যাত্রাবাড়ীর ইমরান হত্যা: অগ্রগতি নেই তদন্তে, প্রধান আসামি কাউন্সিলর মাসুমসহ ৪ জনের জামিন

রুদ্র রাসেল, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০৫ | প্রকাশিত : ০১ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:৫৪

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে গত ২৩ জানুয়ারি খুন হন পরিবহন শ্রমিক ইমরান হোসেন। দুমাস সাতদিনে খুনের তদন্তের অগ্রগতি কতটুকু- এ প্রশ্নের জবাব মেলে ‘শুধু’ শূন্য। বরং অগ্রগতির বিপরীতে মামলার প্রধান আসামি ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাসুম মোল্লাসহ ৪ জন জামিন নিয়ে মুক্ত ঘুরে বেড়াচ্ছে।

কাউন্সিলর মাসুমের প্রধান আসামি হওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমসহ স্থানীয়দের মধ্যে চাউর হলেও তার ‘নীরব’ জামিনের বিষয়টি টের পাননি অনেকেই।

জামিন পাওয়ার আগের এক মাসেও তাকে গ্রেপ্তারে পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারে তার বাসায়ও পুলিশকে অভিযান চালাতে দেখেননি এলাকার লোকজন।

সূত্র বলছে, ঘটনার পর থেকেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও কাউন্সিলর মাসুম মোল্লা পলাতক অবস্থায় ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে শীর্ষ পর্যায়ে তদবির চালাচ্ছিলেন গ্রেপ্তার এড়াতে।

গত ২৩ জানুয়ারি হত্যাকাণ্ডের পরপর গ্রেপ্তার করা ৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ তখন জানিয়েছিল, ‘কাউন্সিলর মাসুমদের গ্রুপটি সিটি টোলের নামে যাত্রাবাড়ীতে চাঁদাবাজি করছিল। তবে কিছুদিন আগে ওই চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় বিরোধীরা। ওই নিয়ন্ত্রণ ফেরাতেই খুন করা হয় মাসুমদের বিরোধী গ্রুপের পক্ষে চাঁদা উত্তোলনকারী ইমরানকে।’

‘হত্যাকাণ্ডের পর গ্রেপ্তারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে খুনের নির্দেশদাতা হিসেবে কাউন্সিলর মাসুমের নাম বলেছে’, এ কথাও তখন জানিয়েছিল পুলিশ। বলা হচ্ছিল, ‘চাঁদা আদায়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে মাসুম মোল্লার নির্দেশে ওই শ্রমিককে খুন করা হয়। এই টোল আদায়ের নিয়ন্ত্রণ হাতে নিতেই হত্যার নির্দেশ দেন মাসুম।’

এ হত্যাকাণ্ডর অগ্রগতি সম্পর্কে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মামুন মাতুব্বর ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মামলার তদন্ত চলছে।’

তিনি বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে কাউন্সিলর মাসুমকে জামিন দেন আদালত। প্রথমে তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান। পরে নিম্ন আদালত তাকে স্থায়ী জানি দেন।’

এছাড়া রমজান ও শহীদ নামে এ মামলার আরও দুই আসামিও একই প্রক্রিয়ায় জামিন পান। আর বুলু বাবু নামে আরেক আসামি ইতোমধ্যেই হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়েছেন। তবে কারও জামিনের কাগজ আদালত থেকে থানায় পৌঁছেনি বলে জানান এসআই মামুন।

এদিকে বুধবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে কথা হয় কাউন্সিলর মাসুম মোল্লার সঙ্গে। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘জামিন না নিয়ে কি এই শহরে থাকা যায়।’ মামলায় তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। তদন্ত চলছে। তদন্তেই বের হবে কে খুনি।’

অন্যদিকে যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজারে গাড়ি থেকে টোলের নামে অবৈধ চাঁদা উত্তোলনকারী পরিবহন শ্রমিক মো. ইমরান (৩৫) খুনের পর থেকেই আড়ালে চলে যান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাসুম মোল্লা। সেদিন থেকেই তিনি বাসায় ছিলেন না। ঘটনার পরদিন নিহতের স্ত্রী পপি আক্তার যাত্রাবাড়ী থানায় মাসুমসহ ২২ জনের নাম উল্লেখ করে মোট ৪৭ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়েরের পর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল।

প্রসঙ্গত, গত ২৩ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টার দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজারে ‘সোনার বাংলা বাণিজ্যালয়’ আড়তের ভেতরে পরিবহন শ্রমিক ইমরানসহ কয়েকজনের ওপর হামলা হয়। ইমরান, সিদ্দিক ও শাহাদাতকেও এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ফেলে রেখে যান হামলাকারীরা। তাদের উদ্ধার করে স্থানীয়রা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে ইমরানকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।

পরদিন যাত্রাবাড়ী থানায় কাউন্সিলর মাসুম মোল্লাকে প্রধান আসামি করে ৪৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহতের স্ত্রী। মামলার ৪৭ আসামির মধ্যে এজাহারে মাসুম মোল্লা ছাড়াও তার সহযোগী ও ভাগ্নি জামাই আকরামউজ্জামান ওরফে উজ্জ্বল মোল্লা (৩৫), মুস্তাকিম (২৮), শুভ (২৪), মোহাম্মদ আলী (২৭), আরিফ (৩৮), তানজিল মিয়া (২৪), বুলু বাবু (৫০), পলাশ (২৭), জামাল (৩০), রাজিব (২৮), রমজান মোল্লা (৩৭), জাহিন (৪০), দেলা (৩৮), হাসান (২৯), সাগর (২৭), রাজু (২৫), সুমন (২৫), ফয়সাল (২৫), পারভেজ (২৬), সোহেল (২৯), রাজনের (২৫) নাম উল্লেখ রয়েছে।

এ হত্যকাণ্ডে মোট ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে ঘটনার পরপরই ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যার মধ্যে ৭ জন এজাহারভুক্ত আসামি। এরপর কাউন্সিলর মাসুমের ভাগ্নি জামাই উজ্জ্বল মোল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি মামলার এজাহারনামীয় দুই নম্বর আসামি।

গ্রেপ্তার ৯ জন হলেন- তানভীর, মো. মোস্তাকিম, আবদুল আজিজ, রমজান মোল্লা, মো. শুভ, শহীদ, মো. আরিফ, কামাল হোসেন ও উজ্জ্বল মোল্লা। এর মধ্যে কামাল হোসেন ছাড়া বাকিরা মামলার এজাহারভুক্ত আসামী।

গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে শহীদ ও রমজান মোল্লা জামিন পেয়েছেন। আর গ্রেপ্তার না হয়ে পলাতক আসামিদের মধ্যে জামিন পান কাউন্সিলর মাসুম মোল্লা (প্রধান আসামি) ও বুলু বাবু। এর মধ্যে শুধু বুলু বাবু হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন। নিম্ন আদালত থেকে জামিন নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। আর বাকি ৩ জন প্রথমে হাইকোর্ট ও পরে নিম্ন আদালত থেকে স্থায়ী জামিন পান। গ্রেপ্তার ৭ জন কারাগারে রয়েছেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. ইমরান (৩৫) পেশায় একজন পিকআপ শ্রমিক। পাশাপাশি তিনি কাঁচাবাজারে টোল আদায়ের কাজ করতেন। ‌দুই নম্বর আসামি উজ্জ্বল মোল্লা, তার সহযোগী মোহাম্মদ আলী ও মো. আরিফ চাপাতি, ছুরি ও রামদা দিয়ে ইমরানকে কুপিয়ে হত্যা করে। ইমরানকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাসুম মোল্লা।

পুলিশ সূত্র জানায়, যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজার এলাকায় সিটি টোলের নামে চাঁদা তোলাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে ইমরান হোসেন খুন হন। মামলার এজাহারেও চাঁদা তোলার দ্বন্দ্বের জেরে খুনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্র বলছে, যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজার আড়ৎ এলাকায় ‘সিটি টোলের’ নামে আকরাম মোল্লার লোকজন আগে চাঁদা তুলতেন। কাউন্সিলর মাসুম এ গ্রুপটির একজন নিয়ন্ত্রক। তবে হত্যাকাণ্ডের আগে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে চাঁদা তুলছিলেন স্থানীয় আল-আমিনের লোকজন। এ নিয়ে দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব চলছিল।

(ঢাকাটাইমস/০১এপ্রিল/আরআর/এফএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :