হাওরে বাড়ছে পানি, মৌলভীবাজারে রেললাইন তলিয়ে যাচ্ছে

আব্দুল বাছিত বাচ্চু, মৌলভীবাজার
| আপডেট : ২২ জুন ২০২২, ১৯:৪২ | প্রকাশিত : ২২ জুন ২০২২, ১৮:০৬

মৌলভীবাজারের মনু নদীর পানি কমেছে। তবে বাড়ছে হাকালুকি হাওরের পানি। কুলাউড়ার বরমচাল ইউনিয়নে হাওরের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে রেললাইন। ফলে যেকোনো মুহূর্তে আবারো সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের রেলযোগাযোগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কুলাউড়া উপজেলার ফানাই-আনফানাই নদী এলাকায় ফানাই ব্রিজের মধ্যবর্তী স্থানে রেললাইনে বন্যার পানি উঠেছে। এছাড়াও কুলাউড়া শহরতলী এলাকার আশপাশেও কয়েকটি স্থানেও রেললাইনে পানি উঠতে শুরু করেছে। ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছে ওই স্থানের রেললাইন।

কুলাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনে স্টেশন মাস্টার মহিব উদ্দিন আহমেদ ঢাকা টাইমসকে জানান, গেল ৩ দিন থেকে ওই স্থানটিতে বন্যার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যে ওই স্থানে রেল লাইনের উপরে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পানির স্রোত কম থাকায় গতি কমিয়ে ট্রেন চলাচল অব্যাহত রয়েছে। তবে আর পানি কিংবা স্রোত বাড়লে ট্রেন চলাচল অব্যাহত রাখা যাবে কিনা তা আশঙ্কা রয়েছে। তিনি জানান, রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের সংশ্লিষ্টরা জায়গাটি পরিদর্শন করেছেন।

এদিকে গত কদিনের বন্যায় মৌলভীবাজার জেলার ৭ উপজেলার ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার জেলার ভারপ্রাপ্ত উপ পরিচালক মুহাম্মদ সামছুদ্দিন ঢাকা টাইমসকে জানান, মৌলভীবাজার জেলার ৭ উপজেলায় ১১ হাজার ১৭১ হেক্টর জমির নতুন আউশ ধান, ৩৬২ হেকমতিয়ার জমির বোনা আমন এবং ৮০০ হেক্টর জমির সবজি নষ্ট হয়েছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ দেড় কোটি টাকা হবে

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার দপ্তরের ভেটেরিনারি অফিসার ডা. এ জেড এম ওয়াহিদুজ্জামান ঢাকা টাইমসকে জানান, ৭ উপজেলার প্রাপ্ত রিপোর্ট অনুযায়ী এই বিভাগের ক্ষতি ১ কোটি ১ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ টাকা। ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি।

মৌলভীবাজারে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আরও ৩২টি ঘরে কোমড় পানি। কামালপুর ইউনিয়নের এসব ঘরে সোমবার পানি উঠে বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান আপ্পান আলী।

তিনি বলেন, এসব ঘরের লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে মৌলভীবাজারে আশ্রয়ণের শতাধিক ঘরে বানের পানি উঠেলো ।

গোয়ালবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ুম ঢাকা টাইমসকে জানান, জূড়ী উপজেলার জুড়ী-বড়লেখা এবং জুড়ী-লাঠিটিলা সড়কের পানি মেমে যাওয়ায় সরাসরি সড়ক যোগাযোগ চালু হয়েছে।

এদিকে মৌলভীবাজার জেলার ৭ উপজেলায় বন্যার পানি কমলেও মানুষের সমস্যা বেড়েছে। খাবার ও স্বাস্থ্য সমস্যার পাশাপাশি আছে বিশুদ্ধ পানীয় জলের সংকট ।অনেক আশ্রয় কেন্দ্রে এখনো শুকনা খাবার ছাড়া কিছু দেওয়া হয়নি এমন অভিযোগ বন্যা কবলিত লোকজনের।

কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মমদুদ হোসেন বলেন, আমার ইউনিয়নে ৪ টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তিনি বলেন চলতি বন্যায় সবচেয়ে বেশী ক্ষতি হয়েছে ফসলের। নতুন লাগানো আউশ ধানের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে ।

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী ঢাকা টাইমসকে বলেন, নদ নদীর পানি কমলেও এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওরে পানি বাড়ছে। তিনি জানান,কুলাউড়া উপজেলার ৪০-৫০ হাজার মানুষ বন্যা কবলিত। এখানের বন্যার্থদের জন্য ৭৫ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা পাওয়া ও ২০০ প্যাকেট শুকনো খাবার পাওয়া গেছে। ডিও দেওয়া হয়েছে।

কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা ফেরদৌস 'ঢাকা টাইমস'কে জানান, কুলাউড়া উপজেলার হাকালুকি হাওর এলাকায় ভুকশিমইল, বরমচাল, ব্রাহ্মণবাজার, ভাটেরা, জয়চন্ডী কাদিপুর, কুলাউড়া পৌরসভা ও সদর ইউনিয়নের বন্যা কবলিত এলাকায় শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী লোকজন জর সর্দি কাশি ও পেটের সমস্যায় ভুগছেন।

মৌলভীবাজার জেলার সিভিল সার্জন চৌধুরী জালাল উদ্দীন মুর্শেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, বন্যাত্তোর স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবেলায় আমাদের ৭৫ টি মেডিকেল টিম মাঠে কাজে নেমেছে। তারা স্বাস্থ্য শিক্ষা ও সেবা দিয়ে যাচ্ছে। উল্লেখ্য রবিবার রাতে খরস্রোতা মনু নদীর পানি মারাত্মক বেড়ে সদর উপজেলার চাদনীঘাটে মনু নদীর পাড়ে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৪১টি ঘরসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এধরনের শতাধিক ঘরে পানি ওঠে। বাঁধের বাইরে বসবাসকারী বাসাবাড়িতেও পানি প্রবেশ করে।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, ৭ উপজেলার ৪২ ইউনিয়নের ৪০ হাজার পরিবার বন্যা কবলিত হয়েছে। বন্যায় ৩ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি ১ হাজার ৩০টি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এদিকে কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয় জলের সংকট দেখা দিয়েছে। হাকালুকি হাওর পারে অধিকাংশ নলকূপ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এই সংকট দেখা দেয়।

জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান ঢাকা টাইমসকে জানান, মৌলভীবাজারে ৭ উপজেলার বন্যা কবলিত মানুষের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ২১০ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ১৮ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ১৭০০ প্যাকেট শুকনো খাবার এবং ১০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। ত্রাণ বিতরণে করো কোনো গাফিলতি পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য চলতি বন্যায় জেলার ৭টি উপজেলার ৩ লক্ষাধিক লোক পানিবন্দি হয়ে পড়ে। কুলাউড়া-বড়লেখা এবং জুড়ী- লাঠিটিলা সড়কে পানি ওঠায় সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এছাড়া হাকালুকি হাওরের পানি বেড়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় কুলাউড়া উপজেলায় বিদ্যুতের দুটি ফিডার বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

(ঢাকাটাইমস/২২জুন/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

মির্জাপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: দুই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল

রিভিউয়ের মাধ্যমে হোল্ডিং ট্যাক্স সহনীয় পর্যায় নিয়ে আসা হবে: সিসিক মেয়র

এসএসসির ফলাফলে গোপালগঞ্জ জেলায় তৃতীয় রাবেয়া-আলী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ

নড়াইলে বজ্রপাতে স্কুলছাত্র ও গাভীর মৃত্যু

টানা দ্বিতীয়বার ভান্ডারিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান হলেন মিরাজুল ইসলাম

সালথায় ১২ কেজি গাঁজাসহ তিন মাদককারবারি গ্রেপ্তার

সাংবাদিকের ওপর হামলার প্রতিবাদে সিরাজদিখান রিপোর্টার্স ইউনিটির মানববন্ধন 

সোনারগাঁয়ে দুই কোটি টাকার ইয়াবাসহ কারবারি গ্রেপ্তার

এসএসসিতে যশোর বোর্ডে সেরা সাতক্ষীরা

রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটি

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :