বরিশালে তুচ্ছ ঘটনায় পরিবহন শ্রমিকদের সংঘর্ষ, যান চলাচল বন্ধ

বরিশাল ব্যুরো, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ০৪ মে ২০২৪, ২২:৪৪ | প্রকাশিত : ০৪ মে ২০২৪, ২২:৩৪

বরিশালের নথুল্লাবাদে হর্ন বাজানোকে কেন্দ্র করে এক বাসচালককে মারধরের জেরে দুই দফায় সংঘর্ষে জড়িয়েছেন বাস ও টেম্পু শ্রমিকরা। সংঘর্ষের পর অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লা রুটের সব বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

শনিবার দুপুর ১২টার দিকে নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে প্রথম সংঘর্ষ হয়। সে সময় বাসমালিক সমিতির একটি পক্ষের শ্রমিকেরা সড়কে বাঁশ ফেলে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন এবং বিক্ষোভ করেন। এতে তিন ঘণ্টার মতো টার্মিনাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ থাকে। সন্ধ্যায় ফের সংঘর্ষ বাঁধলে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লা রুটের বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।

সন্ধ্যার পর দ্বিতীয় দফায় টার্মিনাল এলাকায় শ্রমিকেরা সংঘর্ষে জড়ান। বিক্ষুব্দ বাস শ্রমিকরা টেম্পুতে যাত্রী পরিবহন বন্ধ করতে গেলে টেম্পু শ্রমিকদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় অর্ধশতাধিক টেম্পু ভাংচুর করে বাসশ্রমিকরা। টার্মিনাল এলাকায় প্রায় আধা কিলোমিটার জুড়ে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।

এ ঘটনায় দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বাস টার্মিনাল নিয়ন্ত্রন নিয়ে বিরোধের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিক্ষুব্ধরা বাঁশ ফেলে সড়ক অবরোধ করেবাস শ্রমিক ও প্রত্যক্ষদশী সূত্রে জানা গেছে, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে মাদারীপুরগামী একটি বাস হর্ন বাজাচ্ছিল। এ সময় বাসমালিক সমিতির কর্মচারী বাবাই এসে চালককে বাসটি সরাতে বলেন; কিন্তু তা না শোনায় বাবাই ওই চালককে মারধর করেন। ওই ঘটনায় দুই শ্রমিক সৌরভ ও সাকিল ভিডিও করতে গেলে তাদেরও আটকে মারধর করে বাবাইয়ের লোকজন।

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে দুই শ্রমিককে উদ্ধারের দাবিতে শ্রমিকরা একজোট হয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে টার্মিনালের ভেতর ও বাইরে। পরে শতাধিক শ্রমিক টার্মিনালের বাইরে থাকা মেয়র খোকনের ব্যানার এবং বাস মালিক সমিতির সভাপতি অসীম দেওয়ানের ছবি ছিঁড়ে ফেলেন।

একপর্যায়ে টার্মিনালের ভেতর আসবাবপত্র এবং মালিক সমিতির কার্যালয় ভাঙচুরের চেস্টা চালায় শ্রমিকেরা। এ সময় প্রতিপক্ষ শ্রমিক নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান লিটন মোল্লা বাস টার্মিনালে উপস্থিত ছিলেন।

শ্রমিকরা অভিযোগ করেছেন, সদ্য গঠিত শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি কাজী কবির আহমেদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও তিনি কোনো বাধা দেননি। এতে ক্ষুদ্ধ হয় সাধারণ শ্রমিকেরা। তারা সংঘবদ্ব হয়ে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন। শ্রমিকদের মারধর করার অভিযোগে বহিরাগত অজাদ ও সৈয়দ রাব্বী নামে দুই যুবককে আটকে শ্রমিকেরা মারধর করে। এ সময় শ্রমিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে ঢুকে তছনছ করা হয়।

বিক্ষুব্দ শ্রমিকরা জানান, টার্মিনাল নিয়ন্ত্রন করছে বাহিরাগতরা। শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতির সামনে একজন চালককে মারধরের সময় তিনি বাধা দেননি। শ্রমিকদের কোনো নিরাপত্তা নেই। তারা এর প্রতিবাদ করেছেন মাত্র।

এ বিষয়ে বরিশাল বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি অসীম দেওয়ান বলেন, ‘মূলত শ্রমিকদের মাঝে সংঘর্ষ ঘটেছে। এ ঘটনাকে ভিন্নখাতে নিতে তৃতীয় পক্ষ উস্কানি দিয়ে সংঘর্ষের রূপ বাড়িয়ে দিয়েছে। এ ঘটনার তদন্ত শেষে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বরিশাল এয়ারপোর্ট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদুর রহমান বলেন, ‘শ্রমিক মারধরের ঘটনায় দফায় দফায় মারামারির ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’

তবে জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের নবনির্বাচিত সভাপতি কাজী কবির বলেন, ‘এ ঘটনায তিনি ও বাবাই জড়িত নন। শ্রমিক নেতা লিটন মোল্লা উপস্থিত হয়ে শ্রমিকদের উত্তেজিত করেছেন। এর নেপথ্যে অন্য কোনো মহলের ইন্ধন রয়েছে।’

ঘটনাস্থলে উপস্থিত বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘শ্রমিক ইউনিয়নের কমিটি নিয়ে একদল শ্রমিক ক্ষুদ্ধ ছিল। বহিরাগতরা এক চালককে মারধরের ঘটনার জের ধরে ক্ষুদ্ধরা শ্রমিক ইউনিয়ন কার্যালয় ও টার্মিনাল এলাকায় ভাঙচুর করেছে। মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি সমঝোতার চেষ্টা চলছে। তবে বর্তমানে বাস চলাচল বন্ধ আছে।’

(ঢাকাটাইমস/০৪মে/প্রতিনিধি/এসআইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :