সৌদিতে বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যু, লাশের অপেক্ষায় স্বজনরা

পরিবার নিয়ে সুখে থাকার আশায় শ্রমিক ভিসায় সৌদি আরবের জেদ্দায় গিয়ে বাংলাদেশি যুবক তফাজ্জল হোসেন (৪২) মৃত্যুবরণ করেছেন। এ ঘটনার প্রায় তিন দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো তার লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার কোন প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। এ নিয়ে এই প্রবাসী যুবকের পরিবার ও স্বজনদের মাঝে আহাজারি সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় এই প্রবাসী শ্রমিকের লাশ দেশে আনতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন শোকাহত পরিবারের সদস্যরা।
রবিবার দুপুর দুইটায় মৃত তফাজ্জল হোসেনের ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত শুক্রবার (১০ মার্চ) বাংলাদেশ সময় রাত ৩টায় সৌদি আরবের জেদ্দা শহরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এই রেমিটেন্সযোদ্ধা মৃত্যুবরণ করেন বলে জানান তিনি।তফাজ্জল হোসেন ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ভাংনামারী ইউনিয়নের ভোলার আলগী গ্রামের আসীম সরকার বাড়ির আশ্রাফ আলীর ছেলে।
মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রীসহ দুই ছেলে সন্তান রেখে গেছেন। এর মধ্যে বড় ছেলে সারোয়ার হোসেন (১৩) স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং ছোট ছেলের বয়স পাঁচ বছর।
তফাজ্জলের ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন আরও জানান, বাবা নিম্নবিত্ত কৃষক। মা-বাবা, চার ভাই ও দুই বোন নিয়ে আট সদস্যের সংসারে অভাব আমাদের নিত্যসঙ্গী। এ কারণেই পরিবারের সুখের সন্ধানে এর আগেও আমার ভাই (তফাজ্জল হোসেন) মালয়েশিয়ায় শ্রমিক ভিসায় ৯ বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে ফিরে এসেছিল। এরপর তার উর্পাজনের টাকায় ভালোই চলছিল জীবন।
কিন্তু বিগত বছর দুই আগে হঠাৎ প্রায় ছয় লাখ টাকা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে তফাজ্জল হোসেন। এতে তার মাথায় চিন্তার ভাঁজ পড়লে গত ১৭ মাস আগে আবারও সুখের আশায় শ্রমিক ভিসা নিয়ে সে সৌদি আরব গিয়েছিল। সেখানে গিয়ে দালালদের কথামত ভালো কাজ না পাওয়ায় কষ্টে কাটছিল তার দিন। এতে সে আরও দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তবে বিগত কিছুদিন আগে অনেক চেষ্টায় সেখানের ‘ইছম’ নামক একটি কোম্পানিতে শ্রমিকের কাজ পায়।
কিন্তু প্রতিনিয়ত পরিবার ও ঋনের দুঃচিন্তায় তার এই সুখ স্থায়ী হয়নি। গত ১৮ দিন আগে হঠাৎ তফাজ্জল হোসেন স্টোক করে অসুস্থ হয়ে পড়লে সহকর্মীরা তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করে। তখন খবর আসে তফাজ্জল মারা গেছে। কিন্তু আল্লাহর রহমতে সেদিন বেঁচে গেলেও সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফৌজিয়া নাজমিন। তিনি বলেন, এই ঘটনাটির খবর জানা নেই। এখনই খোঁজ নেওয়া হবে। তবে মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ নেওয়া হবে।
(ঢাকাটাইমস/১২মার্চ/এলএ)

মন্তব্য করুন