২ মাসের চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরলেন শুটিং হাউজে বিস্ফোরণে দগ্ধ অভিনেত্রী শারমিন আঁখি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৮ মার্চ ২০২৩, ১৫:৫৮

দীর্ঘ দুমাস হাসপাতালের বিছানায় যুদ্ধ করে অবশেষে বাড়ি ফিরলেন শুটিং হাউজে বিস্ফোরণে দগ্ধ হওয়া মডেল অভিনেত্রী শারমিন আঁখি। ফেরার আগে সংবাদ সম্মেলন করে সেই দিনের অনাকাঙ্খিত ঘটনাটি নিয়ে কথা বলেছেন সাংবাদিকদের সঙ্গে।

আঁখি বলেন, ‘সামনের ৬ মাস আমার জন্য আরও অনেক ভয়ংকর। কারণ, আগামী ৬ মাস আমি শরীরে রোদ লাগাতে পারব না। লাইটের আলো থেকেও নিজেকে দূরে রাখতে হবে। নিজেকে পুরোপুরি অন্ধকার ঘরে বন্দি রাখতে হবে।’

‘এই ৬ মাস অনেক নিয়মের মধ্যে চলতে হবে। খারাপ লাগে না যে তা নয়, তবুও মানতে হবে। দুঃখের পরে যেমন সুখ আছে, তেমন খারাপের পরে ভালো আছে। সেই সুদিনের অপেক্ষায় আমি।’

গত ২৮ জানুয়ারি মিরপুরের একটি শুটিং বাড়ির মেকআপ রুমে বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হন ছোট পর্দার এই অভিনেত্রী। সেদিনই তাকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।

সেই বিস্ফোরণে আঁখির হাত, পা, চুলসহ শরীরের ৩৫ ভাগ পুড়ে যায়। এর মধ্যে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় তাকে প্লাজমা দিতে হয়েছিল।

শারমিন আঁখি বলেন, ‘যখন আইসিইউতে ভর্তি হই তখন এক ধরনের আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম যে, আমি হয়ত আর ফিরতে পারব না। ডাক্তাররাও আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। নিঃশ্বাস চলে যাওয়া কি জিনিস সেটা আমি উপলব্ধি করেছি। দীর্ঘশ্বাস ফেলে তখন নিজেকে নিজে সাহস দিতাম। আমাকে ফিরতে হবে।’

‘যখন আমি শুনতে পাই আমাকে ঘিরে ভুল তথ্য ছড়িয়ে গেছে তখন আমাকে এটা আঘাত করেছে যে, আমি মারা গেলে একটা অভিযোগ নিয়ে যেতে হবে। আমি এভাবে মরতে চাই না। আমার একটা ক্লিন ইমেজ আছে। আমি নিয়মের মধ্যে জীবন-যাপন করে আসছি। সোজাসাপ্টা কথা বলতে পছন্দ করি। আমার জীবনটা আমার মতো করে সাজিয়েছি। সেই সাহস নিয়েই পন করেছি আমাকে বাঁচতেই হবে। সেই সাহস নিয়েই আজ আপনাদের মুখোমুখি’–বলেন আঁখি।

প্রশ্ন রেখে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘কে এই পোড়া হাত-মুখ দেখাবে বলুন? কেউ দেখাবে না। কোনো নায়িকা মেকআপ ছাড়া বের হতে চায় না। তাহলে আমি কেন পোড়া চেহারা নিয়ে সামনে এসেছি? কারণ, আমাকে নিয়ে কুৎসা রটানো হয়েছে। কিভাবে ঘটনাটি ঘটেছে সে বিষয়টি না এসে কি করেছি সবার মনে এই একটাই প্রশ্ন।’

‘আসলে আমাদের গায়ে গন্ধ বেশি। যার কারণে এরকম ছড়ানো হয়েছে। আজ নুসরাত ইমরোজ তিশা হলে এটা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলত না। আমি বলেই এ নিয়ে অনেক প্রশ্ন। ২০ ভাগ বার্ন যেখানে ঝুঁকিপূর্ণ সেখানে আমার ৩৫ ভাগ। এখন বিষয়টা যতটা সহজ ভাবে বলছি তখন ততটা সহজ ছিল না। শুধু এটুকুই বলব সামনে আমার যুদ্ধটা অনেক কঠিন।’

তবুও সামনে এগিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে আঁখি বলেন, ‘আমি সবসময় সবকিছু ফেইস করতে পছন্দ করি। সেটা ভালো-মন্দ যাই হোক না কেন। আমি বিশ্বাস করি সামনে আমার ভালো কিছু আছে যার জন্য আমাকে যুদ্ধ করতে হবে। তেমনই আমার সামনে আরও ভালো কিছু অপেক্ষা করছে। সামনের ৬ মাসের যুদ্ধটা যদি ঠিকঠাক মতো করতে পারি তাহলে নিশ্চয় ভালো কিছু করতে পারব।’

একটা বাড়ি পুরোপুরি প্রস্তুত না করেই শুটিংয়ের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এখনো হচ্ছে। নিরাপত্তা নিয়ে ভাবা উচিত কিনা? অভিনেত্রী বলেন, ‘এই ঘটনার পরেও যদি নিরাপত্তা নিয়ে না ভাবা হয় তাহলে এটা আমাদের ব্যর্থতা যে, আমাদের শিল্পীদের নিরাপত্তা দিতে পারছি না। সংগঠনগুলো ব্যর্থতার পরিচয় দেবে।’

ডিরেক্টর গিল্ড ও অভিনয় শিল্পী সংঘকে এখনই সোচ্চার হওয়া উচিত উল্লেখ করে আঁখি বলেন, ‘আমার লিখিত অভিযোগ দেওয়ার আগে তাদের ভূমিকা নেয়া উচিত ছিল। এখনই এর বিরুদ্ধে সোচ্চার না হলে আগামীতে আরও খারাপ কিছু ঘটতে পারে। আমাদের শিল্পীদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেব। আমরা আমাদের শিল্পীদের জানের নিরাপত্তা দিতে পারছি না। শুধু ওই বাড়িটি নয়, সবার স্বার্থে প্রতিটি বাড়ির মালিকদের সহানুভূতি হওয়ার অনুরোধ করব।’

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার দিনটি স্মরণ করে আঁখি বলেন, ‘যখন ঘটনাটি ঘটে দুই হাত সামনে দিয়ে নিজের চেহারাটা কিছুটা রক্ষা করার চেষ্টা করেছি। আমার হাতের চামড়া সব পুড়ে যায়। মুহূর্তেই সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল। কিছু বুঝে উঠতে পারিনি। বার্নের যন্ত্রণা অসহনীয়। যখন ঘটনাটি মনে হয় তখন বিষয়টি সামনে ভাসে। এগুলো বলতে ভালো লাগে না। খুব খারাপ লাগে। এটা কাউকে বোঝাতে পারব না।’

এসময় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘আঁখি দগ্ধ অবস্থায় আমাদের এখানে ভর্তি হন। তার শরীরের ৩৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। এটি ছিল আশঙ্কাজনক। ১৫ শতাংশ দগ্ধ হলে তাকে আমরা শঙ্কামুক্ত বলতে পারি না। সেখানে তিনি তো ৩৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছেন, সঙ্গে ইনহ্যালেশন বার্ন ছিল। আমাদের ডাক্তারদের তত্ত্বাবধানে দুই মাস চিকিৎসা শেষে আমরা তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দিচ্ছি।’

আঁখির স্বামী রাহাত কবির অভিযোগ করে বলেন, ‘দুইমাস পেরিয়ে গেলেও ওই শুটিং হাউজের কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। এত বড় একটি ঘটনা ঘটে গেল...তাদের কী উচিত ছিল না আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা? সবাই শুধু বলছেন স্মোকিং থেকে ঘটনাটি ঘটেছে। আসলে স্মোকিং থেকে ঘটনাটি ঘটার কথা নয়। কারণ সে তখন এখানে স্মোকিং করেনি। এখানে অন্য কোনো ঘটনা ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সেই কারণ উদঘাটন করা উচিত ছিল। আঁখি এখন মোটামুটি সুস্থ। আঁখি নিজেই তাদের যে সংগঠন আছে, তাদের মাধ্যমে সবকিছুর জবাব চাইবেন ও আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।’

উল্লেখ্য, গত ২৮ জানুয়ারি মিরপুরের পল্লবীর সাড়ে এগারোর একটি বাসায় শুটিং চলাকালে দুর্ঘটনার শিকার হন ছোট পর্দার অভিনেত্রী শারমিন আঁখি। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে শরীরের ৩৫ শতাংশ পুড়ে যায় তার।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা আঁখির মঞ্চে যাত্রা শুরু ‘অরিন্দম নাট্য সম্প্রদায়’র মধ্য দিয়ে। এই দলের নিয়মিত প্রযোজনা তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কবি’ নাটকের মূল চরিত্র ‘বসন’ করেই আলোচনায় আসেন তিনি।

পরে টিভি নাটকে আলোচনায় আসেন তিনি শিহাব শাহীনের ‘অনামিকা’ ও ইয়ামিন ইলানের ‘আজ বাবার বিয়ে’ নাটকে অভিনয় করে। ‘ইতি তোমারই ঢাকা’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় তার।

(ঢাকাটাইমস/২৮মার্চ/এলএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :