ইউক্রেনকে গোপনে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

ইউক্রেন গোপনে দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে শুরু করেছে এবং রুশ বাহিনীর আগ্রাসন ঠেকাতে এগুলো যে কিয়েভকে যুক্তরাষ্ট্রই সরবরাহ করেছে তা নিশ্চিত করেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। এ অস্ত্র চলতি মার্চে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অনুমোদন করা তিনশো মিলিয়ন ডলারের প্যাকেজ সহায়তার অংশ এবং এগুলো এপ্রিল মাসেই কিয়েভের হাতে পৌঁছেছে।
মার্কিন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী রাশিয়ার দখলীকৃত ক্রাইমিয়াতে রুশ বাহিনীর অবস্থান লক্ষ্য করে এর মধ্যে অন্তত একবার হলেও এ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নতুন করে ইউক্রেন, ইসরায়েল ও তাইওয়ানের জন্য অনুমোদন করা ৯৫ বিলিয়ন ডলারের প্যাকেজ সহায়তা বিলে স্বাক্ষর করেছেন। এর মধ্যে ইউক্রেনের জন্য ৬১ বিলিয়ন ডলারের নতুন সামরিক সহায়তা প্যাকেজ রয়েছে। বিলটি ইতোমধ্যেই কংগ্রেসে পাসের পর সিনেটেও অনুমোদিত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র এর আগে কিয়েভকে মধ্য পাল্লার সামরিক কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা বা এটিএসিএমএস সরবরাহ করলেও মার্কিন সামরিক বাহিনীর সাথে সমন্বয়ের বিষয়ে কিছুটা উদ্বেগ থাকায় এর চেয়ে শক্তিশালী কিছু দেওয়ার বিষয়ে অনিচ্ছুক ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত বাইডেন গত ফেব্রুয়ারিতে গোপনে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ার বিষয়ে সবুজ সংকেত দেন, যা তিনশো কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ভেদান্ত পাটেল বলেছেন, ‘আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি যে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে প্রেসিডেন্টের সরাসরি নির্দেশনাতেই দূরপাল্লার এটিএসিএমএস সরবরাহ করেছে।’
তিনি আরও জানান, ইউক্রেনের অনুরোধে অপারেশনাল সিকিউরিটি নিশ্চিত করার জন্যই যুক্তরাষ্ট্র সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি।
যদিও এটা এখনো পরিষ্কার নয় যে ঠিক কী পরিমাণ ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভকে সরবরাহ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে দেশটির নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছেন ওয়াশিংটন এ ধরনের আরও অস্ত্র পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেছে, দখলীকৃত ক্রাইমিয়াতে একটি রুশ এয়ারফিল্ডে গত সপ্তাহেই প্রথমবারের মতো দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে কিয়েভ।
এছাড়া রুশ সৈন্যদের দখল করা বার্দিয়ানস্কে গত মঙ্গলবার রাতভর এই নতুন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে বলে নিউইয়র্ক টাইমস খবর দিয়েছে।
অস্ত্রের মজুদ কমে আসা এবং রুশদের কিছু অগ্রগতি অর্জনের প্রেক্ষাপটে গত কয়েক মাস ধরে কিয়েভ পশ্চিমা সহায়তা বাড়ানোর জন্য আহবান জানিয়ে আসছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের বিরোধিতার কারণে কয়েক মাসের অচলাবস্থা শেষে কিয়েভের জন্য নতুন সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
নতুন সামরিক সহায়তা প্যাকেজ যুক্তরাষ্ট্র অনুমোদনের পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ‘প্রায় দেড় বছরের বিতর্ক ও সন্দেহের ঘাটতি পুষিয়ে নিতে এখন আমরা সবকিছুই করবো। রাশিয়ার দখলদাররা এ সময়ের মধ্যে যাই করুক না কেন, পুতিন যা-ই পরিকল্পনা করুক না কেন, আমাদের অবশ্যই তাদের রুখে দিতে হবে।’
জেলেনস্কি সম্প্রতি সতর্ক করে বলেছেন, সামনের সপ্তাহগুলোতে আবারো রাশিয়ার আক্রমণ হতে পারে। এর আগে গত শীতে ইউক্রেন রাশিয়ার কাছে তাদের আভডিভকা শহরের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন চালায়। সংঘাতের দীর্ঘ দুই বছরেও রাশিয়া এবং ইউক্রেন কোনো পক্ষই চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করতে পারেনি। তবে গত কয়েক মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা কমে যাওয়ায় পিছিয়ে পড়েছে ইউক্রেন। এমনকি গোলাবারুদের অভাবে সামরিক অভিযান কাটছাঁট করতে বাধ্য হচ্ছে ইউক্রেন। আর এ সুযোগের সম্প্রতি বেশ কয়েকটি শহর দখলে নিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনের কর্মকর্তারা প্রাণ ও ভূখণ্ড হারানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের সহায়তার বিলম্বকে দায়ী করে আসছিলেন।
সূত্র: বিবিসি
(ঢাকাটাইমস/২৫এপ্রিল/এমআর)

মন্তব্য করুন