আকর্ষণীয় পেশি তৈরি করার প্রাকৃতিক উপায়

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০২২, ০৯:৫৪ | প্রকাশিত : ১৫ অক্টোবর ২০২২, ০৯:৪৪

সুগঠিত পেশি আর সুঠাম দেহ বর্তমান সময়ে অত্যন্ত জনপ্রিয় বাসনা। সুস্থ থাকতে পেশির স্বাস্থ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেখতে সুন্দর লাগার পাশাপাশি, সুস্থ থাকতে গেলে, বেশি পরিশ্রমেও ক্লান্ত না হতে চাইলে নজর দিতে হয় পেশির স্বাস্থ্যে। দেহের মাংসপেশী গঠনের সবচেয়ে সেরা উপায় ওয়েটলিফটিং করা। নিয়মত করলে আপনার শক্তি বাড়ায়। পাশাপাশি মাংসপেশীর আকার বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। অবশ্য মনে রাখবেন, অনুশীলনের সময় একই পরিমাণ ওজন দিয়ে ব্যায়াম করলে ফল ভাল পাওয়া যাবে না। ধীরে ধীরে ওজন বাড়াতে হবে।

সব থেকে বেশি নজর দিতে হবে জিমের সরঞ্জামের দিকে। ব্যায়াম করার সময় কি কি সরঞ্জাম ব্যবহার করতে হবে তা আপনাকেই লক্ষ রাখতে হবে। ভুল সরঞ্জাম দিয়ে ব্যায়াম করলে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে না।

তবে শুধুমাত্র অতিরিক্ত ওজন বহন করেই পেশি বড় করা যায় না। এর সাথে সম্পূরক হিসেবে পর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদান, হরমোন এবং বিশ্রামের প্রয়োজন। আমিষ পেশি গঠনকারী প্রধান উপাদান। খাদ্যতালিকায় আমিষের প্রাধান্য পেশিগঠনের পূর্বশর্ত। টেস্টোস্টেরন হরমোন সাধারণত পেশিগঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। নারীদেহের পেশি পুরুষদের মতো বড় না হওয়ার কারণও এই টেস্টোস্টেরন এর ঘাটতি।

পেশিক্ষয় আর বৃদ্ধির পুরো ঘটনাটি কিন্তু যখন ভারোত্তোলন করা হয় তখন ঘটে না, ঘটে বিশ্রাম নেয়ার সময়। তাই পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নিলে নিয়মিত ব্যায়াম করেও কাঙ্ক্ষিত পেশিবৃদ্ধি হবে না। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক অন্তত ছয় ঘন্টা ঘুম বাধ্যতামূলক।

ব্যায়াম করে পেশী তৈরি করার জন্য শুধু অনুশীলন করলেই চলবে না। এর পাশাপাশি দরকার, পুষ্টিকর খাবারের। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় খেতে হবে বেশি খাবার এবং তা হতে হবে পুষ্টিসমৃদ্ধ। বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন সুস্থ ও সবল পেশির জন্য সব ধরনের পোষক পদার্থই প্রয়োজন।

আমেরিকার একটি সংস্থা ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ স্পোর্টস মেডিসিনের তরফে যেমন বলা হয় পেশি তৈরি করতে কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন এবং খনিজেরও গুরুত্ব হয়েছে। প্রোটিন, অ্যামাইনো অ্যাসিড মানবদেহের পেশি ও অঙ্গের কোষ তৈরিতে সাহায্য করে। ডায়েটের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু তার সঙ্গেই যোগ্য সঙ্গত প্রয়োজন কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন এবং খনিজেরও।

প্রোটিন পেশি তৈরিতে কাজে লাগে। তবে শুধু পেশির গঠন বললে ভুল হয়ে যাবে, বরং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ তৈরিতে কাজ করে প্রোটিন। তাই প্রোটিন শরীরে প্রয়োজন।

অনেকেই প্রোটিনের চাহিদা মেটানোর জন্য নিয়মিত প্রোটিন শেক খান। বিভিন্ন সংস্থার বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন শেক পাওয়া যায়। তাতে হয়তো কাজ হয়, কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে প্রোটিন সংগ্রহ করার থেকে আর কিছুই ভাল হয় না বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এমন কিছু খাবার রয়েছে, যা নিয়মিত ডায়েটে রাখলে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন এবং অন্য পোষক পদার্থ সহজেই মিলবে।

ডিম

ডিমের মধ্যে রয়েছে প্রোটিন। এটি পেশি গঠনে সাহায্য করে। এই প্রোটিনে নয়টি জরুরি অ্যামাইনো এসিড রয়েছে। এগুলো পেশির পুনর্গঠনে সাহায্য করে। ডিমের কুসুম ভিটামিনের ভালো উৎস। এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-ই, ভিটামিন-কে ও ভিটামিন-বি। এই ভিটামিনগুলো বিপাক বাড়াতে সাহায্য করে এবং চর্বিকে শক্তিতে রূপ দেয়। প্রতিদিন এক অথবা দুটি ডিম খাওয়া পেশি বাড়াতে সাহায্য করে।

সামুদ্রিক মাছ

যদি ডায়েটে এমন খাবার থাকে যা যথেষ্ট স্নেহ পদার্থ সরবরাহ করতে পারছে। সেক্ষেত্রে প্রোটিনের জন্য ভরসা করা যায় মাছের উপর। বিশেষ করে লোনা জলের মাছ বা সামুদ্রিক মাছ। একাধিক প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ মৌলের ভরপুর উৎস এই মাছ। সামুদ্রিক মাছে থাকে প্রচুর পরিমাণ ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড যা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয়। পাশাপাশি পেশির কর্মক্ষমতা উন্নত করার জন্য প্রয়োজনীয়।

মুরগির মাংস

মুরগির মাংস ভালো লিন প্রোটিনের উৎস। এর মধ্যে পেশি বাড়ানোর আরো উপাদান রয়েছে। যেমন : নায়াসিন, ভিটামিন-বি, আয়রন, সেলেনিয়াম ও জিংক। তাই মুরগির মাংস, বিশেষ করে মুরগির বুকের মাংস খেতে পারেন পেশি বাড়াতে চাইলে।

কাঠবাদাম

যারা পেশি বাড়াতে চান, তাদের জন্য আরেকটি ভালো পছন্দ হলো কাঠবাদাম। এর মধ্যে থাকা প্রোটিন, আঁশ, ভিটামিন-ই পেশির জন্য ভালো।

দুধ

পেশি তৈরির জন্য দুধ আরেকটি ভালো খাবার। এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন ও মিনারেল। রয়েছে ভালো কার্বোহাইড্রেট ও চর্বি। এগুলো পেশি তৈরির জন্য ভালো। বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়, ব্যায়ামের পর এক গ্লাস দুধ খাওয়া শরীরের বেশ উপকার করে।

দুগ্ধজাতীয় প্রোটিন

দুগ্ধজাতীয় প্রোটিনের অন্যতম উৎস দই। দ্রুত হজম করা যায় দইয়ে থাকা প্রোটিন। এতে যা উপাদান রয়েছে তা প্রোটিন-সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার গতি বৃদ্ধি করতে পারে। পেশি তৈরির জন্য যা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

দুগ্ধ-জাতীয় প্রোটিনের অন্যতম প্রয়োজনীয় উৎস হল পনির। নিরামিশাষী কোনও ব্যক্তির প্রয়োজনীয় প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে সাহায্য করবে এই প্রোটিন। ভরপুর প্রোটিনের উৎসের পাশাপাশি পনির অত্যন্ত সুস্বাদু। তার সঙ্গে প্রয়োজনীয় ক্যালোরিও সরবরাহ করে পনির।

পালংশাক

পালংশাক পেশি তৈরির জন্য বেশ ভালো সবজি। এটি পেশি পুনর্গঠনে সাহায্য করে। গবেষণায় বলা হয়, এর মধ্যে থাকা সাইটোয়েকডাইস্টেরয়েডস নামে উপাদান পেশির ২০ ভাগ বৃদ্ধি বাড়িয়ে দেয়। এর মধ্যে থাকা ক্যালসিয়াম পেশিকে শিথিল করে এবং আয়রন পেশি তৈরিতে সাহায্য করে।

মটরশুঁটি

সব ধরনের মটরশুঁটিতেই ভিটামিন ‘ডি’ থাকে। এটি শুধু টেস্টোস্টেরনের মাত্রাই ঠিক রাখে তা নয়, হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখতেও সাহায্য করে।

ফুলকপি

এই সবজিটি পুরুষের শরীরে ইস্ট্রোজেন (নারী হরমোন) হরমোনের মাত্রা কমিয়ে দেয়। অন্যদিকে বৃদ্ধি করে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা। সামান্য হলেও প্রতিদিন ফুলকপি খাওয়া ভালো।

মধু

শরীরে শক্তি বৃদ্ধির জন্য মধু খুবই কেজো। প্রতিদিন অন্তত পুরো এক চামচ মধু খেলে দারুণ উপকার পাবেন। চা কিংবা ফলের সালাদের সঙ্গেও এটি খাওয়া যায়।

রসুন

রসুনে এমন একটি রাসায়নিক উপাদান আছে, যা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি পেশি বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে।

আঙুর

আঙুরও টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধি করে। এ জন্য প্রতিদিন কয়েকটি আঙুরই যথেষ্ট।

তরমুজ

তরমুজ খেলে শরীরে রক্ত চলাচল ত্বরান্বিত হয়। ফলে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে হৃৎপিণ্ডের। এ ছাড়া ঠিক থাকে কোলেস্টেরলের মাত্রা। তরমুজ নিয়মিত খাওয়া যায়। তবে তরমুজ সারা বছর পাওয়া যায় না। তাই তরমুজের মৌসুমে নিয়মিত খেতে বাধা নেই।

অলিভ অয়েল

পেশি গঠনে অলিভ অয়েল ব্যবহার করা যায়। কারণ এতে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট রয়েছে। যা পেশি তৈরির জন্য সাহায্য করে। পাশাপাশি কুইনোয়া ডায়েটে রাখা যায়। উচ্চমানের প্রোটিন ও ফাইবারের উৎস এই খাবার।

কুমড়ার বীজ

কুমড়ার বীজে পাওয়া যায় উদ্ভিদ-ভিত্তিক প্রোটিন। যা পেশি তৈরি ও মেরামতের জন্য অপরিহার্য। ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার (ইউএসডিএ) নিউট্রিশন চার্ট অনুযায়ী, ১০০ গ্রাম কুমড়ার বীজে প্রায় ২৩.৩৩ গ্রাম প্রোটিন থাকে। সহজ প্রোটিন বুস্ট পেতে খাবারে বা নাস্তায় কুমড়ার বীজ যোগ করুন।

বাড়িতে প্রোটিন পাউডার বানাবেন যেভাবে

প্রোটিন পাউডারের মধ্যে এখন হোয়ে প্রোটিন বেশি করে সামনে আসছে। তবে এটা বানানো কঠিন। আপনি দুধে টক কিছু দিন। সেটা ছানা হবে। এবার ছানা কাটা যে পানি, সেটা হল হোয়ে প্রোটিন। এবার আপনি সহজেই তা বাড়িতে বানিয়ে ফেলুন প্রোটিন পাউডার। ছানার পানি নিন। তার সঙ্গে মিশিয়ে দিন ৪ চামপ ওটস, ১ চামচ পিনাট বাটার, ১ চামচ কুমড়োর বিজ। এবার তা আপনি মিক্সারে মিশিয়ে খেয়ে ফেলুন। এতেই প্রোটিন পাবেন প্রচুর। তাই এবার এই রেসিপি খাওয়া শুরু করে দিন। দেখবেন সুগঠিত আকর্ষণীয় পেশি পেয়ে যাবেন।

(ঢাকাটাইমস/১৫ অক্টোবর/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :