দুই জঙ্গি ছিনতাই: সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিতের এপিএস ফারুক গ্রেপ্তার, সম্পৃক্ততা মিলেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২২, ০১:২০ | প্রকাশিত : ২৭ ডিসেম্বর ২০২২, ২৩:২৮

ঢাকার আদালত চত্বর থেকে দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ওমর ফারুক নামে এক আইনজীবীর সম্পৃক্ততা পেয়েছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। সোমবার তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

মঙ্গলবার রাতে ওমর ফারুকের গ্রেপ্তারের বিষয়টি ঢাকাটাইমসকে নিশ্চিত করেছেন সিটিটিসির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।

তদন্তে থাকা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওমর ফারুক পালিয়ে যাওয়া এক জঙ্গির ভগ্নিপতি। তিনি প্রয়াত রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের এপিএস ছিলেন।

সিটিটিসির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, 'ওমর ফারুককে ৫-৬ দিন আগে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় ওমর ফারুকের সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। দুই দফায় চারদিন রিমান্ড শেষে তিনি এখন কারাগারে আছেন।'

এদিকে দুই জঙ্গি ছিনতাইয়ে এখন পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিটিটিসি প্রধান।

এর আগে ২০ নভেম্বর ঢাকার আদালত ফটকের সামনে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়া হয়। তবে একমাসের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও তাদেরকে শনাক্ত বা আটক করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সম্প্রতি ওমর ফারুক নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে ঢাকাটাইমস। তখন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওমর ফারুকের বেশভূষাও বদলে গেছে। ক্লিন-শেভ চেহারা বদলে গেছে শ্মশ্রুতে। তাতে লেগেছে মেহেদির রঙও। নিয়োজিত ছিলেন আইন পেশাতে। ২০১৫ সালের ১১ এপ্রিল হাইকোর্ট বিভাগে আইনজীবী হিসেবে অ্যানরোলমেন্ট হয় তার। সদস্য পদ পান পরের বছরের ২৪ মে।

কী ঘটেছিল ওই রাতে?

২০১২ সালের ৯ এপ্রিল রাতের ঘটনা। হঠাৎ করেই একটি গাড়ি ঢুকে পড়ে বিজিবি সদর দপ্তরের ফটক দিয়ে। ওই গাড়িতে ছিলেন তৎকালীন রেলমন্ত্রীর এপিএস ওমর ফারুক তালুকদার, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সাবেক মহাব্যবস্থাপক ইউসুফ আলী মৃধা ও রেলওয়ের কমান্ড্যান্ট এনামুল হক। গাড়ির চালক ছিলেন আজম খাঁন। ওই গাড়ি থেকে তখন উদ্ধার করা হয় একটি টাকার বস্তা। যেখানে ৭০ লাখ টাকা ছিল। অভিযোগ ওঠে, রেলওয়ের নিয়োগ বাণিজ্য থেকে এই অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে। দেশজুড়ে আলোড়ন তৈরি হয় ওই ঘটনায়। তুমুল সমালোচনার মুখে মন্ত্রী পদ থেকে সরে যেতে বাধ্য হন প্রয়াত রাজনীতিক সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। এর আগে এপিএস পদ থেকে ওমর ফারুককে বরখাস্তও করেন তিনি।

গাড়িতে বস্তায় পাওয়া টাকার উৎসের খোঁজে নামে দুদক। অনুসন্ধানে ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের সন্ধান পাওয়ায় ২০১২ সালের ১৪ আগস্ট রমনা থানায় মামলা করে দুদক। মামলায় জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়। তদন্ত শেষে দুদক আইনের ২৭(১) ও ২৬(২) ধারায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক।

কারাদণ্ড হয়েছিল পাঁচ বছর: জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক মো. আতাউর রহমান এক রায়ে ওমর ফারুক তালুকদারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন। সেই সঙ্গে, এক কোটি ২৩ লাখ ৪৭ হাজার টাকা অর্থদণ্ডও দেন আদালত। তার নামে থাকা ঢাকার মোহাম্মদপুরের একটি ফ্ল্যাট বাজেয়াপ্ত করারও আদেশ দিয়েছিলেন আদালত।

রায় ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন ওমর ফারুক। ওই সময় তিনি জামিনে ছিলেন। কিন্তু রায় ঘোষণার পর সাজা পরোয়ানা জারি করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। পুলিশ তাকে কারাগারে নিয়ে যায়। পরে তিনি জামিনে ছাড়াও পান।

ঢাকার মোহাম্মদপুরের যে ফ্ল্যাটটি বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দিয়েছিলেন আদালত সেই ফ্ল্যাটেই চেম্বার করছিলেন ওমর ফারুক।

যেভাবে উঠে আসেন ওমর ফারুক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেলপথ নিয়ে আলাদা মন্ত্রণালয় করেন ২০১১ সালে। দেশব্যাপী রেলপথ বিস্তৃত ও উন্নয়নের জন্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে দেওয়া হয়েছিল রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে সুরঞ্জিত রেলমন্ত্রী হওয়ার পর ওমর ফারুককে তার এপিএস করে নেন। ওমর ফারুকের বাড়ি সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার সেলবরষ ইউনিয়নের হাওরপাড়ের মির্জাপুর গ্রামে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গ্রামের সাধারণ পরিবেশেই বড় হয়ে উঠেছেন ওমর ফারুক। পরিবারও ছিল স্বনামধন্য। তবে একপর্যায়ে পরিবারে আর্থিক অসচ্ছলতা দেখা দেওয়ায় ফারুক ঢাকায় এসে শুরুতে কারওয়ান বাজারে একটি রেস্টুরেন্টে এক হাজার ২০০ টাকা বেতনে চাকরি নেন। সে সময় সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস ছিলেন অনুকূল তালুকদার ডালটন।

অনুকূলের সঙ্গে পরিচয়ের পর একসময় দুজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। অনুকূল ২০০৮ সালে ব্যারিস্টারি পড়তে লন্ডন যান। তখন তার জায়গা দখল নেন ওমর ফারুক। ধীরে ধীরে সুরঞ্জিতের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন তিনি। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুনামগঞ্জের দিরাই-শাল্লা নির্বাচনী এলাকা থেকে বিজয়ী হন। পরে মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পর ওমর ফারুক তার এপিএস হিসেবে নিয়োগ পান।

(ঢাকাটাইমস/২৭ডিসেম্বর/এসএস/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অপরাধ ও দুর্নীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অপরাধ ও দুর্নীতি এর সর্বশেষ

সোনালী লাইফের বহিষ্কৃত সিইও মীর রাশেদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

কোস্ট গার্ডের অভিযানে ৪৫ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার

চাকরির পরীক্ষার আগেই মিলত উত্তর, চুক্তি ১২-১৪ লাখ টাকায়: ডিবি

আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সক্রিয় সদস্য গ্রেপ্তার

আন্তর্জাতিক শিশু পর্নোগ্রাফি চক্রের মূলহোতা গ্রেপ্তার, বিপুল কনটেন্ট জব্দ

এফডিসিতে সাংবাদিকদের উপর হামলা: ১১ সদস্যের তদন্ত কমিটি

স্ত্রীসহ নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ডিবিতে যা বলেছেন কারিগরি বোর্ডের চেয়ারম্যান

শেরপুরের ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি মামলার আসামি ঢাকায় গ্রেপ্তার

খেলনার প্যাকেটে আমেরিকা থেকে এসেছে কোটি টাকার গাঁজার চকলেট-কেক

সাবেক আইজিপি বেনজীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :