চাকরির পরীক্ষার আগেই মিলত উত্তর, চুক্তি ১২-১৪ লাখ টাকায়: ডিবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৮:৪৭ | প্রকাশিত : ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৮:২৩

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ৩য় ধাপে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে প্রশ্নপত্র ফাঁস করার সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগ।

গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের মধ্যে জ্যোতির্ময় গাইন (২৬) ও সুজন চন্দ্র রায় (২৫) ঢাবি শিক্ষার্থী। এছাড়া পরীক্ষার্থীরা হলো- মনিষ গাইন (৩৯), পংকজ গাইন (৩০) ও লাভলী মন্ডল (৩০)। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস ও প্রশ্নের সমাধান কাজে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। এই মোবাইল ফোনে অপরাধের বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, গত ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের তৃতীয় ধাপের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এই ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ২১ জেলার সাড়ে তিন লাখ পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। এই পরীক্ষা চলাকালে প্রশ্নের উত্তরপত্র ও ডিভাইসসহ মাদারীপুরে সাতজন ও রাজবাড়ীতে একজন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। এই ঘটনায় দুই জেলায় আলাদাভাবে মামলা করেন সংশ্লিষ্টরা।

রাজবাড়ীতে আটক হওয়া পরীক্ষার্থী আদালতে নিজের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তিনি জানান, কীভাবে উত্তর পেয়েছে। তার মোবাইল ফোনে কখন উত্তরপত্র এসেছে। মাদারীপুরে গ্রেপ্তার হওয়া পরীক্ষার্থীদের বেশিরভাগই জামিনে বের হয়ে যায়। এই ঘটনাটি তদন্তের জন্য মাদারীপুর জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাসুদ আলমের অনুরোধে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম দক্ষিণ বিভাগ তদন্তে নামে। অনুরোধের প্রেক্ষিতে মাঠে নেমে গ্রেপ্তার করা হয় চক্রের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী জ্যোতির্ময় গাইন ও সুজন চন্দ্রকে। তারা দুজনেই ঢাবির জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।

তারা গোয়েন্দা পুলিশকে জানিয়েছে, পরীক্ষার আগেই তারা প্রশ্ন সমাধানের জন্য পেয়েছেন। এই প্রশ্ন সমাধানের দায়িত্ব পেয়েছেন জ্যোতির্ময় গাইনের চাচা অসিম গাইনের মাধ্যমে। প্রশ্ন প্রতি ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা দেওয়ার আশ্বাসে তাদের দিয়ে প্রশ্ন সমাধান করান অসিম। এই প্রস্তাবে জ্যোতির্ময়, সুজনসহ সাতজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ হলের জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা ভবনের ২২৪ রুমে বসে তারা প্রশ্নের সমাধান করে পাঠান।

ঢাকা মহানগর ডিবির প্রধান আরও বলেন, অসিম তার ভাতিজা জ্যোতির্ময় গাইনকে প্রশ্ন সমাধানের দায়িত্ব দিয়েছেন। অন্য দিকে তিনি পরীক্ষার দুই থেকে তিন মাস আগেই পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। বিশেষ করে যাদের চাকরির বয়স শেষের পথে এমন পরীক্ষার্থীদের টার্গেট করতেন। তাদের পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়ার জন্য ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকায় চুক্তি করতেন। পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগেই প্রশ্নের উত্তরপত্র পরীক্ষার্থীদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন অসিম গাইন। সমাধান করে দেওয়া প্রশ্নের ৭২ থেকে ৭৫টি প্রশ্ন মিলেছে।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, আমাদের তদন্তে এখন পর্যন্ত যে প্রমাণ পেয়েছি তাতে এই চক্রের মূলহোতা অসিম গাইন। তার বাড়ি মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলায়। সে আগেও বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে। সে অল্প দিনে কয়েকশো কোটি টাকা আয় করেছে। এই টাকা দিয়ে তার গ্রামে বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন। স্থানীয় রাজনৈতিক একটি প্রভাব থাকা অসিমের মানবপাচার, হুন্ডি ব্যবসা, ডিশ ব্যবসা রয়েছে। যেখানে তিনি প্রশ্ন ফাঁস করে আয় করা টাকা বিনিয়োগ করেছেন। তিনি বর্তমানে পলাতক আছেন। আমরা তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। তাকে গ্রেপ্তার করলে কীভাবে তিনি প্রশ্ন পায় সেই বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যাবে। এই ঘটনায় দুজনকে আমরা রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালতে যারা প্রশ্নের সমাধান করেছেন তারাও স্বীকার করেছেন। যারা প্রশ্ন পেয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন তারাও স্বীকার করেছেন। প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে আরও কারা জড়িত সে বিষয় তদন্ত চলছে। জড়িত কেউই ছাড় পাবেন না।

প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ডিবির পক্ষ থেকে পরীক্ষা বাতিলের অনুরোধ জানাবে কি না জানতে চাইলে মোহাম্মদ হারুন বলেন, আমরা এই মামলার তদন্তে নেমে যা যা পেয়েছি, সবকিছুই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো। এরপর তারা সিদ্ধান্ত নেবেন পরীক্ষা বাতিল করবেন নাকি বহাল রাখবেন। তারা তাদের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন। তিনি বলেন, এর আগেও ব্যাংক, বিমানসহ বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় জড়িত অনেককে গ্রেপ্তার করেছি। ব্যাংকের পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২৫এপ্রিল/এলএম/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অপরাধ ও দুর্নীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :