‘বাগ-ই-বাদশাহী’ থেকে ‘রমনা পার্ক’, নগরে সবুজ ছোঁয়ার প্রশান্তি!

মোয়াজ্জেম হোসেন, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০২ জুন ২০২২, ০৭:৩৬| আপডেট : ০২ জুন ২০২২, ০৯:২০
অ- অ+

মুঘল আমল। বাংলায় সুবাদার ইসলাম খাঁর শাসনামল। ১৬১০ সাল। অর্থাৎ আজ থেকে চার শতকেরও বেশি সময় আগে। তখন থেকেই ঢাকার রমনা বিশেষ এলাকা। মুঘলদের ‘বাগ-ই-বাদশাহী’ থেকে রঙ-রূপ-আকার-আয়তন বদলাতে বদলাতে আজকের রমনা পার্ক। বাংলাদেশের একমাত্র পরিকল্পিত উদ্যান।

কারো কাছে এই পার্ক ইট-পাথরের ঢাকায় প্রকৃতির মাঝে হাঁটার ‘আনন্দ’। আবার কারো কাছে সবুজ-শ্যামলিমায় মেশার প্রাণের প্রাঙ্গণ। সকাল-বিকালে নানা বয়েসী মানুষজন এখানে আসেন হাঁটাহাটি করতে; আবার কেউ আসেন প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে।

রাজধানীতে এখন সবুজের ছোঁয়া পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। যান্ত্রিক এ নগরীতে তেমন বড় পার্ক বা উদ্যান তেমন নেই। এর মধ্যে ঢাকার ‘ফুসফুস’খ্যাত রমনা পার্ক ৬৮ দশমিক ৫ একর জায়গাজুড়ে সবুজের সমারোহ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পার্কটিতে নানা জাতের গাছ, পাখির কিচিরমিচির, ফুলের গাছ আর কৃত্রিম লেক মিলে যেন একাকার হয়ে আছে।

প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আসে পার্কটিতে। যানজটের এ নগরীতে একটু প্রশান্তির ছোঁয়া পেতে অনেকেই এখানে কিছুটা সময় পার করে। প্রাতঃভ্রমণ ও বৈকালিক ভ্রমণে সবচেয়ে বেশী মানুষ আসে এখানে। রমনা পার্কের আশপাশে বসবাস করা অনেকেই সকালে ব্যয়ামের জন্য রমনা পার্ককে বেছে নিয়েছে। অনেকে শিশুদের নিয়েও এখানে আসে খেলা করতে।

সরেজমিনে বুধবার সকাল বেলা রমনা পার্কে গিয়ে দেখা যায়, শত শত লোক ওয়াকিং এর জন্য রমনা পার্কের সব কয়টা গেইট দিয়ে ঢুকছে। তারা ভেতরে সবুজের চাদরে ঘেরা রমনার মধ্যে হাটাহাটি করছে। কেউ কেউ দৌড়িয়ে ব্যায়াম করছে। আবার আশপাশের স্কুলগুলোতে পড়াশোনা করে কিছু শিক্ষার্থীর অভিবাবকদেরও দেখা গেছে আড্ডায়। পার্কে থাকা ফলগাছগুলোতে ফল দেখা গেছে। এখানে বেশ কয়েকটি আম ও কাঠাল গাছে অনেক ফল এসেছে।

সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে রমনা পার্কের শাহবাগের পাশের গেট দিয়ে ঢুকে আজিজুর রহমান নামে পঞ্চাশোর্ধ এক ব্যাক্তি। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমার বাসা হাতিরপুল। বহুদিন ধরে এই এলাকায় থাকি। বিগত ১৫-১৬ বছর ধরে নিয়মিত প্রাতঃভ্রমণে আসি। সকাল বেলা এখানে এসে বিশুদ্ধ একটু বাতাস নেয়। মনটা ভরে যায়। ঘন্টাখানেক বা এরও বেশী সময় এখানে ওয়াকিং করি প্রতিদিন।’

করোনাভাইরাসের সময় বন্ধ থাকা অবস্থায় ওয়াক ওয়ে, বসার স্থান, ছাউনিগুলো সংস্কার করা হয়েছে পার্কের। লেকটাকেও খনন করে পাশে বসার স্থান ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়েছে।

বেইলী রোড থেকে মোনেম খান এসেছেন রমনা পার্কে প্রাতঃভ্রমণে । সঙ্গে তার স্ত্রীও আছেন। তার সঙ্গে কথা হয় ঢাকাটাইমসের। বলেন, ‘আমার বয়স হয়ে গেছে ৫৫ আর আমার স্ত্রীর ৫০ এর মতো। আমার ডায়বেটিস না থাকলেও আমার স্ত্রীর ডায়াবেটিস আছে। আমি এখানে বহু বছর ধরে ভোর সকালে হাঁটতে আসি। আমার স্ত্রী গত ৬-৭ বছর ধরে আসে।’

‘এখানে এসে সকালে মুক্ত বিশুদ্ধ বাতাসটা না নিলে মনে হয় সারাদিন আর ভালো যায় না। এছাড়া শরীর ভালো রাখতে প্রাতঃভ্রমণের বিকল্প নেই। এদিকে আমার আমার স্ত্রীর ডাইবেটিস। তার তো সকালে হাঁটাটা জরুরি। তাই প্রতিদিন সকালে একত্রে হাঁটতে আসি।’

সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বেইলী রোডের পাশের গেটের যাত্রী ছাউনিতে কয়েকজন অভিভাবককে গল্প করতে দেখা যায়। তারা ঢাকাটাইমসকে জানান, তাদের মেয়েরা ভিকারুন্নেসার বেইলী রোড শাখায় পড়াশোনা করে। তারা সকালে মেয়েকে নিয়ে স্কুলে আসেন। বাসা দূরে হওয়ায় মেয়ের স্কুল শেষ না হওয়া পর্যন্ত এখানে বসে গল্পগুজব করেন। দীর্ঘক্ষণ স্কুলের সামনে বসে থাকার চেয়ে সবুজ শান্ত এ জায়গায় তাদের ভালো লাগে।

৫ বছর বয়েসী বাচ্চাকে নিয়ে জেসমিন আক্তার এসেছেন পার্কে। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমার বাসা বেইলী রোড। বাসা থেকে ৫ মিনিট লাগে পার্কে আসতে। বাচ্চা বাসায় থাকলে বাইরে বের হতে চাই। তাই তাকে নিয়ে এসেছি। এখানে মুক্ত পরিবেশে বাচ্চা খেলাধুলা করছে। প্রায়ই এখানে তাকে খেলতে নিয়ে আসি।

রমনা পার্ক ঢাকার ঐতিহ্যের অংশ হয়ে আছে। রমনা জাতীয় উদ্যান, লন্ডনের 'কিউই গার্ডেনের' আদলে তৈরি বাংলাদেশের একমাত্র পরিকল্পিত উদ্যান। এটি বাস্তবায়নে সময় লেগেছিল ২০ বছর। ব্রিটেনের গার্ডেন বিশেষজ্ঞ আরএল প্রাউড লক রমনার এই নিসর্গ পরিকল্পনা করেছিলেন।

(ঢাকাটাইমস/০২জুন/ডিএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
যৌতুকের মিথ্যা মামলা: ফেঁসে গেলেন অভিযোগকারী নারী
রোম্যান্টিক সিন করতে গিয়ে আমার মাড়ি কেটে যায়: ঈশানী
নোয়াখালীতে সাম্যবাদী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, আহত ৫
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আড়ালে নাটকীয়তা চলছে: মির্জা আব্বাস
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা