যমুনা সার কারখানা যেন দূষণের কারখানা! ছড়াচ্ছে রোগব্যাধি

মো. ইমরান মাহমুদ, জামালপুর
 | প্রকাশিত : ১০ জানুয়ারি ২০২৩, ১৪:২৭

জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ যমুনা সার কারখানা লিমিটেড যেন পরিবেশ দূষণের কারখানায় পরিণত হয়েছে।

কারখানার আশপাশের পাঁচটি গ্রামের অন্তত ১২ হাজার মানুষ প্রতিনিয়ত কারখানা থেকে বিপুল পরিমাণ অ্যামোনিয়া গ্যাস বাতাসে নির্গত হওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কিন্তু কোনো প্রতিকারে কোনো পদক্ষেপ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

জানা গেছে, ১৯৯১ সালে যমুনা সার কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরু থেকেই এটি পাশের যমুনা ও শাখা নদনদীসহ জলাশয়গুলো দূষণ করে আসছে। প্রতিবছর মরে ভেসে ওঠে নদীর মাছ। পাশাপাশি অ্যামোনিয়া গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে পাশের গ্রামগুলোর জমির ফসল ও গাছপালা মরে যাচ্ছে।

কারখানা সূত্র জানায়, কারখানাটি নিয়মিত প্রচুর পরিমাণে তরল অ্যামোনিয়া গ্যাস নির্গত করে। যা বছরে এক বা দুইবার ব্যাপকহারে বিষক্রিয়া ছড়ায়। আশেপাশের গর্ত, পুকুর এবং নদীতে মিশ্রিত ইউরিয়া সার মিশ্রিত বর্জ্যপানি মারাত্মকভাবে দূষিত করছে। এতে এলাকার মানুষ নলকূপের পানিও না ফুটিয়ে ব্যবহার করতে পারে না।

কৃষকরা জানায়, কারখানার আশেপাশের জমিগুলোতে ফসল উৎপাদনে চরম সংকটের সম্মুখীন হতে হয়। অনেক সময় কারখানায় অ্যামোনিয়া গ্যাস নির্গত করে ফসলের ক্ষতি হয়, কিন্তু কৃষকরা এর কোনো ক্ষতিপূরণ পান না।

শিক্ষার্থীরা জানান, যখন কারখানাটি বিপুল পরিমাণে গ্যাস ছাড়ে, তখন নির্গত গ্যাসের কারণে আশপাশের স্কুলের শিক্ষার্থীরা তাদের ক্লাসে থাকতে পারে না। বিভিন্ন সময় চক্ষু রোগ, চর্মপীড়াসহ নানা রোগব্যাধি দেখা দেয়।

তারাকান্দি গ্রামের মরিয়ম বেগম জানান, অ্যামোনিয়া গ্যাসের কারণে তারা কোনো শাক-সবজি চাষ করতে পারে না এবং মধ্যরাতে উচ্চশব্দের জন্য তারা ঘুমাতে পারে না।

চেচিয়াবান্দা গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ হানিফ বলেন, কারখানাটি তার জমিতে বিষাক্ত পদার্থ ছেড়ে দেওয়ায় তিনি চাষ করতে পারছেন না এবং কারখানার কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করছেন।

এদিকে কারখানার বাইরে নির্গত অ্যামোনিয়া গ্যাস মানবদেহ ও কৃষিজমির জন্য খুবই ক্ষতিকর বলে জানান সরিষাবাড়ী উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, এ ধরনের বিষাক্ত বাতাসে কেউ দীর্ঘসময় নিঃশ্বাস নেওয়া ফলে এই গ্যাস যদি কারো চোখ ও মুখে প্রবেশ করে তবে এটি শারীরিক ক্ষতির কারণ।

জামালপুর পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, যমুনা সার কারখানায় দূষণ বিরোধী প্রযুক্তি স্থাপনের দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

জামালপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মাসুদ রানা বলেন, যমুনা সার কারখানা এলাকায় পরিবেশ দূষণের কিছু অভিযোগ পেয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও অবহিত করা আছে। তারা কর্তৃপক্ষকে পরিবেশ দূষিত না করতে সতর্ক করেছেন বলেও জানান।

এসব ব্যাপারে যমুনা সার কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহীদুল্লাহ খান বলেন, অনেক সময় কারখানার প্রয়োজনে অ্যামোনিয়া ছাড়তে হয়। এটি একটি সাধারণ প্রক্রিয়া। তবে দূষণ বিরোধী প্রযুক্তি স্থাপনের বিষয়টি বিসিআইসি বা শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বিষয়।

(ঢাকাটাইমস/১০জানুয়ারি/এআর/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :