দেবীদ্বারে ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ: প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করতে যেয়ে পুলিশসহ আহত ৫০

দেবীদ্বার (কুমিল্লা) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৫ মার্চ ২০২৩, ২৩:৪৩

দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে বিদ্যালয়ের আঙিনায় ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে প্রধান শিক্ষককে অবরুদ্ধ করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। অভিযুক্ত মো. মোকতল হোসেন কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে এই শিক্ষকের ব্যবহৃত মোটর সাইকেল ও তার মেয়ের জামাইর আরেকটি মোটর সাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

খবর পেয়ে বুধবার বিকালে দেবীদ্বার সার্কেল এএসপি আমিরুল্লাহ ও দেবীদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কমল কৃষ্ণ ধরের নেতুত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে যেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়। এ সময় পুলিশসহ অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে এবং রাতে স্কুল ক্যাম্পাসের সমস্ত বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বিপুল সংখ্যক ফাঁকা গুলি ছুড়ে। এতে অন্তত ১৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধ মারাত্মক আহত আটজনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। অন্যদিকে বিক্ষুব্ধ জনতা চকলেট বোমা বিস্ফোরণে এলাকা আতঙ্কিত করে তোলে এবং বিদ্যালয়ের দরজা জানালা ভাঙচুর করে।

রাত পৌনে ৯টায় কুমিল্লা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান বিপুল সংখ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে ফাঁকা গুলি ও লাঠিপেটা করে বিক্ষুব্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে। প্রধান শিক্ষকসহ পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে আনার পথে বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া করে। এসময় ডিবি পুলিশসহ তিনজন পুলিশ সদস্যকে আটক করে রাখার খবর পাওয়া যায়। রাত ৯টায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ আটক পুলিশ সদস্যদের উদ্ধারে এলাকায় অভিযান অব্যাহত রেখেছে বলে জানা যায়।

এর আগে বুধবার দুপুরে শ্লীলতাহানীর ঘটনার পর ছাত্রছাত্রীরা ওই শিক্ষকের ওপর চড়াও হয়। পরে তাকে প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী। অবরুদ্ধ প্রধান শিক্ষক দেবীদ্বার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করছেন।

শ্লীলতাহানির ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার (১৫ মার্চ) দুপুর ১২টায় প্রতিষ্ঠানের একটি কক্ষে। এই ঘটনায় ছাত্রীর সহপাঠিরাসহ তাকে নিয়ে বাড়ি যেয়ে তার বাবার কাছে ঘটনা বর্ণনা দেয়। এদিকে ঘটনাটি জানাজানির পর বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী প্রধান শিক্ষকের কার্যালয় ঘেরাও করে অবরুদ্ধ করে রাখে।

পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির, বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিসহ অন্যান্য সদস্য, শিক্ষক ও এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। পরে বিক্ষুব্ধ জনতা প্রধান শিক্ষককে স্কুল মাঠে এনে বিচারের দাবি জানায়। এসময় পুলিশের উপস্থিতিতে বিদ্যালয়ের দরজা-জানালা এবং প্রধান ফটক ভাঙচুরের চেষ্টা করে।

প্রধান শিক্ষককে রক্ষায় তারপক্ষে বহিরাগত কিছু লোকজন এসে ছাত্রদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ হামলায় অন্তত ২৫-৩০জন শিক্ষার্থী আহত হয়। আহত, নাঈম খন্দকার, মো. নাঈম ও জিহাদুল ইসলাম জানায় প্রধান শিক্ষকের ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়। আহত শিক্ষার্থীদের দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। আহতরা সবাই ওই বিদ্যালয়ের নবম ও দশম শ্রেনীর ছাত্র।

এদিকে রাতে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি বর্ষণে আরো অন্তত ১৫-২০ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহতরা হলেন, সিয়াম (১৫), মিনহাজ (১৭), অলি (১৬), আকাশ (১৬) আরিফুল ইসলাম (২৬), সাব্বির (১৮) ও হৃদয় (১৭)। এদের প্রত্যেকেকে দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পেরণ করা হয়েছে।

পুলিশ, স্থানীয় ও শিক্ষার্থীরা জানায়, ওই প্রধান শিক্ষক বিভিন্ন অনৈতিক প্রস্তাব দিতেন ছাত্রীদের। ক্ষুব্ধ হয়ে আজ সকালে তাঁকে এক ছাত্রীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় অবরুদ্ধ করে রাখে ছাত্র-ছাত্রীরা। পরে প্রধান শিক্ষকের অপসারণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে তাকে অবরুদ্ধ করে তার ও তার মেয়ের জামাইর ব্যবহৃত মোটর সাইকেল দু’টিতে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মস‚চি পালন করে বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। এ সময় প্রধান শিক্ষক মোকতল হোসেনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি, দুর্ব্যবহারসহ একাধিক অভিযোগ তোলে তারা। খবর পেয়ে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ও অভিভাবকরাও বর্তমান আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে কর্মসসূচিতে অংশ নেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষকের ওপর চড়াও হয়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাতে অতিরিক্ত পুলিশ এনে রাত পৌনে ৯টায় পরিস্থিতি শান্ত করে তাকে উদ্ধার করার চেষ্টা করে।

ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক মোকতল হোসেন বলেন, ‘আমি চক্রান্তের শিকার।’

দেবীদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কমল কৃষ্ণ ধর, দেবীদ্বার সার্কেল এএসপি আমিরুল্লাহ, কুমিল্লা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নানকে একাধিকবার ফোন করেও ফোনে পাওয়া যায়নি। তবে রাত ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া অব্যাহত আছে।

(ঢাকাটাইমস/১৫মার্চ/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :