পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ঠেকাতে রাশিয়ার অস্ত্র এখন গ্যাস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২২, ২১:১৮ | প্রকাশিত : ০৮ মার্চ ২০২২, ২১:০৭

ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা বেড়েই যাচ্ছে রাশিয়ার ওপর। রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধের পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে মিত্রদেশগুলোর সঙ্গেও আলোচনা চলছে।

পশ্চিমারা তেল নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সামনে আগালে জার্মানিতে মূল পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে রাশিয়া। দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে তথ্যটি।

রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্ডার নোভাক বলেছেন, ‘রাশিয়ার তেল প্রত্যাখ্যান বৈশ্বিক বাজারের জন্য মারাত্মক পরিণতি বয়ে আনতে পারে। এতে তেলের মূল্য দ্বিগুণ বেড়ে প্রতি ব্যারেল ৩০০ ডলারে যেতে পারে।

তবে সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে জার্মানি ও নেদারল্যান্ডস। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ৪০ শতাংশ গ্যাস এবং ৩০ শতাংশ তেল রাশিয়া থেকেই সরবরাহ করা হয়। রাশিয়া যদি তেলের উপর পশ্চিমা মিত্রদের নিষেধাজ্ঞা পায় তাহলে ইইউ গ্যাসের বিকল্প রাস্তা পাবেনা।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে আলেক্সান্ডার নোভাক বলেন, ইউরোপীয়ান বাজারে রাশিয়ার তেলের বিকল্প দ্রুত খুঁজে পাওয়া অসম্ভব হবে। তিনি আরো বলেন, ‘এতে কয়েক বছর লেগে যাবে এবং ইউরোপীয়ান ভোক্তাদের জন্য এটা আরও অনেক বেশি ব্যয়বহুল হবে। চূড়ান্তভাবে এর জেরে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হবে তারাই’।

এদিকে ইউক্রেন আগ্রাসন চালানোর পরপরই রাশিয়ার উপর দুই হাজার ৭৭৮টি আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়। বর্তমানে রাশিয়ার উপর সর্বমোট নিষেধাজ্ঞার সংখ্যা এখন ৫ হাজার ৩৩২টি যেটা এখন পর্যন্ত কোনো দেশের জন্য সর্বোচ্চ। এতদিন ধরে তিন হাজার ৬১৬টি নিষেধাজ্ঞা নিয়ে শীর্ষে থাকা ইরানকে পেছনে ফেললো রাশিয়া।

কিয়েভগামী রুশ সেনাবহরের অবস্থা:

ইউক্রেনে হামলা শুরু করার পর রাশিয়ার প্রধান লক্ষ্য ছিল দেশটির রাজধানী কিয়েভ দখল করা। কিন্তু রুশ সেনারা এখন পযন্ত কিয়েভে প্রবেশ করতে পারেনি। তবে কিয়েভে ঢোকার জন্য ৪০ মাইল দীর্ঘ একটি সামরিক বহর রাজধানীর উপকণ্ঠে অবস্থান করছে।

যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা সেক্রেটারি বেন ওয়ালেস বলেন, রাশিয়া এখনো অগ্রসর হচ্ছে না। ১৩তম দিনে উত্তরে (কিয়েভগামী সামরিক বহর) তাদের যে বহর আছে সেটি এখন আর এগুচ্ছে না, থেমে আছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফ রুশ সেনাদের অগ্রগতির ব্যাপারে বলেন, রাশিয়ার সেনাদের অগ্রগতি উল্লেখযোগ্যভাবে ধীর হয়ে গেছে। শত্রুপক্ষ হামলা অব্যাহত রাখলেও তাদের সেনাদের এগিয়ে আসার গতি বেশ ধীর হয়েছে। রাজধানী কিয়েভসহ উত্তরের শহর চেরনিহিভ এখনো ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী তাদের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে রাশিয়ার একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা প্রতিহত করেছে বলেও দাবি করেছেন জেনারেল স্টাফ।

তবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেন সরকার ও দেশটির সামরিক বাহিনীর তোলা এসব অভিযোগের সত্যতা এখনো নিরপেক্ষভাবে যাচাই করে দেখতে পারেনি বিবিসি।

ইউক্রেনে বেসামরিকদের সার্বিক পরিস্থিতি: ইউক্রেনের বর্তমান পরিস্থিতে রুশ সেনারা চারটি শহরে হামলার পর যুদ্ধবিরতিতে যায়। বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে মানবিক করিডোর চালু করেছিলো রাশিয়া। তবে মানবিক করিডোরেও রুশ বাহিনির হামলার খবর জানিয়েছে বিবিসি।

বিবিসি জানায়, মারিওপোল দিয়ে বেরিয়ে যাবার সময় বেসামরিকদের ওপর গোলাবর্ষণ করেছে রুশ সেনারা। ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, মারিওপোল এবং জাপোরিঝিয়ার মধ্যেকার করিডোরের ওপর রুশ বাহিনী আক্রমণ চালিয়েছে।

মারিওপোল শহরে মানবিক ত্রাণ পৌঁছে দিতে এবং বেসামরিক লোকদের জাপোরিঝিয়ায় নিয়ে যেতে আটটি ট্রাক এবং ৩০টি বাস সেখানে যাচ্ছে। অবরুদ্ধ শহরটিতে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে মানুষ বিদ্যুৎ ও পানিবিহীন অবস্থায় কাটাচ্ছে, খাদ্যও শেষ হয়ে আসছে।

এখন পর্যন্ত ইউক্রেনে হতাহত বেসামরিক নাগরিকের সংখ্যা ১২ হাজার ২০৭ জন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনার লিজ থ্রোসেল বলেন, এর মধ্যে ৪০৬ জন নিহত এবং ৮০১ জন আহত হয়েছেন, তবে প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি হতে পারে। এদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই বিমান হামলা ও বিস্ফোরক অস্ত্রে আহত হয়েছেন।

রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের শহরগুলোতে শত শত আবাসিক ভবন ধ্বংস হয়েছে। নিহতদের মধ্যে একজন সাংবাদিক রয়েছেন এবং যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ প্রদর্শনের জন্য রাশিয়ায় প্রায় ১২,৭০০ লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ফ্রান্সের ক্যালে থেকে যুক্তরাজ্যে প্রবেশের চেষ্টার সময় প্রায় ৩০০ ইউক্রেনিয়ানকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়া হামলা শুরু করার পর থেকে ৫৮৯ জন ইউক্রেনিয়ান এই সীমান্তে এসেছেন বলে জানা যাচ্ছে। তাদের মধ্য থেকে ২৮৬ জনকে যুক্তরাজ্যে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

এর আগে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বোরিস জনসন বলেছেন, ব্রিটেন খুবই 'আন্তরিক দেশ' কিন্তু কারা প্রবেশে করার চেষ্টা করছে, তাদের যাচাইবাছাই করে দেখতে চায়। পোলিশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী জানিয়েছে, ইউক্রেন থেকে ১২ লাখ মানুষ সেদেশে প্রবেশ করেছে। এছাড়াও এখন পর্যন্ত ইউক্রেন থেকে দেশ ত্যাগকারীদের সংখ্যা ২০ লাখ ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।

ইউক্রেনের সুমি শহরে বিমান হামলায় শিশুসহ ১০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এখানকার আঞ্চলিক সামরিক প্রশাসন প্রধান দিমিত্র ঝিভিৎস্কির বরাতে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার রাতে সুমি ও আশপাশের এলাকায় বিমান হামলা হয়েছে।

দিমিত্র ঝিভিৎস্কি ফেসবুকে এক ভিডিওবার্তায় বিমান হামলায় শিশুসহ ১০ জন নিহতের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘স্থানীয় সময় রাত ১১টায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহরে বিমান হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে। এর জন্য আমরা কখনোই ক্ষমা করব না।’ তবে বিবিসি স্বতন্ত্রভাবে ঝিভিৎস্কির দাবির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।

ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে জেলেনস্কির পদক্ষেপ: ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর থেকে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলনস্কিকে সোশাল মিডিয়ায় বিভিন্ন বার্তা পোস্ট করতেই দেখা গেছে। তিনি এখন কোথায় আছেন এ ব্যাপারে নিশ্চিতকরণ সংবাদ পাওয়া যায়নি। শুরুর দিকে জেলনস্কি দেশ ত্যাগ করেছেন বলেও গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল। এরপরেই টুইটারে এক ভিডিও বার্তা দিয়ে কিয়েভে থাকার ব্যাপারে জনগণকে আশ্বস্ত করেন। তবে রুশ অভিযানের পর তাঁকে প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ে দেখা যায়নি।

মঙ্গলবার ইন্সট্রাগ্রামে এক ভিডিও বার্তার মাধ্যমে জেলনস্কি বলেন, ‘আমি কিয়েভের ব্যাংকোভা স্ট্রিটেই থাকছি। আমি কোথাও লুকাইনি এবং কারও ভয়ে ভীত নই।’ জেলেনস্কির অবস্থান জানিয়ে ভিডিও বার্তা দেওয়ায় মনে হচ্ছে কিয়েভে ইউক্রেনের সেনাদের প্রতিরোধের মুখে পড়েছেন রাশিয়ার সেনারা এমনটাই দাবি বার্তা সংস্থা বিবিসির।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয় ইউক্রেনে পরিস্থিতি এবং তাদের পক্ষে জনমত গ্রহণ নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউজ অব কমন্সে ব্রিটেনের আইন প্রণেতাদের উদ্দেশ্যে স্থানীয় সময় বিকাল ৫টায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে ভাষণ দেওয়ার কথা জেলেনস্কির।

উল্লেখ্য, হাউজ অব কমন্সে জেলেনস্কির আগে চারজন বিদেশি নেতা আইন প্রণেতাদের উদ্দেশে বক্তৃতা দিয়েছেন। তারা হলেন, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান, বিল ক্লিনটন, বারাক ওবামা ও জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যানজেলা মার্কেল। জেলেনস্কি হতে যাচ্ছেন এই তালিকার ৫ম ব্যক্তি।

(ঢাকাটাইমস/০৮মার্চ/এসএটি/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :