সৈয়দপুরে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে তালাকের অভিযোগ কোস্টগার্ড সদস্যের বিরুদ্ধে

সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ০৪ মে ২০২৪, ২২:০৬
অভিযুক্ত কোস্ট গার্ড সদস্য মাহাবুল আলম

নীলফামারীর সৈয়দপুরে যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে এক তরফা তালাক দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক কোস্ট গার্ড সদস্যের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত কোস্ট গার্ড সদস্য মাহাবুল আলম উপজেলার খাতা মধুপুর ইউনিয়নের ডাঙ্গী চৌধুরী পাড়ার গোলাম রব্বানীর ছেলে। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড বানৌজা ঈসা খা ব্যাটালিয়ন চট্টগ্রামে কর্মরত।

অভিযুক্তের স্ত্রী প্রিয়াংকা আক্তার নীলফামারী সদর উপজেলার চড়াইখোলা ইউনিয়নের বসুনিয়া পাড়ার মো. ওহেদুল হকের মেয়ে।

প্রিয়াংকা আক্তার জানান, গত বছরের ২০ মার্চ তাদের বিয়ে হয়।

প্রিয়াংকা বলেন, ‘কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের হাজারীহাট প্রজা পাড়ার মৃত আজিজার রহমানের ছেলে সাগরের শহরের বাসা মুন্সিপাড়ায় আমাদের বিয়ের আয়োজন করা হয়। সাগর ও মাহবুল উভয়ে ঘনিষ্ট বন্ধু। সাগর আমাদের বিয়ের ঘটকের কাজ করেন এবং সকল আয়োজন করেন। বিয়ের আসরে মাহাবুল যৌতুক বাবদ ১২ লাখ টাকা দাবি করেন। আমার পরিবার তৎক্ষণাৎ ৩ লাখ টাকা প্রদান করেন।’

প্রিয়াংকা আরও বলেন, ‘আমার স্বামী মাহাবুল সে সময় খুলনায় পোস্টিংয়ে ছিলেন। তিনি জানান কিছুদিনের মধ্যে শ্বশুড় বাড়িতে আমাকে নিয়ে যাবেন। এভাবে দিনের পর দিন পার করতে থাকেন। একবছর অতিক্রান্ত হলেও আমাকে শ্বশুড় বাড়িতে তুলে নেননি। শ্বশুড় বাড়িতে নেওয়ার জন্য তাগাদা দিলে যৌতুকের বাকি টাকা দেওয়ার কথা বলেন।’

প্রিয়াংকার অভিযোগ, মাহাবুল এর পরিবারের খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন পুরো পরিবার থাই জুয়ার সঙ্গে জড়িত। সাগরও জুড়ার সঙ্গে জড়িত। এছাড়া ঘটক সাগরের শালিকার সঙ্গে মাহবুলের দীর্ঘদিন যাবত অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে বলেও অভিযোগ তার। ‘সাগর কৌশলে এই ঘটনা গোপন করে আমার সঙ্গে মাহাবুলের বিয়ে দেন’ বলেন প্রিয়াংকা।

প্রিয়াংক আরও বলেন, ‘আমি সব বিষয় জানতে পেরে আমার স্বামীকে সেপথ থেকে ফিরে আসতে বলি এবং আমাকে তার কর্মস্থলে নিয়ে যাওয়ার তাগিদ দেই। কিন্তু মাহাবুল আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। তার খবর নিতে হলে সাগরের স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়।’

গত কয়েকদিন আগে চড়াইখোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের কাছে এক তরফা তালাকনামা পাঠানো হয় উল্লেখ করে প্রিয়াংকা বলেন, ‘এই খবর জানতে পেরে গত সোমবার আমি শ্বশুড় বাড়িতে যাই। আমার শ্বশুড়-শাশুড়ি, ভাসুর মাসুদ ও দেবর মাহফুজ আমাকে মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। আমার শ্বশুড় গোলাম রব্বানী বলেন, যৌতুকের বাকি টাকা দিলে তারা তুলে নেবেন। তার আগে বাসায় ঢুকতে দেবেন না।’

ভুক্তভোগীর দাবি, ‘তারা আমাকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদান করছেন যাতে আমি আইনের আশ্রয় গ্রহণ না করি। আমার সঙ্গে যে আচরণ করা হলো এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।’

এ বিষয়ে প্রিয়াংকার স্বামী মাহাবুল আলমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘খাতা মধুপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জুয়েল চৌধুরী আমার মামা হয়। প্রিয়াংকার বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলেন। তিনি সব ব্যবস্থা নেবেন।’

খাতা মধুপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জুয়েল চৌধুরী বলেন, ‘কোস্ট গার্ড সদস্য মাহাবুল আলম আমার ইউনিয়নের বাসিন্দা। সে আমার ভাগ্নে নয়। তবে তাকে জোর পূর্বক আটকিয়ে রেখে বিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।’

জুয়া খেলার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে মাহবুলের বন্ধু সাগর বলেন, ‘আমি আগে থাই (জুয়া) খেলতাম একবার পুলিশ অভিযান চালিয়ে আমাকে আটক করে। মামলা কোর্টে চলমান রয়েছে। রায়ের আমার যা হওয়ার তাই হবে। প্রিয়াংকার বিয়ের ঘটক ছিলাম আমি। বিয়ে দিয়েছি, এখানে আমার দোষের কী। প্রিয়াকাংরা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’

সাগরের স্ত্রী সেরা ওরফে সেবাবা বলেন, ‘আমার বাড়িতে কোনো বিয়ের আয়োজন হয়নি। আমার স্বামী বিয়ের ঘটকালি করেননি। আমার বোনের সঙ্গে মাহাবুলের কোনো সম্পর্ক নেই।’

নীলফামারী সদর উপজেলার চড়াইখোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুম রেজা বলেন, ‘প্রস্তারের মাধ্যমে প্রিয়াংকার সঙ্গে মাহাবুলের বিয়ে হয়। এখন যৌতুকের বাকি টাকা না পেয়ে তারা এক তরফা তালাক দিয়েছে। গত সোমবার মাহাবুলের স্ত্রী শ্বশুড় বাড়ি খাতামধুপুরে গেলে তাকে মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি।’

এ বিষয়ে খাতামধুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদ রানা পাইলট বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের বাসিন্দা কোস্ট গার্ড সদস্য মাহাবুলের স্ত্রী প্রিয়াংকা স্বীকৃতির দাবী নিয়ে শ্বশুড় বাড়িতে গেলে তাকে মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়ার খবর শুনেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

(ঢাকাটাইমস/০৪মে/প্রতিনিধি/এসআইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :