গুলিস্তান আন্ডারপাসে অপরিকল্পিত পাতাল মার্কেট অতি অগ্নিঝুঁকিতে 

আহম্মেদ মুন্নী, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ১৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:০৬| আপডেট : ১৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৭
অ- অ+

এক সময় রাজধানীর সড়কজুড়ে ছিল ঘোড়ার গাড়ি। ফলে রাস্তা পারাপারের সময় ঘোড়ার খুরের আঘাতে আহত হতেন পথচারীরা। কারণ চলতি ঘোড়ার লাগাম টেনে মানুষকে রক্ষা করা এতটা সহজ ছিল না। এরপর জনসাধারণকে সুরক্ষা দিতে ঢাকার গুলিস্তানে চার রাস্তার মোড়ে একটি পথচারী আন্ডারপাস নির্মাণ করা হয়। এর নাম দেওয়া হয় ‘গুলিস্তান আন্ডারপাস’। মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামের পাশে অবস্থিত এই আন্ডারপাস ১৯৯৭ সালে নির্মাণ করা হয় তিন কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে। সময়ের ব্যবধানে এই আন্ডারপাসটিতেই গড়ে উঠে অপরিকল্পিত মার্কেট।

অযত্নে-অবহেলায় গুলিস্তান আন্ডারপাসে ময়লা-ধুলো আর পর্যাপ্ত সড়ক বাতি না থাকায় পথচারীর আনাগোনা কমে আসে। এদিকে ঘোড়ার গাড়িরও ঘটে প্রায় বিলুপ্তি। ফলে হকাররা ছোট ছোট ব্যাটারিচালিত লাইট নিয়ে সেখানে শুরু করে নানা রকম ব্যবসা। ক্রমেই আবারও লোকসমাগম বাড়ে। আশপাশের ইলেকট্রনিক মার্কেটের লোকজন নিজেদের ব্যবসার বিস্তারে সেখানে অস্থায়ী দোকান শুরু করে ২০০৭ সালে। সেসময় ঢাকার মেয়র ছিলেন সাদেক হোসেন খোকা। ঢাকার অস্থায়ী জমি কাজে লাগানোর প্রকল্পে বঙ্গমার্কেটসহ তখনকার এই পাতাল সড়ককে পাতাল মার্কেট করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর ফলে ২০০৯ সালে এই আন্ডারপাস ‘পাতাল মার্কেট’ নামে পরিচিতি পায়।

এখন পর্যন্ত এই আন্ডারপাসটি মার্কেট হিসেবেই ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমানে ১০৪টি দোকান বিশিষ্ট এই মার্কেটে মোবাইল ফোন বেচাকেনা এবং মেরামতের কাজ করা হয়। আন্ডারপাসে মার্কেট বসানোর ফলে জনসাধারণ আন্ডারপাসটি ব্যবহারে নিরুৎসাহিত বোধ করলেও ফোনের পার্টস খুচরা বিক্রির জন্য ঢাকায় প্রধান মার্কেট এটি। এই আন্ডারপাস শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। আন্ডারপাসের ভেতরের দোকানের কারণে পথচারীদের চলাচলের পথটি সংকুচিত হয়ে গেছে।

আন্ডারপাসের মার্কেটটি প্রতিদিন রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এরপর দোকানগুলোর নিরাপত্তায় গুরুত্ব দিয়ে আন্ডারপাসের সব গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই মার্কেট দেখভাল করতে গড়ে উঠেছে ব্যবসায়ী মালিক সমিতি। আর নামকরণ করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু স্কয়ার পাতাল সড়ক মার্কেট’।

এই মার্কেটে প্রবেশ ও বের হওয়ার আটটি ফটক রয়েছে। সিঁড়ি থেকে আন্ডারপাসে ঢোকার সময় আলো-বায়ু চলাচলের জন্য ১০ ফিট বাই ৬ ফিট দুটো জানালা সদৃশ জায়গা রয়েছে। তবে পুরো মার্কেটটির বা আন্ডারপাসের নেই একটিও চুঙ্গা বিশেষ কিছু। ফলে আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিস পৌঁছাতে বা ধোঁয়া বের হওয়ার নেই কোনো বিকল্প পথ। এমন পরিস্থিতিতে অগ্নি‍ঝুঁকির কথা জানিয়ে গত ৭ মার্চ ‘অতীব জরুরি নোটিশ’ দেয় ফায়ার সার্ভিস।

ফায়ার সার্ভিসের নোটিশে গুরুত্ব দেওয়া বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে— পাতাল মার্কেটে আগুন লাগলে যাতায়াতের র‌্যাম্প নেই, অনুমোদিত কোনো নকশায় এটি নির্মিত নয়, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশের পথ নেই, অকুপেন্সি সার্টিফিকেট (স্থাপনার ব্যবহার সনদ) নেই, বিশেষ ফায়ার লিফট নেই। এছাড়া মার্কেটের মধ্যে জরুরি বের হওয়ার সিঁড়ি বা রাস্তা চিহ্নিত করা নেই, জেনারেটর ও সাব স্টেশন মার্কেটের পূর্ব পাশে থাকলেও নেই জেনারেটর ও সাব স্টেশন রুমের ফায়ার এক্সটিংগুইশার, জরুরি পানির পাম্প বসানোর ব্যবস্থা নেই, পানির রিজার্ভ ট্যাংক নেই, মার্কেটটিতে ভেন্টিলেশন বা আলো-বাতাসের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই।

ফায়ার সার্ভিসের নোটিশের তথ্য অনুযায়ী, পাতাল মার্কেটে স্মোক ডিটেকটর বা হিট ডিটেক্টর এলার্ম সিস্টেম নেই, ফায়ার এলার্ম সিস্টেম নেই, সেন্ট্রাল এসি হলেও ডাস্ট লাইনে ফায়ার স্টোপার নেই। খোলা বাতি ও মশার কয়েল ব্যবহৃত হয় মার্কেটে, সার্ভার রুমে অটো সাপ্রেশন নেই। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স থেকে ফায়ার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ৬০০ দোকান মালিক ও কর্মচারীর মধ্যে মাত্র ২০ জন।

(ঢাকাটাইমস/১৫এপ্রিল/এএম/আরআর/কেএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
এপ্রিলের ২৯ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ২৬০ কোটি ৭৬ লাখ ডলার
নির্ধারিত সময়ের দুই মাস আগেই সব দেনা পরিশোধ করল পেট্রোবাংলা
ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব: অর্থ উপদেষ্টা
উপদেষ্টাদের সঙ্গে পুলিশের মতবিনিময়, বিভিন্ন প্রস্তাব বাস্তবায়নের আশ্বাস
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা