বাউফলে ইউপি সদস্যদের বিরুদ্ধে জেলেদের চাল কম দেওয়ার অভিযোগ

বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৩ মার্চ ২০২৩, ১৪:২৭

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় জেলেদের জন্য বরাদ্ধকৃত চাল নির্ধারিত ওজনের চেয়ে কম দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বুধবার উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের পাশে ধানদী কামিল মাদ্রাসা মাঠে চাল বিতরণকালে এ ঘটনা ঘটে।

অভিযোগ রয়েছে, পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম মহসিন ব্যবসার কাজে পরিষদে অনিয়মিত থাকায় প্যানেল চেয়ারম্যান মো. আলম হোসেন, চেয়ারম্যানের আপন ভাই আহসান হাবিব মিন্টুসহ কয়েকজন ইউপি সদস্য এমন অনিয়ম করেছেন।

উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে জাটকা আহরণে বিরত থাকা দরিদ্র জেলেদের জন্য “মানবিক কর্মসূচী”র আওতায় নাজিরপুর ইউনিয়নের ৬৮৩ জন নিবন্ধনকৃত জেলেদের মাঝে ৪০ কেজি হারে ২৭.৩২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। বুধবার নাজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের পাশে ধানদী কামিল মাদ্রাসা মাঠে ওই চাল বিতরণ করছিলেন ইউপি সদস্যরা। এসময় দেখা গেছে, জেলেদের মাঝে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে। পাশেই বসে আছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ কর্মকর্তা ও ইউপি সচিব। সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে বিব্রত হন ইউপি সচিব আবু বকর।

চাল নিয়ে ফেরার পথে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের জেলে মো. রেজাউল করিম (৪৩) বলেন, আগে ৪০ কেজি করে চাল পেতাম। এবার দিয়েছে ৩০ কেজি। তবে বস্তা দেখে মনে হয় ৩০ কেজিরও কম। পরিষদের পাশে এক দোকানে ওজন দিয়ে দেখা যায় ওই বস্তায় চাল রয়েছে ২৩কেজি ৯০০ গ্রাম।

৬নং ওয়ার্ডের জেলে আ. রহমান, মো. শাজাহান সরদার ও ফারুক মৃধা চাল নিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলেন। তাদের সঙ্গে কথা হলে তারও জানান, আগে ৪০ কেজি করে চাল দেওয়া হত, এবার ৩০ কেজি করে দেওয়া হয়েছে।

৮নং ওয়ার্ডের জেলে মো. জাকির হোসেন ও ২ নং ওয়ার্ডের জেলে মো. ফিরোজ জানান, তাদেরকেও ৩০কেজি করে চাল দিয়েছেন।

একটি সূত্র জানায়, ব্যবসার কাজে ইউপি চেয়ারম্যান এস.এম মহসিন দেশের বাহিরে অবস্থান করছেন। চেয়ারম্যানের অনপুস্থিতিতে চাল বিরতণ নিয়ে চেয়ারম্যানের ভাই ইউপি সদস্য আহসান হাবিব মিন্টু সকল ইউপি সদস্যদের নিয়ে গোপন বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে জেলেদের মাঝে ৪০ কেজি চালের পরিবর্তে ৩০ কেজি করে চাল বিরতণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

হিসেব করে দেখা গেছে, ৬৮৩ জন নিবন্ধনকৃত জেলেদের ১০ কেজি করে চাল কম দিলে তাতে প্রায় ৭মেট্রিক টন চাল অবশিষ্ঠ থাকে। যার বর্তমান বাজার মূল্য আড়াই লাখ টাকার বেশি। ওই গোপন বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অবশিষ্ট চাল কালোবাজারে বিক্রি করে সেই টাকা ইউপি সদস্যরা খচর হিসেবে ভাগবাটোয়ারা করে নিবেন।

জেলেদের চাল বিতরণে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যানের ভাই ইউপি সদস্য আহসান হাবিব মিন্টু সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করে বলেন, এবারের জন্য মাফ করেন। সংবাদ প্রকাশ করার দরকার নেই।

প্যানেল চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য মো. আলম হোসেন চাল কম দেওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ৬৮৩ জনের নামে চাল বরাদ্দ পাইছি। জেলে সংখ্য ৭৫৩ জন। তাই সকল জেলেদের মধ্যে ৩০ কেজি করে চাল দিয়ে সমন্বয় করা হয়েছে। ৭৫৩ জন জেলেকে ৩০ কেজি করে চাল দিলেও প্রায় ৫মেট্রিক টন চাল অবশিষ্ট থাকে। যার বাজার মূল্য প্রায় দুই লাখ টাকা। অবশিষ্ট সেই চাল কোথায় জানতে চাইলে প্যানেল চেয়ারম্যান আলম হোসেন কোনো উত্তর দিতে পারেননি।

নাজিরপুর ইউনিয়নের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, বরাদ্দ কম, তাই বাকি জেলেদের সঙ্গে সমন্বয় করে চাল দিতে হয়েছে। এজন্য চালও কম দেওয়া হয়েছে।

একই কথা বলেন ইউপি সচিব মো. আবু বকরও।

উপজেলা সিনিয়র সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল আমিন বলেন, নিবন্ধনকৃত প্রতি জেলেদের যেভাবে বরাদ্দ দেওয়া সেভাবেই চাল বিরতণ করতে হবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৩মার্চ/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :