বাবাকে ‘রেপিস্ট’ লেখা সানজানার মৃত্যু আত্মহত্যায়, তদন্ত গুছিয়ে এনেছে পুলিশ
বাবাকে নিয়ে স্পর্শকাতর ‘সুইসাইড নোট’ লেখা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সানজানা মোসাদ্দিকার মৃত্যুর মামলায় বেশ অগ্রগতি হয়েছে। তালাকের পরও মায়ের সঙ্গে বাবার সম্পর্ক মেনে নিতে না পারা, পড়ালেখার খরচ না পাওয়াসহ পারিবারিক নানা সমস্যায় সানজানা আত্মহত্যা করেছে বলে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে।
গত বছরের ২৭ আগস্ট ঢাকার দক্ষিণখানের মোল্লারটেক এলাকায় ১০তলা ভবনের নিচ থেকে সানজানাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। প্রথমে উত্তরার একটি হাসপাতালে পরে সেখান থেকে পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হলেও তাকে বাঁচানো যায়নি।
সানজানার মৃত্যুর পর প্রকাশ্যে আসে বাবাকে অভিযুক্ত করে পাওয়া একটি চিরকুট। সেখানে বাবাকে ‘রেপিস্ট’, যার কাছে ‘কাজের মেয়েও রেহাই পায়নি’ বলে লেখা ছিল। সানজানার মৃত্যুর ঘটনায় তার মায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হন বাবা শাহীন। বর্তমানে তিনি জামিনে রয়েছেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মামলাটির তদন্ত বেশ এগিয়েছে। সানজানার মৃত্যুর পর যে চিরকুটটি পাওয়া গিয়েছিল সেটি তার নিজেরই লেখা। ডিএনএ রিপোর্ট এবং পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পেলেই আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করবে পুলিশ।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের সপ্তম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ছিলেন সানজানা। তার মৃত্যু নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠতে থাকে। বিশেষ করে চিরকুট নিয়ে তৈরি হয় ধোঁয়াশা। সানাজানাকে হত্যা করার অভিযোগও তোলেন সহপাঠীরা।
সেই চিরকুটটি সানজানার নিজের হাতে লেখা কি না? সেই অভিযুক্ত বাবা এখন কোথায়? মামলায় এখন পর্যন্ত কী ধরনের তথ্য-উপাত্ত পেল পুলিশ? এসব বিষয়ে খোঁজ নিয়েছে ঢাকা টাইমস।
দক্ষিণখান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রেজিয়া খাতুন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সানজানার লিখে যাওয়া চিরকুটের বিশেষজ্ঞ মত এসেছে। সেটি সানজানার নিজের হাতেই লেখা। ডিএনএ এবং পোস্টমর্টেম প্রতিবেদন পেলেই মামলার কার্যক্রম শেষ করে দেওয়া হবে।
সানজানা আত্মহত্যার কারণের বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে এসআই রেজিয়া খাতুন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে শাহীন (সানজানার বাবা) জানিয়েছেন ঘটনার দিন সকালে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছিল।’
‘আর চিঠিতেও তো লেখা আছে, সানজানার বাবা রেপিস্ট। কাজের মেয়েকেও ছাড় দেয়নি। আর মায়ের সঙ্গে তো বাবার তালাক হয়েছিল। এরপরও বাসায় শাহীন আসা যাওয়া করত; যা মেয়ে হিসেবে মেনে নিতে পারেনি সানজানা। সব মিলিয়েই সে আত্মহত্যা করেছে।’
সানজানার মৃত্যুর পর সহপাঠীরা তাকে হত্যার অভিযোগ তুলেছিল। তবে তদন্তে আত্মহত্যার বিষয়টি উঠে এসেছে। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের ঊধ্বর্তন এক কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘যেখান থেকে সানজানার মরদেহ উদ্ধার হয় সেটি নরম জায়গা। আর পিঠ উল্টো দিক করে পড়ায় রক্তাক্ত হয়নি।’
পারিবারিক কলহের কারণে ‘মানসিক অসুস্থতা’
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা যায়, মায়ের সঙ্গে বাবার বিচ্ছেদ থেকে শুরু করে পারিবারিক নানা সমস্যাও মানসিকভাবে সানজানাকে বিপর্যস্ত করেছিল। বিশেষ করে বাবা-মায়ের মধ্যে বনিবনা না হওয়া, বাবার দ্বিতীয় বিয়ে, অভাব-অনটন এবং পড়াশোনার খরচ ঠিক মতো না পাওয়া—তাকে কঠিন বাস্তবতার মুখে ফেলেছিল।
চিরকুটে কেন ‘রেপিস্ট বাবা’ লেখা?
সানজানার মৃত্যুর পর প্রকাশ্যে আসা চিরকুটে ‘রেপিস্ট বাবা’ লেখার বিষয়ে জানতে চেয়েছে ঢাকা টাইমস। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পরও তার বাসায় আসা-যাওয়া ছিল শাহীনের। বাবা-মায়ের এমন সম্পর্ক মেয়ে হিসেবে মানতে পারেননি সানজানা। কারণ, সানজানার ইচ্ছার কারণেই তার মা ডিভোর্স নিয়েছিলেন। এসব কারণেই চিরকুটে বাবাকে ‘রেপিস্ট' ও ‘অত্যাচারী’ বলে লিখেছেন সানজানা।
(ঢাকাটাইমস/১৯জানুয়ারি/এসএস/ডিএম)