ঢাকা টাইমসকে র‌্যাব ডিজি: সরকারি মেশিনারিজের সামনে সন্ত্রাসী গ্রুপ টিকে থাকতে পারে না

সিরাজুম সালেকীন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৮ মার্চ ২০২৩, ২১:১২ | প্রকাশিত : ১৮ মার্চ ২০২৩, ২০:১০

পার্বত্য জেলা বান্দরবানে গজিয়ে ওঠা সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট তথা কেএনএফ পাহাড়কে অশান্ত করতে পারবে না বলেই মনে করেন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন।

ঢাকা টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে র‌্যাব ডিজি বলেন, ‘পাহাড়কে যারাই অশান্ত করার চেষ্টা করুক না কেন সরকারি অস্ত্রের সামনে টিকে থাকতে পারবে না। কেএনএফ কিংবা নতুন জঙ্গি সংগঠন যেই হোক, তাদের বিরুদ্ধে যা যা করার দরকার তাই আমরা করব।’

পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট র‌্যাবের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সংস্থাটির ডিজি দেশের জনগণকে অভিনন্দন জানান। বলেন, ‘র‌্যাবের প্রতি মানুষের আস্থা, ভালোবাসা রয়েছে। মানুষ র‌্যাবকে তাদের নিরাপত্তার প্রতীক মনে করে।’

২৬ মার্চ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী হলেও এবার রোজার কারণে তা এগিয়ে এনে ১৯ মার্চ পালন করবে র‌্যাব। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে র‌্যাব সদরদপ্তরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এম খুরশীদ হোসেন বলেন, ‘র‌্যাব এলিট ফোর্স। সমস্ত বাহিনী থেকে চৌকস সদস্যদের নিয়ে র‌্যাব গঠন করা হয়েছে। র‌্যাবের মূলমন্ত্র হলো বাংলাদেশ আমার অহংকার। এই মূলতন্ত্র আমরা ধারণ করি, লালন করি, পালন করি।’

‘আমরা দেশের মানুষের জন্য কাজ করি। এজন্য র‌্যাবের প্রতি মানুষের আস্থা, ভালোবাসা এবং মানুষ র‌্যাবকে নিরাপত্তার প্রতীক মনে করে। আমরা অপশক্তি, সন্ত্রাসী, জঙ্গি, মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে আতঙ্কের প্রতীক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চাই।’

চাকরি জীবনে ডিএমপিতে বেশ কয়েকটি পদে চাকরি করেছেন এম খুরশীদ হোসেন। নায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার তদারকি কর্মকর্তা ছিলেন তিনি। সেসময় খুরশীদ হোসেন আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে গ্রেপ্তার করেছিলেন।

২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর র‌্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পান খুরশীদ হোসেন। এবছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি গ্রেড-১ পদে পদোন্নতি পান।

র‌্যাবকে নিয়ে তার পরিকল্পনা তুলে ধরে র‌্যাব ডিজি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমি এই বাহিনীকে আরও স্মার্ট বাহিনী হিসেবে কাজ করছি। কারণ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের কাজ করছেন। আমি চাই, র‌্যাব স্মার্ট বাহিনী হিসেবে কাজ করবে।’

‘র‌্যাবপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর জঙ্গি ইস্যুতে আপনাদের প্রশ্নের উত্তরে মনের অজান্তে বলে ফেলেছিলাম—র‌্যাব জঙ্গিদের থেকে অনেক স্মার্ট। দেশবাসীর সহযোগিতাই আমরা চাই, র‌্যাব ঠিক স্মার্ট ফোর্স হিসেবে যেকোনো নিরাপত্তা, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান, জঙ্গি বিরোধী অভিযান এবং যেকোনো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দুর্যোগে র‌্যাব সাধারণ মানুষের পাশে থেকে কাজ করে যাবে।’

র‌্যাব প্রতিষ্ঠার পর সংস্থার মূলমন্ত্র অনুযায়ী ১৮ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন এম খুরশীদে হোসেন। বলেন, ‘দেশের যেকোনো দুর্যোগে, নিরাপত্তা-আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং মানবিক সহায়তায় র‌্যাব কাজ করছে।’

‘আমরা দেশের মানুষের জন্য এই কাজগুলো পেশাদারিত্বের সঙ্গে এবং মানবাধিকার সম্মুন্নত রেখে আরও বেশি কাজ করতে চাই। বর্তমানে যে গণতান্ত্রিক ধারা, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে, তার নিরিখে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা যেন সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারি, সেজন্য সকলের সহযোগিতা দরকার।’

প্রতিষ্ঠার পর দেড় যুগের পথ পরিক্রমায় র‌্যাব সফল বলেই মনে করেন সংস্থাটির নবম ডিজি এম খুরশীদ হোসেন। র‌্যাবের প্রতি মানুষের আস্থা ভরসার বিষয়টি উদাহরণ হিসেবে তুলে তার নিজেরই কয়েকটি ঘটনা টেনে।

র‌্যাব ডিজি বলেন, ‘আমি মনে করি র‌্যাব সব দিক থেকে সফল। আমি এখানে আসার পর দেখছি, মানুষ যেকোনো সমস্যায় র‌্যাবের কাছে আসে। আমি নিজেও প্রতিদিন অন্তত ২৫ জনের সমস্যা নিয়ে সরাসরি কথা বলি।’

‘আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, র‌্যাবের প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে। আমরা আইনের মধ্যে থেকে মানুষের পাশে থাকি, র‌্যাব বেআইনি কোনো কাজ করি না। এজন্যই মনে করি র‌্যাব ভালো কাজ করছে।’

থানা পুলিশের প্রতি আস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাব ডিজি বলেন, ‘আস্থা ভিন্ন জিনিস। মানুষ আসলে যে আশা করে যাচ্ছে ওখানে সেই ধরণের সাহায্য পাচ্ছে না। তবে একথাও মনে রাখতে হবে, থানা ছাড়া তো চলা সম্ভব না। কারণ মামলা বা জিডি করতে থানায় যেতে হবে।’

‘আমি পুলিশি কর্মজীবনে জেলার পুলিশ সুপার, ডিআইজি বা যে পদেই কাজ করেছি, যারাই আমার কাছে বিপদে এসেছে তাদেরকে আমি ফেরত দেইনি। পাবলিক হেয়ারিংটা আমি নিজে দেখেছি। একটা মানুষ অনেক দূর থেকে আশা করে আসে। তাই অন্তত তার সমস্যাটা শুনি।’

‘কারণ, আমার অফিস, ডিসির অফিস, এসপির অফিস এগুলো পাবলিক অফিস। আমরা তো জনগণের ট্যাক্সের টাকায় চলি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেকথা প্রায় বলেন, আমরা শাসক হতে চাই না, সেবক হতে চাই।’

র‌্যাব ডিজি বলেন, ‘তাই আমাদের কাছে যে অসহায় মানুষগুলো আসেন, তারা যদি আমাদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন, তারা স্বস্তি পান। আবার যে কাজ র‌্যাব করতে পারবে না সেবিষয়েও পরামর্শ দিই যে, থানায় বা কোর্টে যান।’

আলাপচারিতায় র‌্যাবের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা নিয়েও কথা বলেন সংস্থাটির ডিজি। সবশেষ বাংলাদেশ সফর করে ফেরা মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর র‌্যাব নিয়ে প্রশংসাও উদ্ধৃত করেন তিনি।

এম খুরশীদ হোসেন বলেন, ‘আমেরিকা র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর দেশটির দক্ষিণ এশিয়া এবং মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ ঘুরে গিয়েছেন। তিনি র‌্যাবকে নিয়ে প্রশংসা করেছেন। একসময় র‌্যাবকে নিয়ে কথা উঠত কিন্তু এখন সেগুলো নেই।’

‘সব সেক্টরেই ভালো মন্দ মানুষ থাকবে। আমরা প্রতিটি সদস্যকে প্রায় বলি কোনো ব্যাক্তির দায় বিভাগ বা বাহিনী বহন করবে না। তবে মাঝে মাঝে আমাদের লোক বিপদগামী হয়। হয়ত নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে এগুলো করে।’

‘তবে আমি কাজে দুটো জিনিস ফলো করি। ডিসিপ্লিনের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স। ওয়েল ফেয়ার শতভাগ। তবে কোনো সদস্য অন্যায় করবে সে পার পাবে না। তার দায় তাকেই বহন করতে হবে।’

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে র‌্যাব মানবিক কারণেও কিভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ায় তার উদাহরণও তুলে ধরেন এম খুরশীদ হোসেন। সম্প্রতি ময়মনসিংহ থেকে মুমুর্ষু অবস্থায় র‌্যাব-১৪ কার্যালয়ে কর্মরত এক সুইপারের বাচ্চাকে র‌্যাবের হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় চিকিৎসা দিতে আনা হয়।

এ বিষয়ে র‌্যাব ডিজি বলেন, ‘আমার এডিজি অপারেশন ফোন করে জানান, বাচ্চাটার এত খারাপ যে তাকে দ্রুত সিএমএইচে আনতে হবে। তবে অ্যাম্বুলেন্সে সড়ক পথ দিয়ে আনা যাবে না। এজন্য হেলিকপ্টার দরকার। সঙ্গে সঙ্গে আমি হেলিকপ্টার পাঠিয়ে দিয়েছি। আমরা মানবিক কাজগুলো এভাবেই করি।’

শান্ত পাহাড়কে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী সংগঠন অশান্ত করছে। এ ব্যাপারে র‌্যাব অভিযানও চালাচ্ছে। পাহাড়ে র‌্যাবের ভূমিকার বিষয়ে এম খুরশীদ হোসেন বলেন, ‘পাহাড়ে ট্রেনিং নেওয়া প্রায় অর্ধশতাধিক জঙ্গি সদস্যকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। এই জঙ্গিরা পাহাড়ে গিয়ে কেএনএফের সহায়তায় সেখানে প্রশিক্ষণ নিত।’

‘ওই এলাকাটা মিয়ানমার ও মিজোরাম সীমান্তঘেঁষা। যেকোনো অপরাধ করে তারা সহজেই যেকোনো সীমান্তে প্রবেশ করছে। সেখানকার ভৌগলিক কারণে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কোনো ক্যাম্প সেখানে নেই।’

‘আমরা তাদের অনেককে গ্রেপ্তার করেছি। তারাও তো চেষ্টা করবে আমাদের আক্রমণ করার। আমরা সেখানে নিরাপত্তা এবং অভিযান জোরদার করব। এটা নিয়ে দেশবাসীর হতাশ হবার কিছু নেই। আমরা নতুন করে অন্য প্লানে অভিযান শুরু করব।’

র‌্যাব ডিজি বলেন, ‘হঠাৎ করেই ঘরছাড়াদের আমরা যখন খুঁজতে বের হলাম তখন নতুন জঙ্গি সংগঠন সম্পর্কে জানতে পারলাম জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, ‘পাহাড়ে তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে কেএনএফ।

‘এর আগে তো আমরা জানতাম না কেএনএফ তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য সফল হবে না। গর্ভমেন্ট মেশিনারিজের সামনে কোনো সন্ত্রাসী গ্রুপ টিকে থাকতে পারে এটা আমি বিশ্বাস করি না। ওদের (কেএনএফ) বিরুদ্ধে যা যা করার আমরা করব।’

র‌্যাব ডিজি জানান, কেএনএফকে অর্থায়নে বিদেশ থেকে কিছু লোক জঙ্গিদের সাপোর্ট দিচ্ছে। র‌্যাব এসব বিষয়ে কাজ করছে তিনি বলেন, ‘ইংল্যান্ড থেকে টাকা আসছে। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক কোনো দেশ থেকে টাকা আসার তথ্য মেলেনি। ইউকে থেকে পেয়েছি। এসব বিষয় আমাদের নলেজে আছে, গোয়েন্দারা কাজ করছে। এসব বিষয় নিয়ে র‌্যাব চিন্তিত না। আমরা যখন ভালো সাপোর্ট পাবো তখন কেউ টিকতে পারবে না।’

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও অপরাধ ঘটছে। এটা নিয়ে র‌্যাবের পরিকল্পনা কি জানতে চাইলে এলিট ফোর্সটির মহাপরিচালক বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের অপরাধ একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আমরা অচিরেই ক্যাম্পগুলোতে যৌথ অভিযান পরিচালনা করব। কাউকে আমাদের দেশের অভ্যন্তরে অরাজকতা পরিস্থিতি তৈরির সুযোগ দেওয়া হবে না।’

এই পর্যায়ে এসে র‌্যাবের সামনে কোনো চ্যালেঞ্জ দেখছেন না সংস্থাটির ডিজি। বলেন, আমরা যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত। র‌্যাব কাজ করে দেশ, দেশের মানুষের জন্য। আমরা দেশের জন্য কাজ করি। মানবাধিকার ঠিক রেখে কাজ করব। আমরা মানবাধিকার ঠিক রেখে জঙ্গিবাদ মোকাবেলা কবর। আমরা মানবাধিকারকে বুকে ধারণ করে এগিয়ে যাবো।

(ঢাকাটাইমস/১৮মার্চ/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :