মাদারীপুরে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ
সনাতন ধর্মালম্বীদের বিশ্বকর্মা পূজা উপলক্ষে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকার জনবিচ্ছিন্ন কমলাপুর বিলে ২’শ বছরের ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, বরিশালসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে আসা অর্ধশ তবাইচের নৌকা বাইচে অংশ নেয়।
নৌকা বাইচ দেখতে ডিঙ্গি নৌকা, ট্রলারসহ বিভিন্ন নৌযানে নারী, পুরুষ, শিশুসহ হাজার হাজার মানুষ বিলের মধ্যে ও চারপাশে দেখা যায়।
এছাড়া বিলের উভয় পাড় জুড়েও ছিল দর্শনার্থীদের প্রচন্ড ভিড়।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, বিশ্বকর্মা পূজা উপলক্ষে শনিবার বিকালে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও জেলার রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নের কমলাপুর বিলে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচের আয়োজন করে স্থানীয় ছাত্রলীগ।
পৃষ্ঠপোষকতা করেন স্থানীয় করেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. হালিম ফকির ও ইউপি সদস্যরা।
দুপুরের পর থেকেই নৌকা বাইচ দেখতে আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ আসতে শুরু করে কমলাপুর। বিলের পাড়ে বসে অস্থায়ী মেলা।
বিকেল ৪টার দিক নৌকা বাইচ শুরু হয়। নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতায় মাদারীপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে অর্ধশত বিভিন্ন আকারের নৌকা অংশ নেয়। নৌকা বাইচ দেখতে ডিঙ্গি নৌকা, ট্রলারসহ বিভিন্ন নৌযানে নারী, পুরুষ, শিশুসহ হাজার হাজার মানুষ বিলের চারপাশে দেখা যায়।
এছাড়া বিলের উভয় পাড় জুড়েও ছিল দর্শনার্থীদের প্রচন্ড ভিড়। প্রতিযোগীতায় বিশ্বজিৎ বাগচির নৌকা প্রথম স্থান অধিকার করে।
সন্ধ্যায় মন্দির মাঠে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
বাইচ দেখতে আসা সুমি বিশ্বাস বলেন, এই বাইচ আমাদের এলাকার ঐহিত্য। প্রতি বছর এখানে বাইচ অনুষ্ঠিত হয়। মা বাবাসহ আমরা সবাই বাইচ দেখতে এসেছি। অনেক আনন্দ লাগছে। তবে এলাকার রাস্তা অনেক ভাঙা তাই আসা-যাওয়ায় অনেক কষ্ট হয়। এই রাস্তাটি মেরামত করার দাবি করছি।
আরেক দর্শনার্থী নিলিমা মন্ডল বলেন, বাইচ শুরু হওয়ার অনেক আগেই আমরা ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে এসেছি। বিলের তীরে মেলায় ঘুরেছি। মিষ্টি, চানাচুর ভাজাসহ বিভিন্ন খাবার খেয়েছি। এখন বিলের বাইচ দেখছি।
বাইচে অংশ গ্রহণকারী অনাদী বাড়ৈ বলেন, আমি বারো বছর ধরে বাইচের নৌকায় আছি। এর আগে আমার বাবা, কাকা বাইচে অংশ গ্রহণ করতো। তার আগে আমার দাদা বাইচের নৌকা নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অংশ গ্রহণ করতো। এখানের আয়োজন খুব ভাল লেগেছে।
আয়োজক কমিটির সদস্য বাজিতপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি পঙ্কজ মন্ডল বলেন, এই নৌকা বাইচ আমাদের এলাকার ঐতিহ্য। প্রতি বছর বিশ্বকর্মা পূজার দিন এই বাইচ অনুষ্ঠিত হয়। ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হালিম ফকিরের পৃষ্ঠপোষকতায় আমরা এই বাইচের আয়োজন করেছি।
আয়োজক কমিটির সদস্য বাজিতপুর ইউপি সদস্য সমীর বাড়ৈ বলেন, সকলের সহযোগিতায় খুব সুন্দর ও শান্তিপূর্নভাবে আমাদের ঐহিত্যবাহী নৌকা বাইচ সমাপ্ত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বাইচের নৌকা প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করেছে। নারী, পুরুষ, শিশুসহ হাজার হাজার মানুষ এসেছে বাইচ দেখতে। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার হিসেবে বিভিন্ন সাইজের টেলিভিশন প্রদান করা হয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/১৮সেপ্টেম্বর/এসএ)