ঈমানের ওপর অটল ও অবিচল থাকার আমল

ইসলাম ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯:৪২ | প্রকাশিত : ১৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:০৩

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। মহান আল্লাহ সর্বশক্তিমান। আল্লাহ তাঁর সত্তায়, গুণে, মর্যাদায়, কর্মে ও ক্ষমতায় এক ও অতুলনীয়। তিনি অনাদি, অনন্ত, চিরস্থায়ী ও চিরঞ্জীব। তিনি মহাজ্ঞানী। সব কিছু দেখেন ও শুনেন। তাঁর কাছে কোন কিছু গোপন নেই। কাউকে তিনি জন্ম দেননি, তাঁকেও কেউ জন্ম দেয়নি। তিনিই আমাদের সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রিযিকদাতা, আইনদাতা, বিধানদাতা। তিনিই আমাদের মালিক ও প্রভু। তাঁরই কাছে ক্ষমা ও সাহায্য কামনা করি এবং আশ্রয় চাই অন্তর ও কর্মের অনিষ্ট হতে। তিনি যাকে ইচ্ছা হেদায়াত দান করেন, যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন, এতে কারো কোনো ক্ষমতা নেই।

বিশ্বজগৎ পরিচালনায় তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। তাঁর কোন সমকক্ষ ও শরীক নেই। তিনি একাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি তাঁর ইচ্ছেমত কাউকে সৃষ্টি করেন আবার কাউকে মৃত্যু দেন। কাউকে ধনী বানান আবার কাউকে দরিদ্র করেন। নিখুঁতভাবে তিনি একাই বিশ্বজগৎ পরিচালনা করেন, কারো সাহায্যের প্রয়োজন বোধ করেন না। চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র তাঁরই নির্দেশে নিজ নিজ কক্ষপথে পরিচালিত হচ্ছে। আল্লাহ সকল ক্ষমতার মালিক, মানুষ তাঁর দাস, প্রত্যেককে একমাত্র তাঁরই আনুগত্য করতে হবে।

আল্লাহতায়ালা খালিক বা সৃষ্টিকর্তা। তিনি ব্যতীত সবকিছুই মাখলুক বা সৃষ্টি। সব সৃষ্টিই তার মুখাপেক্ষী। জন্ম-মৃত্যু, বেড়ে ওঠা সবকিছুর জন্য সব সৃষ্টি আল্লাহতায়ালার কুদরতের মুখাপেক্ষী। তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। তিনি সব প্রয়োজন ও চাহিদার ঊর্ধ্বে। সব ধরনের লাভ-লোকসান, ক্ষয়-ক্ষতি, দোষত্রুটি থেকে তিনি মুক্ত বা পবিত্র।

‘আল্লাহু হাসিবুন’ বা আল্লাহ হিসাব গ্রহণকারী। আল্লাহতায়ালা কিয়ামতের দিন মানুষের সব কৃতকর্মের হিসাব নেবেন। হাশরের ময়দানে তিনিই হবেন একমাত্র বিচারক। সবাইকে সেদিন আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। পাপ-পুণ্যের হিসাব না দিয়ে সেদিন কেউই রেহাই পাবে না। আল্লাহতায়ালা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে সবারই হিসাব নেবেন। এজন্যই তিনি হাসিব বা সূক্ষ্ম হিসাব গ্রহণকারী।

আল্লাহতায়ালা মানব জাতিকে জীবনের চলার পথে সঠিক পথ নির্দেশনা দেওয়ার লক্ষ্যে যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন। তাঁর প্রেরিত নবী-রাসুলদের নিকট হেদায়েতের যে বাণী পাঠিয়েছেন, তাকে বলা হয় ওহী। যুগে যুগে প্রেরীত নবী-রাসুলদের মধ্য থেকে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হলেন বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সা:)। তাঁর উপর অবতারিত কিতাব কুরআনুল কারীম গোটা মানবজাতির জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। আর রাসুলে কারীম (সা:)-এর যবান নি:সৃত বাণীকে বলা হয় সুন্নাহ বা হাদীস। ওহী বলতে কুরআন ও সুন্নাহ দুটোকেই বুঝানো হয়ে থাকে। কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণের মধ্যেই নিহিত রয়েছে মানব জাতির জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ, মুক্তি ও সফলতা। তাই কুরআন-সূন্নাহর জ্ঞান অর্জন করা প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর উপর ফরজ করে দেওয়া হয়েছে। কারণ একমাত্র ওহীভিত্তিক জ্ঞানার্জনের মাধ্যমেই ইসলামী শরীয়ার হালাল-হারাম, করণীয় ও বর্জনীয় বিষয় জানা সম্ভব হতে পারে। কোন পথে চললে আমাদের জন্য রয়েছে কল্যাণ ও সফলতা, আর কোন পথে রয়েছে ব্যর্থতা এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত রয়েছে শাস্তি ও লাঞ্চনা, তা সুস্পষ্টরূপে বর্ণিত হয়েছে । অতএব দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তি ও মুক্তি পেতে হলে কুরআন-সুন্নাহর অনুসরণের বিকল্প কোন পথ নেই।

আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করা, আল্লাহর মনোনীত জীবন বিধানকে গ্রহণ করা, সেই অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করে আল্লাহ ও রাসুলের আদেশ-নিষেধ মেনে চলা, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁদের আনুগত্য এবং তাঁদের কাছে আত্মসমর্পণ করার নামই ইসলাম।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, 'নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট ইসলামই হচ্ছে একমাত্র মনোনীত দ্বীন (আনুগত্যের বিধান বা জীবন ব্যবস্থা)।' (সুরা আল ইমরান ০৩: ১৯)

মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক জীবন কেমন হবে ইসলাম তার নীতিমালা বর্ণনা করেছে। দুনিয়া-আখেরাতে মানুষের সুখ, শান্তি, সফলতা আল্লাহতায়ালা দ্বীনের মধ্যে রেখেছেন। দ্বীনকে আল্লাহতায়ালা দামি করেছেন। ইসলামে আল্লাহর দ্বীনের মধ্যে রয়েছে পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। দ্বীন মানুষের জন্য মহান আল্লাহর মনোনীত একমাত্র জীবনবিধান।

যে ব্যক্তি আল্লাহর মনোনীত এ জীবনব্যবস্থাকে গ্রহণ করে সেই হল একজন মুসলিম। আল্লাহর মনোনীত ইসলামের এ নীতিমালা ও মূল বিষয়সমূহকে অন্তরে বিশ্বাস করে মুখে স্বীকার করা এবং সে অনুযায়ী কর্মে পরিণত করার নাম ঈমান। যার মধ্যে এ ঈমান আছে সেই হল মুমিন।

মুসলমানের জন্য সর্বোত্তম সম্পদ ঈমান। ঈমানহীন কোনো আমলেরই মূল্য নেই।

আল্লাহতাআলা বলেন, সময়ের কসম! নিশ্চয়ই সব মানুষ ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত। শুধু তারা ব্যতিত; যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে। (সুরা আসর, আয়াত ১-২)

ঈমান অর্থ বিশ্বাস। ইসলামি শরীয়তের সকল বিষয়গুলো মনেপ্রাণে বিশ্বাস করা, মুখে স্বীকার করা ও মনে চলা বা কাজে প্রকাশ করার নাম ঈমান।

এক আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করা, তার প্রেরিত কিতাবসমূহ, নবী রাসুলগণ, ফেরেশতাগণ, মৃত্যু, কিয়ামত ও আখিরাত এবং তকদীর এর উপর বিশ্বাস করার নাম ঈমান।

ঈমান মূলত ছয়টি বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত। সেগুলো হলো: ১) আল্লাহ, ২) ফেরেশতা, ৩) আসমানী কিতাব, ৪) নবী-রাসুল, ৫) শেষ দিবস ও পুনরুত্থান এবং ৬) ভাগ্যের ভাল-মন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা।

ইসলামে প্রবেশের একমাত্র দরজা হলো কালিমায়ে তাইয়েবা (মহা পবিত্র বাক্য)। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ। অর্থ: আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের উপযুক্ত কেউ নেই, মুহাম্মদ সা. আল্লাহর রাসুল)। এই কালেম পাঠ করে ঈমান আনতে হবে।

যে ব্যক্তি খাঁটি দিলে কালিমার দুই অংশ তথা তাওহীদ ও রেসালাত স্বীকার করবে এবং কাজেকর্মে এর বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে, এমন খোশনসীব বান্দার জন্য বড় সুসংবাদ! নবীজী ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি খাঁটি মনে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’-এর স্বাক্ষ্য দেবে, আল্লাহ পাক তার উপর জাহান্নাম হারাম করে দেবেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৭)

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ সর্বোত্তম জিকির। যে জিকিরের বিনিময় শুধুই জান্নাত। এ তাওহিদের কালেমাই ঈমানের সর্বোচ্চ চূড়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কালেমা এ জিকিরের বিনিময় ঘোষণা করেছেন জান্নাত। 'যে ব্যক্তি ইখলাসের সঙ্গে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে; সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।' (ইবনে হিব্বান)

ঈমান আনার অনিবার্য অর্থ, বান্দা নিজেকে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করবে। মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহর পক্ষ থেকে হজরত জিবরাইল (আ.) ছদ্মবেশে এসে বিশ্ব নবী রাসুলুল্লাহ (সা.)কে জিজ্ঞেস করেন, ঈমান কাকে বলে? জবাবে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ঈমানের হাকিকত বা স্বরূপ হলো, তুমি বদ্ধমূলভাবে বিশ্বাস স্থাপন করবে আল্লাহ তায়ালার প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, আসমানি কিতাবগুলোর প্রতি, আল্লাহর নবী-রাসুলদের প্রতি, কেয়ামত দিবসের প্রতি এবং তাকদিরের প্রতি- অর্থাৎ এ কথা বিশ্বাস করা, ভালো-মন্দ সব কিছুই আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত হয়। (বুখারি, হাদিস: ৫০)

পৃথিবীতে মানুষকে যা কিছু দেওয়া হয় তার মধ্যে সর্বোত্তম জিনিস হলো, ‘আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান আনা। এই ঈমান তাকে সুউচ্চ মর্যাদায় আসীন করে। আল্লাহ প্রদত্ত এই নিয়ামত পেলে পূর্বে না পাওয়া কোনোকিছুতে তার আসে যায় না। কারণ সে সামগ্রিক কল্যাণ, সুবিশাল সফলতা ও সুমহান পূর্ণতা পেয়ে গেছে। আর এটা আল্লাহর বড় নিয়ামত। আল্লাহ তাআলা এই সম্পর্কে বলেন, এমনভাবেই আমি আমার আদেশে (দ্বীনের এ) রূহ তোমার কাছে অহী করে পাঠিয়েছি; (নতুবা) তুমি তো (আদৌ) জানতেই না ঈমান কী, কিন্তু একে আমি নূরে পরিণত করেছি, যা দ্বারা আমি আমার বান্দাদের মধ্য হতে যাকে ইচ্ছা (দ্বীনের) পথ দেখাই। (আশ-শূরা, আয়াত ৪২/৫২)

আল্লাহ ঈমানদারদের ঈমানের মাধ্যমেই বড় পরীক্ষা করে থাকেন। আর এই ঈমান কখনো শক্তিশালী হয়, কখনো দুর্বল হয়, কখনো বাড়ে, কখনোবা কমে। আবার কখনো নতুন ও পুরাতনও হয়ে থাকে। অতএব, মুমিনের কর্তব্য হলো যে, সে তার ঈমানের ব্যাপারে সজাগ ও সতর্ক থাকবে এবং ঈমানের প্রতি যত্নবান হবে। সাথে সাথে আনুগত্যের মাধ্যমে ঈমানে নতুনত্ব আনবে এবং অন্যায় কাজ পরিত্যাগ করার মাধ্যমে হ্রাস পাওয়া হতে ঈমানকে রক্ষা করবে। প্রবৃত্তি ও ফেতনা পরিহার করে চলবে। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ঈমান তোমাদের অভ্যন্তরে পুরাতন হয়, যেমন কাপড় পুরাতন হয়ে থাকে। অতএব, তোমরা (বেশি বেশি) কুরআন তেলাওয়াত করো, এতে তোমাদের অন্তরে ঈমান শানিত হবে।

ভালো কাজ করলে দুনিয়াতেই তাদের ঈমান বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। আর মৃত্যুর সময় তারাও প্রশান্তি ও সৌভাগ্য লাভ করেন। এ কারণেই সাহাবায়ে কেরামের জিজ্ঞাসার জবাবে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-‘তোমরা তোমাদের ঈমানকে নবায়ন কর। সাহাবায়ে কেরাম জানতে চাইলেন, ‘কীভাবে ঈমান নবায়ন করব? হে আল্লাহর রাসুল! তখন তিনি বললেন, বেশি বেশি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’পড়তে থাকা।’

আর ঈমানের সাথে যেন বাতিলের বাতাস প্রবাহিত না হতে পারে, যার ফলে মুমিনের মাঝে ঈমানের শূন্যতা পেয়ে বসে ও তার অন্তর হতে ঈমানের আলো মুছে যায়। আর এই জন্যই আল্লাহ ঈমানের কিছু উপায় বলে দিয়েছেন, যার মাধ্যমে ঈমান বৃদ্ধি ও শক্তিশালী হবে এবং ঈমান হতে অন্ধকার ও আবরণ দূরীভূত হবে। অতএব, যখন কোনো বান্দা নিজের সফলতা ও স্বাচ্ছন্দ্য, তখন তার জন্য ঈমান বৃদ্ধির উপায়গুলো জানা বিশেষ প্রয়োজন এবং তা নিজের প্রিয়তমা অপেক্ষাও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কেননা তা পবিত্রতা ও কল্যাণের উৎস।

ঈমান বৃদ্ধির প্রধান কিছু উপায় বা কারণসমূহ :

চিন্তা সহকারে কুরআন তেলাওয়াত করা

কুরআন হলো আল্লাহর কালাম, যার মাধ্যমে তাঁর নাম ও গুণাবলি জানা যায় এবং তা হতে শরীআত ও তার বিধি-বিধান উন্মোচিত হয়। যার দিকে অগ্রসর হলে ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং তা হতে মুখ ফিরিয়ে নিলে ক্ষতি ও পরিতাপের বিষয় হিসাবে পরিণত হয়। আল্লাহ বলেন, আমি এই বরকতময় কিতাব তোমার উপর অবতীর্ণ করেছি, যাতে করে তারা এর আয়াতগুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা করে এবং জ্ঞানীরা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে। (সুরা ছোয়াদ, আয়াত ২৯) এই কিতাবে মুমিনদের জন্য রয়েছে এক বিরাট প্রাপ্তি এবং মুমিনজীবনে রয়েছে এর সম্মানজনক প্রভাব। আল্লাহ তাআলা এ সম্পর্কে বলেন, আসল মুমিন তো তারাই যাদের নিকট আল্লাহর নাম স্মরণ করা হলে তাদের অন্তর প্রকম্পিত হয় এবং তাদের নিকট আল্লাহর আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করা হলে তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়। আর তারা তাদের রবের উপরই ভরসা রাখে। (সুরা আল-আনফাল, আয়াত ২)।

যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব পড়বে এবং তাঁর আয়াত নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে, নিঃসন্দেহে সে অনেক ইলম অর্জন করতে পারবে। আর এর মাধ্যমে তার ঈমান শক্তিশালী হবে ও বৃদ্ধি পাবে।

আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা

ঈমান বৃদ্ধির উপায়গুলোর মধ্যে অন্যতম বিষয়টি হলো, আল্লাহ সম্পর্কে ও তাঁর সুন্দরতম নাম ও সুউচ্চ গুণাবলী সম্পর্কে অবগত হওয়া। কেননা এগুলো সম্পর্কে জানলেই মানুষ আল্লাহমুখী হবে। যেমনটি আল্লাহ তাআলা বলেন, আল্লাহ তাআলার জন্যই সুন্দরতম নামসমূহ। অতএব, তোমরা সেসব ভালো নামেই তাঁকে ডাকো। যারা তাঁর নামসমূহের বিকৃতি ঘটায়, তাদের পরিত্যাগ করো। যা কিছু তারা করে তার প্রতিদান তাদের দেওয়া হবে। (সুরা আল-আ‘রাফ, আয়াত ১৮০)

আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনে বলেছেন, আর আল্লাহর জন্য রয়েছে সব উত্তম নাম। কাজেই সে নাম ধরেই তাঁকে ডাক। আর তাদেরকে বর্জন কর, যারা তাঁর নামের ব্যাপারে বাঁকা পথে চলে। তারা নিজেদের কৃতকর্মের ফল শীঘ্রই পাবে। (সুরা আল-আ’রাফ, আয়াত ১৮০)

পবিত্র কুরআন ও হাদিস মতে মহান আল্লাহর অনেকগুলো গুনবাচক নাম রয়েছে। আর এর সংখ্যা হল ৯৯টি। আল্লাহতায়ালার সুন্দর সুন্দর নামকে একত্রে বলা হয় আসমাউল হুসনা।

আল্লাহর ৯৯ নাম মুখস্থকারী জান্নাতে যাবে। যে ব্যক্তি সেগুলো সংরক্ষণ (মুখস্থ) করবে সে জান্নাতে যাবে। তিনিই আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোনো ১. ইলাহ বা উপাস্য নাই, তিনি ২. আর-রাহমানু (পরম দয়ালু), তিনি ৩. আর-রাহিমু (সীমাহীন করুণাময়), ৪. আল-মালিকু (স্বত্বাধিকারী), ৫. আল-কুদ্দুসু (মহাপবিত্র), ৬. আস-সালামু (শান্তিদাতা), ৭. আল-মুমিনু (নিরাপত্তাদাতা), ৮. আল-মুহাইমিনু (রক্ষণা-বেক্ষণকারী), ৯. আল-আজিজু (মহাপরাক্রমশালী), ১০. আল-জাব্বারু (মহাপ্রতাপশালী)

১১. আল-মুতাকাব্বিরু (মহাগৌরবের অধিকারী)। ১২. আল-খালিকু (সৃষ্টিকর্তা), ১৩. আল-কারিমু (উদ্ভাবনকারী), ১৪. আল-মুসাব্বিরু (আকৃতিদানকারী), ১৫. আল-গাফফারু (অসীম ক্ষমাশীল), ১৬. আল-কাহ্হারু (মহাপরাক্রমশালী), ১৭. আল-ওয়াহ্হাবু (মহান দাতা), ১৮. আর-রাজ্জাকু (রিজিকদাতা), ১৯. আল-ফাত্তাহু (মহা বিজয়দানকারী), ২০. আল-আলিমু (মহাজ্ঞানী)

২১. আল-ক্বাবিদু (হরণকারী), ২২. আল-বাসিতু (সম্প্রসারণকারী)। ২৩. আল-খাফিদু (অবনতকারী), ২৪. আর-রাফিয়ু (উন্নতকারী), ২৫. আল-মুয়িজু (মার্যাদাদানকারী), ২৬. আল-মুজিল্লু (অপমানকারী), ২৭. আস-সামিয়্যু (সর্বশ্রোতা), ২৮. আল-বাসিরু (সর্বদ্রষ্টা) ২৯. আল-হাসিবু (মহাবিচারক), ৩০. আল-আদিলু (ন্যায়পরায়ণ)

৩১. আল-লাতিফু (সুক্ষ্মদর্শী), ৩২. আল-খাবিরু (মহা সংবাদ রক্ষক), ৩৩. আল-হালিমু (মহা সহিঞ্চু), ৩৪. আল-আজিমু (মহান), ৩৫. আল-গাফুরু (ক্ষমাশীল), ৩৬. আশ-শাকুরু (গুণগ্রাহী), ৩৭. আল-আলিয়্যু (মহাউন্নত), ৩৮. আল-কাবিরু (সর্বাপেক্ষা বড়), ৩৯. আল-হাফিজু (মহারক্ষক), ৪০. আল-মুকিতু (মহান শক্তিদাতা)।

৪১. আল-হাসিবু (হিসাব গ্রহণকারী), ৪২. আল-জালিলু (মহা মহিমাময়), ৪৩. আল-কারিমু (মহা অনুগ্রহশীল), ৪৪. আর-রাকিবু (মহাপর্যবেক্ষণকারী), ৪৫. আল-মুজিবু (মহান কবুলকারী), ৪৬. আল-ওয়াসিয়ু (মহাবিস্তারকারী), ৪৭. আল-হাকিমু (মহাপ্রজ্ঞাময়), ৪৮. আল-ওয়াদুদু (প্রেমময় বন্ধু), ৪৯. আল-মাজিদু (মহাগৌরবান্বিত), ৫০. আল-বায়িসু (পুনরুত্থানকারী)

৫১. আশ-শাহিদু (সর্বদর্শী), ৫২. আল-হাক্কু (মহাসত্য), ৫৩. আল-ওয়াকিলু (মহান দায়িত্বশীল), ৫৪. আল-ক্বাজিয়্যু (মহাশক্তি ধর), ৫৫. আল-মাতিনু (চূড়ান্ত সুরক্ষিত ক্ষমতার অধিকারী), ৫৬. আল-ওয়ালিয়্যু (মহান অভিভাবক), ৫৭. আল-হামিদু (মহাপ্রশংসিত)। ৫৮. আল-মুহসিয়্যু (পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব গ্রহণকারী), ৫৯. আল-মুবদিয়ু (সূচনাকারী), ৬০. আল-মুঈদু (পুন:সৃষ্টি কারী)

৬১. আল-হাইয়্যু (চিরঞ্জীব), ৬২. আল-কাইয়ূমু (চিরস্থায়ী), ৬৩. আল-মুহইয়্যু (জীবনদানকারী), ৬৪. আল-মুমিতু (মৃত্যুদানকারী), ৬৫. আল-ওয়াজিদু (ইচ্ছাপূরণকারী), ৬৬. আল-মাজিদু (মহাগৌরবান্বিত), ৬৭. আল-ওয়াহিদু (একক সত্ত্বা), ৬৮. আস-সামাদু (অমুখাপেক্ষী), ৬৯. আল-ক্বাদিরু (সর্বশক্তিমান), ৭০. আল-মুক্তাদিরু (মহান কুদরতের অধিকারী)

৭১. আল-মুকাদ্দিমু (অগ্রসরকারী), ৭২. আল-মুয়াখখিরু (বিলম্বকারী), ৭৩. আল-আউয়ালু (অনাদি), ৭৪. আল-আখিরু (অনন্ত), ৭৫. আজ-জাহিরু (প্রকাশ্য), ৭৬. আল-বাতিনু (লুক্কায়িত)। ৭৭. আল-ওয়ালিয়্যু (মহান অধিপতি), ৭৮. আল-মুতাআলিয়ু (চিরউন্নত), ৭৯. আল-বার্রু (কল্যাণদাতা), ৮০. আত-তাউওয়াবু (মহান তওবা কবুলকারী)

৮১. আল-মুন্তাকিমু (প্রতিশোধ গ্রহণকারী), ৮২. আল-আফুউ (ক্ষমাকারী), ৮৩. আর-রাউফু (অতিশয় দয়ালু), ৮৪. মালিকুল মুলকি (সর্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী), ৮৫. জুল-জালালি ওয়াল ইকরামি (গৌরব ও মহত্ত্বের অধিকারী), ৮৬. আল-মুকসিতু (ন্যায়পরায়ণ), ৮৭. আল-জামিয়ু (একত্রকারী), ৮৮. আল-গানিয়্যু (ঐশ্বর্যের অধিকারী)। ৮৯. আল-মুগনিয়ু (ঐশ্বর্যদানকারী), ৯০. আল-মানিয়ু (প্রতিরোধকারী)

৯১. আদ-দারু (অনিষ্টকারী), ৯২. আন-নাফিয়ু (উপকারকারী), ৯৩. আন-নূরু (জ্যোতি), ৯৪. আল-হাদিয়ু (পথ প্রদর্শনকারী), ৯৫. আল-বাদিয়ু (সূচনাকারী), ৯৬. আল-বাকিয়ু (চিরবিরাজমান), ৯৭. আল-ওয়ারিসু (স্বত্বাধিকারী), ৯৮. আর-রাশিদু (সৎপথে পরিচালনাকারী), ৯৯. আস-সাবূরু (মহাধৈর্যশীল)।

জান্নাতে কেবল মুমিনরাই প্রবেশ করবে। আল্লাহর ৯৯ নাম মুখস্থ করা ঈমান লাভের প্রধান উৎস, যার দিকে ঈমান প্রত্যাবর্তন করে।

দ্বীনের সৌন্দর্য নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা

ঈমান বৃদ্ধির উপায়গুলোর মধ্যে হতে আরেকটি উপায় হলো— এই দ্বীনের সৌন্দর্য নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা ও এর শরীআতের পরিপূর্ণতার প্রতি অবগত হওয়া এবং আক্বীদা, আখলাক্ব, আদব, ব্যবস্থাপনা, উদ্দেশ্য ইত্যাদি সম্পর্কে অবগত হওয়া। কারণ তা শ্রেষ্ঠ বিচারক ও দয়াবান আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা শরীআত। ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, যদি তুমি দ্বীন ইসলাম ও শারীআতে মুহাম্মাদী নিয়ে গবেষণা কর তাহলে দেখতে পাবে কোনো বক্তব্য, বর্ণনা বা জ্ঞানীদের বাণী দ্বারা পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। যদিও এতে জ্ঞানী-গুণী ও বিজ্ঞজনদের সবার জ্ঞানকে একত্রিত করা হয়। তবুও তারা এ কথা বলতে বাধ্য হবে যে, এটা এক মহান কিতাব, যা অনির্বচনীয়; বরং তা নিজেই সত্যের সাক্ষী এবং তার ব্যাপারে সাক্ষ্য দেওয়া হয়। নিজেই তা প্রামাণ্য দলীল ও তার দ্বারা দলীল গ্রহণ করা হয় এবং কোনো নবী যদি তার স্বপক্ষে দলীল নিয়ে নাও আসতেন, তথাপি তা যে আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসা দলীল ও নিদর্শন তা প্রমাণিত হত। আর এসবকিছু হতে বুঝা যাচ্ছে যে, তার ইলম, হিকমত, রহমত, পুণ্যতা, মহানুভবতা, অদৃশ্য জানা, ইহকাল-পরকাল ইত্যাদির প্রতি। আর তিনিই তাঁর বান্দদের উপর নিয়ামত দান করে থাকেন।

ইহসান অবলম্বন করা

ইহসান মানুষের ঈমান বৃদ্ধি করে। নবীজি (সা.)-এর ভাষায় ইবাদতের ক্ষেত্রে ইহসান হলো, আপনি এমন ভাবে আল্লাহর ইবাদত করবেন, যেন আপনি তাঁকে দেখছেন, আর যদি আপনি তাঁকে দেখতে না পান তবে (মনে করবেন) তিনি আপনাকে দেখছেন। (বুখারি, হাদিস : ৫০)

ইহসানের আরেক অর্থ হলো, মানুষের সঙ্গে সদাচরণ করা। এটিও মানুষের ঈমান বৃদ্ধি করে, আল্লাহর প্রিয় করে। মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মাখলুকের প্রতি ইহসান করার নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায় পরায়ণতা, সদাচরণ ও আত্মীয়-স্বজনকে দানের নির্দেশ দেন এবং তিনি নিষেধ করেন অশ্লীলতা, অসৎ কাজ ও সীমা লঙ্ঘন করতে। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন, যাতে তোমাদের শিক্ষা গ্রহণ কর।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৯০)

বেশি বেশি সৎ কাজ সম্পাদন করা

সৎ আমল যতই বৃদ্ধি পাবে, ঈমান ততই বৃদ্ধি পাবে। এই সৎ আমল মুখের কথার মাধ্যমে হোক, কিংবা কাজের মাধ্যমে হোক যেমন যিকির-আযকার, নামায, রোযা এবং হজ্জ। এসব কিছুই ঈমান বৃদ্ধির মাধ্যম।

যার যত বেশী সৎ আমল রয়েছে, সে ব্যক্তি ঈমানের দিক থেকে তত বেশী শক্তিশালী এবং এর ফলশ্রুতিতে জান্নাতেও তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারাই সত্যিকারের ঈমানদার। এদের জন্যেই রয়েছে তাদের প্রতিপালকের নিকট উচ্চমর্যাদা। আরও রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা। (সুরা আনফাল, আয়াত ৪)।

আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ঈমানদার নর-নারীর গুণাবলি বর্ণনায় প্রথমেই সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ করার গুণটি উল্লেখ করেছেন। তাই এ কাজ করা আমাদের ঈমানের দাবি। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর ঈমানদার নর-নারী একে অপরের সহায়ক। তারা সৎ কাজে আদেশ করে এবং মন্দ কাজে নিষেধ করে, নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তার রাসুলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবনযাপন করে। তাদেরই ওপর আল্লাহ তায়ালা দয়া করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশীল, সুকৌশলী।’ (সুরা তাওবা, আয়াত ৭১)। এ দায়িত্ব পালনের জন্য মুসলমানদের ভেতর থেকে একটি দলকে প্রাথমিকভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। আল্লাহ তায়ালা এ সম্পর্কে বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা সৎ কর্মের প্রতি আহবান জানাবে, ভালো কাজের নির্দেশ দেবে এবং অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই হলো সফলকাম।’(সুরা আল ইমরান, আয়াত ১০৪)

আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, হে আমাদের প্রতিপালক! নিশ্চয় আমরা একজন আহ্বানকারীকে ঈমানের দিকে আহ্বান করতে শুনেছি (এই বলে) যে, ‘তোমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আন,’ সুতরাং আমরা ঈমান এনেছি। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করুন, আমাদের পাপসমূহ মোচন করুন এবং আমাদেরকে পুণ্যবানদের সঙ্গে মৃত্যু দান করুন। (সুরা আল ইমরান ৩:১৯৩)

আল্লাহ বলেন, মানুষ কি মনে করে যে, তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হবে (এজন্যে) যে, তারা বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ আর তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না। এবং অবশ্যই আমি তাদের পূর্ববর্তীদেরকে পরীক্ষা করেছিলাম, এবং আল্লাহ্ অবশ্যই জেনে নিবেন (স্পষ্ট করবেন) যারা সত্য বলেছে তাদেরকে এবং তিনি অবশ্যই জেনে নিবেন মিথ্যাবাদীদেরকে। (সুরা ‘আনকাবূত, আয়াত ২-৩)

হযরত আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সা. ইরশাদ করেন, ঈমানের সত্তরটির বেশি শাখা-প্রশাখা রয়েছে। অন্মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম হলো এ কথার স্বীকৃতি দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনও উপাস্য নেই। এর সর্বনিম্ন শাখা হলো রাস্তা হতে কষ্টদায়ক জিনিস দূরে সরিয়ে দেওয়া। আর লজ্জাশীলতা ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। (সহীহ্ বুখারী: ৯, সহীহ্ মুসলিম:৩৫)

হযরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সা. ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা নীরবতা অবলম্বন করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন প্রতিবেশীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন মেহমানদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে। (সহীহ্ মুসলিম:৪৭)

হযরত আনাস রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সা. ইরশাদ করেন, যার মধ্যে তিনটি বৈশিষ্ট্য থাকবে সে ওই বৈশিষ্ট্যগুলো কারণে ঈমানের স্বাদ অনুভব করতে পারবে। সে বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে-

ক. যারা নিকট আল্লাহ্ ও তার রাসূল সা. অন্য সবকিছু হতে সর্বাধিক প্রিয় হবে।

খ. যে ব্যক্তি কোনও বান্দাকে কেবল আল্লাহ্ তা‘আলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ভালোবাসবে।

গ. যে ব্যক্তি আল্লাহর অনুগ্রহে কুফরি হতে মুক্তি লাভের পর পুনরায় কুফরিতে ফিরে যাওয়াকে এভাবে অপছন্দ করে, যেভাবে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে অপছন্দ করে। (সহীহ্ বুখারী: ২১, সহীহ্ মুসলিম:৪৩)

আল্লাহর পথে দাওয়াত দেওয়া

ঈমান দৃঢ় করার অন্যতম মাধ্যম হলো, মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান করা। এতে নিজের মধ্যেও ইবাদতের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে, ঈমান বৃদ্ধি পাবে। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে তাঁর পথে আহ্বানকারীদের প্রশংসা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তার চেয়ে কার কথা উত্তম, যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, অবশ্যই আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সুরা হা-মিম সাজদা, আয়াত : ৩৩)

ঈমান কমে যাওয়ার কারণসমূহ

প্রথম কারণ: আল্লাহর নাম ও গুণাবলী সম্পর্কে অজ্ঞ থাকা ঈমান কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। কেননা আল্লাহর নাম ও গুণাবলি সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান যতই কমবে, ঈমানও তত কমতে থাকবে।

দ্বিতীয় কারণ: সৃষ্টিতে ও শরীয়তে আল্লাহর আয়াত সম্পর্কে গবেষণা করা থেকে বিরত থাকা। কেননা আল্লাহর সৃষ্টিতে চিন্তা-ভাবনা না করা ঈমানের ঘাটতি হওয়ার অন্যতম কারণ।

তৃতীয় কারণ: গুনাহের কাজে লিপ্ত হওয়া। কেননা গুনাহের কাজ করলে অন্তরে এবং ঈমানের উপর বিরাট প্রভাব পড়ে। এই জন্যই নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ব্যভিচারী ঈমান থাকা অবস্থায় ব্যভিচারে লিপ্ত হতে পারে না।

চতুর্থ কারণ: সৎ আমল না করা ঈমান হ্রাস পাওয়ার অন্যতম কারণ। কিন্তু যদি বিনা কারণে কোন ওয়াজিব কাজ ছেড়ে দেয় তাহলে ঈমান কমার সাথে সাথে সে শাস্তির সম্মুখীন হবে। অবশ্য গ্রহণযোগ্য কারণে ওয়াজিব ছেড়ে দিলে অথবা ওয়াজিব নয় এমন কাজ ছেড়ে দিলে ঈমানের ঘাটতি হবে, কিন্তু শাস্তির সম্মুখীন হবে না।

ঈমানের আলোর উপর যারা প্রকৃতপক্ষে প্রতিষ্ঠিত রয়েছে তারা আদম শ্রেষ্ঠতম সন্তান। যাদের মধ্যে ঈমানের মৌলিক দিকগুলো রয়েছে, যা তাদের ঈমানের আলোর উপর পরিচালিত করছে। আর যদি তাদের নিকট জ্ঞানবিরোধী কিছু পেশ করা হয়, তাহলে তাদের চোখে তা ঘোরতর অন্ধকার রাতের মতো মনে হয়।

পরকালের কল্যাণকামী মানুষের জন্য আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ ঈমান তথা ইয়াক্বিন হলো বান্দার বিশেষ সম্পদ। যারা এ সম্পদে সমৃদ্ধ হয়, তারাই প্রকৃত মুমিন। তাঁরাই দুনিয়া এবং আখিরাতে কামিয়াবী লাভ করে। কুরআন হাদিসের জান্নাতের সুখবরও তাদের জন্য নির্ধারিত। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ঈমান, ইয়াকিন এবং দ্বীন ইসলামকে বুঝার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে দিন।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে উচ্চ মর্যাদা দান করবেন। (সুরা মুজাদালাহ, আয়াত ১১)

ঢাকাটাইমস/১৩জানুয়ারি/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ইসলাম বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :