তিন মাস ধরে বেতন নেই সিরাজুল ইসলাম মেডিকেলে, ঈদ নিয়ে দুশ্চিন্তা

রাজধানীর মালিবাগে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল লিমিটেডের চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তিন মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। সামনে ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে তাদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে।
হাসপাতালের কর্মকর্তারাও বলছেন, সবারই কয়েক মাসের বেতন বকেয়া আছে। আর প্রাইভেট হাসপাতালে এমনটা হয়ে থাকে। বিষয়টা নিয়ে হাসপাতালের প্রশাসন (এডমিন) শাখার কর্মকর্তারাও বিরক্ত।
বেতন বকেয়া নিয়ে বিশেষ করে চরম বিপাকে পড়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীরা। তারা এ বিষয় কথা বলতেও ভয় পান। কর্মচারীরা বলছেন, প্রতি বছরই এই সমস্যাটা হয়। আর আমাদের তো বেতন কম। তাও যদি আবার বকেয়া থাকে! সামনের ঈদের কেনাকাটাই হবে না।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালে সরেজমিনে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটির একাধিক কর্মকর্তা, কর্মচারী ও দায়িত্বরত নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে বলেন, হাসাপাতালের সব স্টাফেরই বেতন বকেয়া আছে। সবারই ২/৩ মাস করে বকেয়া। ঈদেও বেতন পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
এই কর্মকর্তা বলেন, প্রতি মাসে ১০-১২ দিন করে বেতন পিছিয়ে দেওয়া হয়। এতে অটো বেতন বকেয়া হয়ে যায়। এটা নিয়ে সবাই ক্ষুব্ধ। এর আগেও বেতন বকেয়া পড়েছিল, তা পরিশোধ করার পর এখন আবার বকেয়া পড়েছে। আমি ১০-১২ দিন আগে জানুয়ারি মাসের বেতন পেয়েছি। এখনও অনেকেই জানুয়ারির বেতন পায়নি। শুনেছি, তাদের দিচ্ছে। হাসপাতালে রোগী কম থাকায় এমনটা হয়েছে বলে ধারণা তার।
হাসপাতালের কল সেন্টার বিভাগের কর্মরতদের সঙ্গে এ বিষয় কথা বলতে চাইলে তারা ইশারায় জানান, বেতন হয়নি কয়েক মাসের। পিছনে সিসি ক্যামেরা দেখিয়ে বলেন, এখানে ভয়েসও রেকর্ড হয়। ভয়ে তারা কথা বলতে চাননি।
দায়িত্বরত কয়েকজন সিকিউরিটি গার্ড ঢাকা টাইমসকে বলেন, দুই মাসের বেতন নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে। এটা তারা প্রতি বছরই করে। ঈদ এলেই করে। ঈদে বেতন দিলে বোনাস দেয় না। আবার বোনাস দিলে বেতন দেয় না। আমাদের তো বেতন কম। যা দিছে তাতে ঘর ভাড়া আর বাজারেই শেষ। ঈদের মার্কেট আর হবে না। এখনো ২ মাস বকেয়া।
‘কয় মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে’ এমন প্রশ্নে বিব্রত হয়ে হাসপাতালের এডমিন বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমারটা আমি পাচ্ছি, অন্যদেরটা জানি না।’ তবে তার কথায় ছিল শঙ্কার ছাপ। কথা না বলতে পারলে হয়তো তার জন্য একটু ভালো হতো। বলতে গিয়ে বিব্রত হচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত বললেন, ‘আমারটা আমি পাচ্ছি, অন্যদের খবর জানি না।’
হাসপাতালের এডমিন শাখার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘প্রাইভেট হাসপাতালে এমন হয়ে থাকে। সবারই পেন্ডিং আছে কয়েক মাসের। তবে এর পেছনের কারণ নিয়ে কথা বলতে চাননি। বলেছেন এ নিয়ে না লিখতেও।’
এ বিষয়ে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার (এডমিন এ্যান্ড ফাইনান্স) মো. কামরুজ্জামান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কয়েক মাস একটু গ্যাপ পড়ে গেছে। তবে আমরা দিয়ে দিচ্ছি। বড় প্রতিষ্ঠান হলে এমন একটু হয়। বেতন গতকালও (বুধবার) দিছি, আজও দেবো। ধীরে ধীরে হয়ে যাচ্ছে। রোগী কম থাকলে এই সংকটগুলো হয়ে থাকে।’
বেতন বকেয়া পড়ার বিষয় জানতে হাসপাতালের এডিশনাল এমডি সুমনা ইমলামের মুঠোফোনে পাঁচ থেকে সাতবার কল দিয়েও পাওয়া যায়নি। এছাড়া তার হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি।
(ঢাকাটাইমস/০৪এপ্রিল/টিআই/এসআইএস/কেএম)

মন্তব্য করুন