ডিআইজি হাবিবুর রহমানের 'ঠার: বেদে জনগোষ্ঠীর ভাষা' বইয়ের মোড়ক উন্মোচন

ঢাবি প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৯:৩৬

পুলিশ কর্মকর্তা ও লেখক হাবিবুর রহমান রচিত বাংলাদেশের বেদে জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা বিষয়ক গবেষণাধর্মী ও বাংলা ভাষায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভাষা নিয়ে প্রথম গ্রন্থ 'ঠার: বেদে জনগোষ্ঠীর ভাষা' বইটির আনুষ্ঠানিকভাবে মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৩:৩০টায় বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে একটি মনোজ্ঞ প্রকাশনা উৎসবে বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

দেশবরেণ্য গুণীজনের উপস্থিতিতে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড বইটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

'ঠার: বেদে জনগোষ্ঠীর ভাষা' বইটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। প্রধান অতিথি ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কবি কামাল চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক কবি ও লেখক মিনার মনসুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান। আর মুখ্য আলোচক ছিলেন কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকী।

গবেষক ও লেখক হাবিবুর রহমান একজন পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি বর্তমানে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজির দায়িত্বে পালন করছেন।

বইটির মোড়ক উন্মোচনের আগে লেখককে ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয় এবং উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয়। বইটি অমর একুশে বইমেলায় পাঞ্জেরী প্রকাশনীর স্টল থেকে সংগ্রহ করা যাবে।

বাংলা একাডেমির সভাপতি ও কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে মোড়ক অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, বাংলা একাডেমি মঞ্চে এই প্রথম ‘ঠার’ ভাষার পক্ষে ও ভাষাটি নিয়ে কেউ একজন কথা বলেছে। বর্তমান ভাষার মাস চলছে। ভাষার মাসের শিক্ষা হলো কোনো ভাষা যেন অন্য কোনো ভাষার ওপরে আক্রমণ না করে। স্থানীয় পর্যায়ে ভাষা যখন বিকশিত হয় তখন সে ভাষার আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে বিকশিত হওয়ার পথগুলো উন্মুক্ত হয়ে যায়।

এই শিক্ষাবিদ বলেন, বাংলা ভাষায় যখন ‘ঠার’ ভাষা নিয়ে আলোচনা বা গবেষণা হয় তখন এই ভাষাকে সম্মান জানানো হয়। আর যখন ভাষাকে সম্মান জানানো হয় তখন সেই ভাষা ব্যবহারকারী ভাষা-ভাষীদেরও সম্মান জানানো হয়।

বইটি সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি বইটি পড়েছি। পাণ্ডুলিপি পড়ার সময়ে মনে হয়েছিল বইটি আধুনিক ভাষাতত্ত্বের নিয়মগুলো মেনে গবেষণাটি করা হয়েছে।

নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে লেখক হাবিবুর রহমান বলেন, বেদে সম্প্রদায়ের ভাষা ‘ঠার’ নিয়ে লিখতে গিয়ে শুরুতে বেদে সম্প্রদায়ের খুব কাছাকাছি চলে আসি। তাদের কাছে আসার মূল উৎস ছিল মাদক চোরাকারবারির তদন্ত। জানতে পারি বেদে সম্প্রদায়ের মানুষেরা মাদক বিক্রি করে। তারা সাপ খেলা দেখানোর ছলে মিয়ানমার থেকে আসা কক্সবাজারের উখিয়া থেকে ইয়াবা নিয়ে ট্রেনে করে কমলাপুর পর্যন্ত এসে তাদের আস্তানায় পাড়ি জমাতো। এরপর সেখান থেকে চলতো মাদক বিক্রি। আমি তাদের সম্প্রদায়ের ১৭ জন সর্দারের সাথে কথা বলেছি। তারা অফিসে এলে বসতে বললে ফ্লোরের ওপর বসে যায়। এরপরে তাদের চেয়ারে বসতে বলি এবং এটাই ছিল তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে চেয়ারে বসা।

হাবিবুর রহমান বলেন, তারা স্বীকার করেছিল নদী না থাকা, সাপ খেলায় মানুষের আগ্রহ না থাকা ও তাবিজ না নেওয়ায় তারা মাদকে পা বাড়ায়। এরপরে যখন তারা নিজেরাই কথাবার্তা বলে তখন আমি বুঝতে পারি তাদের একটা নিজস্ব ভাষা আছে। আমি কৌতূহলের বশেই তাদের ভাষা নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হয়ে যাই।

এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, গবেষণাটি চালাতে গিয়ে তাদের ভাষা 'ঠার' নিয়ে তেমন কোনো লেখা বা বই পাইনি। দুই-একটা বই যদিও পেয়েছিলাম সেখানে ‘ঠার’ ভাষা সম্পর্কে খুবই কম তথ্য ছিল। বইগুলোতে বেতে সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রা নিয়েই বলা ছিল বেশি। তেমন কোনো উপাদান না পেয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আবেদন করি ‘ঠার’ ভাষা যেন হারিয়ে না যায় এবং এটাকে সংরক্ষণের বিষয়ে। তারা আমাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ হতাশ হলেও আমি হাল ছাড়িনি।

লেখক বলেন, এটা নিয়ে ভাষাবিদ, লেখক বা ভাষা নিয়ে কাজ করে এমন অনেকের কাছে গিয়েছি। তারাও আমাকে সর্বোচ্চ সাহায্য করেছেন। আমি আশা করছি বইটা থেকে বেদে সম্প্রদায় ও তাদের মাতৃভাষা ‘ঠার’ সম্পর্কে অনেক প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে কবি কামাল চৌধুরী বলেন, হাবিবুর রহমানের গ্রন্থ রচনার পটভূমি শুনে আমি অভিভূত হয়েছি। কারণ সত্যিকারের যদি নিবেদন না থাকে সেই সাথে একটা সমাজ ও জাতিগোষ্ঠীকে খুব ভেতর থেকে দেখার তাগিদ না থাকলে এরকম গবেষণামূলক ভাষার গ্রন্থ রচনা করা সম্ভব নয়।

কামাল চৌধুরী বলেন, পার্টিসিপেশন অবজারভেজন মেথড অনুযায়ী হাবিবুর রহমান বইটি লিখেছেন। একজন গবেষক যখন কোনো বিষয়ে গবেষণা করেন তখন তার গবেষণার বিষয়ের খোলস ছেড়ে ভেতরে ঢুকতে হয়। আর এই কাজটি হাবিবুর রহমান করেছেন। তিনি একেবারে বেদে সম্প্রদায়ের মধ্যে ঢুকে গিয়ে তাদের ভাষাকে পর্যবেক্ষণ করে গ্রন্থটি রচনা করেছেন, যা পুরোপুরি পার্টিসিপেশন অবজারভেজনের মধ্যে পড়ে।

(ঢাকাটাইমস/২২ফেব্রুয়ারি/আরএল/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :