার বৃত্তে যদি অবস্থান করি আত্মমর্যাদা নিয়ে তাহলে কোনো রকম ভুল বোঝাবুঝি হওয়ার কথা নয়। যদি হয়ে থাকে তাহলে সেটা দুঃখজনক এবং সামগ্রিক অবস্থার প্রতিফলন আমি বলব না। এটা হয়তো কতিপয়ের ক্ষেত্রে এমন ঘটে থাকতে পারে। এটাকে জেনারেলাইজড করার কোনো অবকাশ নাই।

লেখক: সাবেক সচিব, বিমান ও পর্যটন, শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।

অনুলিখন: কৌশিক রায়

(ঢাকাটাইমস/১৮জানুয়ারি/বিইউ/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :