পি কে হালদারের ক্রোকড সম্পদ বেহাতের বিষয়ে যা বললেন ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের এমডি

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০২৩, ১৮:৪৯ | প্রকাশিত : ২১ জানুয়ারি ২০২৩, ১৭:১২

বেসরকারি ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে লোপাটের সঙ্গে জড়িত প্রশান্ত কুমার হালদারের (পিকে হালদার)বেশ কিছু সম্পদ বেহাত হওয়ার বিষয়ে দুদকের চিঠির জবাব একটি ব্যাখ্যা দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এণ্ড ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের ভারপ্রাপ্ত এমডি।

ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ময়মনসিংহের ভালুকায় পি কে হালদারের কুমিরের খামারের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। কোনো কুমির চুরি হয়নি। এছাড়া কুমিরের ফার্মের পাশে অবস্থিত মুরগীর ফার্ম থেকে লাখ লাখ টাকার মুরগীও সরানো হয়নি। তবে পি কে হালদারের ব্যক্তিগত সম্পদের কোনো ক্ষতিসাধন হয়েছে কি না জানা নেই।

দুদকের কাছে তথ্য রয়েছে চারটি লিজিং কোম্পানি থেকে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা লুটের সঙ্গে জড়িত পি কে হালদারের বেশ কিছু সম্পদ বেহাত হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি ঢাকা টাইমসও সেই তথ্য উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

পি কে হালদারের অবৈধ সম্পদের তালিকায় ময়মনসিংহের ভালুকায় ৯ বিঘা জমির ওপর মুরগির খামার রয়েছে। এই সম্পদ আদালতের নির্দেশে ক্রোক অবস্থায় আছে। এমনকি সেই সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কয়েকজনকে দায়িত্বও দেয়া আছে।

সূত্র জানায়, তারা ওই ফার্মের সব মুরগি ৩০ লাখ টাকায় বিক্রি করে টাকা নিয়ে গেছে। বিষয়টি তদন্তকারী সংস্থা দুদক জানতে পেরে লুটপাট বন্ধে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের এমডিকে চিঠি দিয়ে এ সংক্রান্ত তথ্য জানতে চায়।১৭ জানুয়ারির মধ্যে তথ্য সরবরাহ করতে দুদক থেকে জানানো হয়।

সূত্র জানায়, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং গত বৃহষ্পতিবার দুদকের চিঠির জবাব দেয়। তাতে তারা পুরো বিষয়টি এক অর্থে অস্বীকার করে।

জানা গেছে, পি কে হালদারের লুটপাটের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আদালত থেকে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হলেও সেই কমিটি অনেকটা নিষ্ক্রিয়। তাদের নজরদারি কম থাকায় পিকে হালদারের সম্পদ বেহাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং কর্তৃপক্ষ ঘটনা অস্বীকার করলেও সময় বলে দেবে তার সম্পদ কারা বেহাতের সঙ্গে জড়িত।

পি কে হালদারের ৯ বিঘা জমির ওপর গড়ে ওঠা মুরগির ফার্ম থেকে ৩০ লাখ টাকার মুরগি বিক্রি করে কারা টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তা শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। এমনকি জড়িতদের একটি তালিকাও প্রণয়ন করা হচ্ছে।

এর অংশ হিসেবে গত রবিবার দুদকের তদন্ত টিমের পক্ষ থেকে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এন্ড ফাইনান্স সার্ভিসেস লিমিটেডের ভারপ্রাপ্ত এমডির কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

‘রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ’ সংক্রান্ত অভিযোগটি এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।

লিজিং কোম্পানির কর্মকর্তা কর্মচারিদের বেতন ভাতাসহ অন্যান্য খরচ সামলাতে গিয়ে কিছু সম্পদ বিক্রি করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে এর পেছনে রাঘব বোয়ালদের হাত থাকায় দুদক এখনই কোনো শক্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তবে বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানকাজও শেষ হচ্ছে না।

দুদকের উপপরিচালক ও তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান আনোয়ার প্রধান পি কে হালদার ও তার চক্রের সমুদয় দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করছেন। তিনিই চিঠি পার্ঠিয়ে বলেছিলেন, দুদক কর্তৃক পি কে হালদারের সমস্ত সম্পত্তি এবং স্থাপনার ওপর আদালতের ক্রোক/ফ্রিজ আদেশ থাকা করার সত্ত্বেও কিছু সম্পত্তি বেহাত হওয়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সে কারণে অনুসন্ধানের স্বার্থে কিছু তথ্য জানা দরকার।

এর মধ্যে ভালুকায় অবস্থিত রেপটাইলস ফার্মের পাশে পি কে হালদারের সম্পত্তিতে অবস্থিত মুরগির ফার্মের আট হাজার মুরগির বর্তমান কী অবস্থা তা জানতে চায় দুদক।

চিঠিতে বলা হয়, এটা কি আদালত বা ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের বোর্ডের আদেশে বিক্রি করা হয়েছে কিনা, বিক্রি হয়ে থাকলে এর সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে কে কে জড়িত তার তথ্য দরকার। তাদের পূর্ণাঙ্গ পরিচয়, বিক্রি লব্ধ অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে কিনা বা কী অবস্থায় আছে তার বিবরণও জানাতে হবে।

এতে আরও জানতে চাওয়া হয়, পি কে হালদারের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ‘রেপটাইল ফার্মে’র ভেতরে কোনো রেপটাইল ফার্মের মালিক পক্ষ ব্যতিত তৃতীয়পক্ষ কর্তৃক ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের বর্তমান বোর্ড কর্তৃক কোনো স্থাপনা নির্মাণ বা কনস্ট্রাকশনের কোনো অনুমোদন আছে কি না। প্রতিষ্ঠানের কুমির বিক্রির কোনো অনুমোদন বা আদেশ বোর্ড বা কোনো আদালত কর্তৃক সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ আছে কি না। থাকলে তার কপি দুদককে সরবরাহ করতে হবে। আর না থাকলে উক্ত স্থানে প্রায় পঞ্চাশ লাখ টাকা ব্যয়ে স্থাপনা কীভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে বা এ সংক্রান্ত অর্থ কে দিল তার সুনির্দিষ্ট রেকর্ডপত্র সরবরাহ করতে হবে।

পি কে হালদার বর্তমানে ভারতের কারাগারে বন্দি রয়েছেন। তিনি এবং তার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দুদক এ পর্যন্ত ৫২টি মামলা করেছে। এরমধ্যে ৩৮টি মামলা রয়েছে পি কে হালদারের বিরুদ্ধেই। ১৪ জনের বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ ও পাচারের অভিযোগে দুদকের করা মামলার বিচারকাজ চলছে এখন।

দুদকের একজন মহাপরিচালক ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমরা পি কে হালদার ও তার সমস্ত চক্রটির বিরুদ্ধে জোরদার তদন্ত করছি। এই সময়ে তাদের যেসব সম্পদ তদন্তের আওতায় এসেছে তা ক্রোক অবস্থায় রয়েছে। সেই সম্পদের ওপর কাদের নজর পড়ল, কারা লোপাট করে নেয়ার রাস্তা করেছেন তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।

(ঢাকাটাইমস/২১জানুয়ারি/এমএম/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অপরাধ ও দুর্নীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অপরাধ ও দুর্নীতি এর সর্বশেষ

বেইলি রোডে আগুন: দুই দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে ‘কাচ্চি ভাই’র মালিক

৪২০ টাকা মূল্যের ওমানি মুদ্রা লাখে বিক্রি, গ্রেপ্তার ৪

রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার ৩১

রাজধানীতে র‌্যাবের হাতে ১২ চাঁদাবাজ গ্রেপ্তার

দুই দফায় রিমান্ড শেষে কারাগারে মিল্টন সমাদ্দার

এনআইডি প্রকল্পের কর্মকর্তা দিতেন তথ্য, কার্ড বানিয়ে আয় কোটি টাকা

রিমান্ডে অধিকাংশ অভিযোগই স্বীকার করেছে মিল্টন: ডিবি 

পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু: যাত্রাবাড়ীর ওসি ফরমানের বিরুদ্ধে মামলা

বেইলি রোডের আগুন: কাচ্চি ভাইয়ের মালিক সিরাজ গ্রেপ্তার, দুই দিনের রিমান্ডে

নাপিত-হকার মিলে বানায় খাওয়ার স্যালাইন, ৪০ শতাংশ কমিশনে কিনে ডিলাররা

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :