গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা: কায়রো পৌঁছেছে হামাসের প্রতিনিধিদল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ০৫ মে ২০২৪, ১২:৩৫

গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তির জন্য একটি চুক্তি করতে মিশরের রাজধানী কায়রোতে শনিবার থেকে যুদ্ধবিরতি আলোচনা আবার শুরু হওয়ার মধ্য দিয়ে প্রচেষ্টা জোরদার হয়েছে। হামাসের একটি প্রতিনিধিদল বর্তমানে কায়রোতে অবস্থান করছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মিশরীয় কর্মকর্তা বলেছেন, ইসরায়েলের সীমিত যুদ্ধবিরতি বিবেচনা করতে ইচ্ছুক, বিনিময়ে হামাস ৩০ জিম্মিকে মুক্তি দেবে, যেখানে পূর্বের আলোচনায় ৪০ জিম্মির মুক্তির দাবি করেছিল ইসরায়েল।

হামাস বলেছে, যুদ্ধবিরতির জন্য সবশেষ যে প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে সেটি পর্যালোচনা করে তাদের প্রতিনিধি দলটি ‘ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি’ নিয়ে সেখানে গেছে।

শনিবার রাতে দেয়া এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, তারা আলোচনার টেবিলে চুক্তিটি চূড়ান্ত হোক তাই চায়, যদিও অনেকগুলো বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে এখনো মতপার্থক্য আছে।

এর মধ্যে যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি কি সাময়িক নাকি স্থায়ী হবে - সে প্রশ্ন এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

হামাস চায় এমন চুক্তি বা সমঝোতা হোক যাতে যুদ্ধ শেষ হওয়ার সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার থাকবে। অন্যদিকে, ইসরায়েলে হামাসের তৎপরতা থাকবে এ নিয়ে কোন চুক্তিতে সম্মত হতে রাজী নয় দেশটি।

ধারনা করা হচ্ছে যে, এ আলোচনায় ৪০ দিনের যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তির বিষয়টি আলোচনা হবে। একই সাথে ইসরায়েলের কারাগারে আটক থাকা বেশ কিছু ফিলিস্তিনি বন্দীও মুক্তি পাবেন।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু অবশ্য বারংবারই গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরে নতুন সামরিক অভিযানের কথা বলে আসছেন, এমনকি চুক্তি হলেও।

ইসরায়েলি মিডিয়া যে খবর দিচ্ছে তাতে নতুন করে যুদ্ধবিরতির আলোচনার শুরু হলেও দেশটির অবস্থানের পরিবর্তন হয়নি। তবে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক ও সামরিক সহযোগী যুক্তরাষ্ট্র নতুন কোন অভিযানের পক্ষে নয়, যেখানে বিরাট সংখ্যক বেসামরিক নাগরিক হতাহতের আশংকা থাকে। বরং দেশটি আগে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের সুরক্ষায় একটি পরিকল্পনা দেখতে চাইছে।

গাজার মধ্য ও উত্তরাঞ্চলে যুদ্ধের কারণে প্রায় ১৪ লাখ মানুষ পালিয়ে রাফাহ শহরে আশ্রয় নিয়েছে।

শনিবার যুদ্ধবিরতি চুক্তির সম্ভাবনার কথা বলতে গিয়ে ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রীসভার সদস্য বেনি গান্টয বলেছেন, ‘কোন আনুষ্ঠানিক জবাব এখনো পাওয়া যায়নি। যখন পাওয়া যাবে তখন যুদ্ধকালীন কেবিনেট বসে আলোচনা করবে।’

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএ’র পরিচালক সর্বশেষ এ আলোচনায় মধ্যস্থতার জন্য কায়রো গেছেন বলে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিবিএস নিউজকে জানিয়েছেন দুই কর্মকর্তা।

প্রসঙ্গত, গত কয়েকমাস ধরেই বড় কোন অর্জন ছাড়াই যুদ্ধবিরতির আলোচনা চলছে। এ সময়ে কয়েকবার নতুন চুক্তির সম্ভাবনা দেখা গেলেও শেষ পর্যন্ত স্বাক্ষরের আগে সেটি ব্যর্থ হয়েছে।

আলোচনার সাথে সম্পৃক্ত একটি সূত্র বলছে আলোচনায় জটিলতা রয়েই গেছে এবং একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে কয়েকদিন সময় লাগতে পারে।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এদিন ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্ত দিয়ে ইসরায়েলে প্রবেশ করে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস যোদ্ধারা। পাশাপাশি ইসরায়েল থেকে প্রায় ২৪০ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় নিয়ে যায় হামাস।

তারপর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী। পরে ২৮ অক্টোবর থেকে অভিযানে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও। চার মাসের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৩৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৭০ শতাংশেরও বেশি নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন ৭৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি।

গত বছরের নভেম্বরে কাতারের মধ্যস্থতায় প্রথমবারের মতো যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় হামাস ও ইসরায়েল। এক সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতিতে ইসরায়েলি কারাগার থেকে ২৪০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে ৭১ জন মহিলা এবং ১৬৯টি শিশু রয়েছে। বিনিময়ে ২৪ বিদেশিসহ মোট ১০৫ জনকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। হামাসের কাছে এখনো প্রায় ১৩৪ জন জিম্মি রয়েছে বলে দাবি ইসরায়েলের।

সূত্র: বিবিসি

(ঢাকাটাইমস/০৫মে/এমআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :