সাংবাদিক শামসের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা, যা আছে এজাহারে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৯ মার্চ ২০২৩, ১৭:২৯

দৈনিক প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসের বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা হয়েছে। বুধবার রাজধানীর তেজগাঁও থানায় এই মামলা দায়ের করেন সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া নামের এক ব্যক্তি।

‘পেটে ভাত না থাকলে স্বাধীনতা দিয়া কী করমু?’ শিরোনামে সংবাদ করায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫(২), ২৬(২), ২৯(১), ৩১(২) এবং ৩৫(২) ধারায় অভিযোগ এনে মামলাটি করা হয়। তেজগাঁও থানার মামলা নম্বর-৫৮।

যা আছে মামলার এজাহারে:

মামলার এজাহারে সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া অভিযোগ করেছেন, গত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে একটি ছবিসহ সংবাদ প্রকাশের পাশাপাশি তাদের ফেসবুক পেজ থেকে শেয়ার করে।

ওই সংবাদে দেখা যায়, একটি শিশু ফুল হাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ফটকে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিবেদকের দাবি সেই শিশুটির নাম জাকির হোসেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শিশু জাকির হোসেন বলে-‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কি করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।

সামাজিক মাধ্যমে সংবাদটি ভাইরাল হয়ে যায়। ওই সংবাদটি যা দেশ-বিদেশে অবস্থানরত হাজার হাজার মানুষ তাদের ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ক্রিনশটসহ শেয়ার করেন। এই ঘটনায় বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশের সোনালী গৌরবোজ্জ্বল ভাবমূর্তি নিয়ে বাংলাদেশের জনগণসহ বহিঃবিশ্বে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

তিনি আরও অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবসের দিনে এই সংবাদ প্রকাশ করায় বিশ্বব্যাপী দেশের ভাবমূর্তি ও স্বাধীনতার অর্জন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। পরবর্তীতে ৭১ টিভির সংবাদে জানা যায়, প্রথম আলো উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মিথ্যা পরিচয় ও মিথ্যা উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদটি পরিবেশন করেছে। যে শিশুটির কথা প্রথম আলোর রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে তার সম্পর্কে ভুল তথ্য দেয়া হয়েছে। নাম পরিচয় ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

পত্রিকায় বলা হয় শিশুটির নাম জাকির হোসেন, কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যায়, ওই শিশুর নাম সবুজ আহমেদ। তার বাড়ী সাভার থানাধীন কুরগাঁও পাড়ায় তার বাবা একজন পেশায় রাজমিস্ত্রি, মা মুন্নী বেগমের তিন সন্তানের মধ্যে মেজো সন্তান সবুজ।

প্রথম আলোর তথ্যে বলা হয়েছে, সে দিনমজুর। কিন্তু সাত বছরের শিশু সবুজ আহমেদ প্রথম শ্রেণিতে পড়াশুনা করে এবং স্কুল শেষে মাঝে মাঝে ফুল বিক্রি করে। শামসুজ্জামানের প্রস্তুতকৃত প্রথম আলোর সংবাদে বলা হয়েছে, ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কি করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইল এর স্বাধীনতা লাগব’ প্রকৃতপক্ষে ওই শিশুটি এ ধরনের কোনো কথা বলেনি।

শিশুটি জানিয়েছে, প্রথম আলোর সাংবাদিক শিশুর হাতে ১০টাকা দিয়ে এই ছবি তুলেছে। এতে প্রমাণিত হয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জনমনে বিভ্রান্তী সৃষ্টি এবং বাংলাদেশের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার হীন উদ্দেশ্যে একটি অশুভ চক্র দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এই মিথ্যা সংবাদ তৈরি ও পরিবেশন করে অনলাইন ও সামাজিক মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে যার ফলে দেশের অভ্যান্তরে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।

মহান স্বাধীনতা দিবসে এমন মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ এবং বিশ্বব্যাপী প্রচার করায় বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমি ক্ষুব্ধ। এজাহার নামের আসামিসহ অজ্ঞাতনামা আসামিরা অনুমতি ছাড়া মিথ্যা তথ্য উপাত্তসহ মানহানিকর তথ্য প্রকাশ ও প্রচার আইন শৃংখলার অবনতি ঘটাবার উপক্রম ও সহায়তার অপরাধ করেছে।

উল্লেখ্য, বুধবার ভোর ৫টার দিকে আশুলিয়ায় আমবাগানের বাসা থেকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদস্য পরিচয় দিয়ে প্রথম আলোর সাভার প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।

তার বিরুদ্ধে মামলা রুজুর হওয়ার পরই সাংবাদিক শামসকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে দুপুরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল

(ঢাকাটাইমস/২৯মার্চ/এএ/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :