ঢাকার জলাশয় গেল কই

রুদ্র রাসেল, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৯ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:৪৯

গত ২০ বছরে জলাশয় ও খোলা জায়গার পরিমাণ কমে তিন ভাগের এক ভাগে নেমেছে। প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস করা রাজধানীর মানুষ সাময়িক শান্তির জন্য জলাশয় বা খোলা জায়গার খোঁজ করলেও তা তেমন এতটা মিলছে না। এক সময়ের সেই জলাশয় ও খোলা মাঠগুলো বেদখল হয়ে গেছে চোখের সামনেই। সেগুলো এখন অতীত। সেখানে এখন কংক্রিটের রাজত্ব।

যদিও শহুরে জীবনে অভ্যস্ত যান্ত্রিক মানুষগুলো এসব মাঠ কিংবা জলাশয়ের খোঁজ রাখে না। তবে গড় তাপমাত্রার চেয়ে ৭-৯ ডিগ্রি বেশি তাপমাত্রায় বৈশাখি রোদ গোটা দেশ পোড়ানোতে ফের আলোচনায় এসেছে জলাশয় প্রসঙ্গ। খোলা জায়গা ও গাছ কমে আসার বিষয়টিও নতুন করে ভাবাচ্ছে মানুষকে।

গত দুই দশকের পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্স (বিআইপি) পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, গত ২০ বছরে ঢাকায় জলাশয় ও খোলা জায়গার পরিমাণ দুই তৃতীয়াংশ কমেছে।

নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, একটি ‘আদর্শ শহর’ গড়ে ওঠে কংক্রিট, সবুজ ও পানির সমন্বয়ে। অন্তত ২৫ শতাংশ সবুজ, ১৫ শতাংশ জলাধার থাকবে। বাকি ৬০ ভাগের মধ্যে ৪০ থেকে ৫০ ভাগ কংক্রিট এলাকা করতে পারে, বাকিটা ভবনের মাঝখানে খালি জায়গা হিসেবে থাকবে।

কিন্তু ঢাকায় এখন মোট জমির ৮০ শতাংশের বেশি জায়গাজুড়ে কংক্রিট, ৯ শতাংশের কিছু বেশি এলাকায় সবুজ আচ্ছাদন টিকে আছে। খোলা জায়গা এবং জলাভূমি আছে পাঁচ শতাংশেরও কম। ভরাট হয়ে গেছে ৭০ শতাংশ জলাশয়।

বিআইপির ‘সবুজ এলাকা, জলাশয়, খোলা উদ্যান ও কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকার বিদ্যমান অবস্থা সংক্রান্ত’ গবেষণার তথ্য বলছে, ১৯৯৯ সালে ঢাকায় জলাভূমি ছিল ১৯ দশমিক ০৯ বর্গকিলোমিটার, যা শহরের মোট আয়তনের ১৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। ২০০৯ সালে তা অর্ধেকেরও নিচে নেমে হয় ৭ দশমিক ৬৮ বর্গ কিলোমিটার। শতকরা হিসাবে তা দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। অর্থাৎ ১০ বছরে ভরাট হয়েছে ১১ দশমিক ৪১ বর্গ কিলোমিটার এলাকা।

অথচ এই এক দশকের মধ্যেই ২০০০ সালে জলাধার আইন করেছে সরকার, যার ৫ ধারায় বলা আছে, খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। সেই জায়গা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার করা যাবে না বা ব্যবহারের জন্য ভাড়া, ইজারা বা অন্য কোনোভাবে হস্তান্তর করা যাবে না।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইনেও (২০১০ সালে সংশোধিত), যে কোনো ধরনের জলাশয় ভরাট করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।

জলাধার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, কেউ আইনের বিধান লঙ্ঘন করলে অনধিক ৫ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা যাবে।

২০১৯ সালের তথ্য বলছে, আগের ১০ বছরে জলাশয় ভরাট হয় আরও ১ দশমিক ৮১ বর্গকিলোমিটার। ওই বছর জলাভূমি পাওয়া যায় ৫ দশমিক ৮৭ বর্গকিলোমিটার। ওই বছর রাজধানীর মোট আয়তনের মধ্যে জলাশয়ের অনুপাত নেমে আসে ৪ দশমিক ৩৮ শতাংশে।

অর্থাৎ দুই দশকে জলাশয় ভরাট হয়েছে ১৩ দশমিক ২২ বর্গকিলোমিটার, অর্থাৎ প্রায় ৭০ শতাংশ।

১৯৯৯ সালে জলাশয় ও খোলা জায়গার অনুপাত ছিল কাছাকাছি। ওই বছর ঢাকায় ১৮ দশমিক ৮৫ বর্গকিলোমিটার খোলা জায়গা পাওয়া যায়। রাজধানীর মোট আয়তনের ১৪ দশমিক ০৭ শতাংশ জায়গা ছিল উন্মুক্ত।

২০০৯ সালে তা আরও কমে দাঁড়ায় ১০ দশমিক ৪৫ বর্গকিলোমিটারে। শতকরা হিসাবে খোলা জায়গা কমে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৮০ শতাংশে।

অর্থাৎ এক দশকে ভরাট হয়েছে ৮ দশমিক ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা।

এদিকে জলাভূমি ও খোলা জায়গা কমে এই দুই দশকে ব্যাপকভাবে বেড়েছে কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকা। অর্থাৎ ভরাট হওয়া জমিতে মূলত গড়ে উঠেছে কংক্রিটের স্থাপনা।

১৯৯৯ সালে ঢাকায় কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকা ছিল ৮৭ দশমিক ০৯ বর্গকিলোমিটার। ওই সময় রাজধানীর আয়তনের ৬৪ শতাংশে ছিল পাকা স্থাপনা।

এক দশক পরে কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকা ১৬ দশমিক ৩৩ বর্গকিলোমিটার বেড়ে হয় ১০৩ দশমিক ৪২ বর্গকিলোমিটার। ওই বছর রাজধানীর আয়তনের ৭৭ দশমিক ১৮ শতাংশতেই পাওয়া যায় পাকা স্থাপনা।

২০১৯ সালে কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকার অনুপাত আরও বেড়ে হয় ৮১ দশমিক ৮২ শতাংশ। ওই বছর ১০৯ দশমিক ৬৩ বর্গকিলোমিটার এলাকায় পাওয়া যায় পাকা স্থাপনা।

অর্থাৎ ২০ বছরে জলাশয় ও খোলা জায়গা কমেছে মোট ২৫ দশমিক ৯০ বর্গকিলোমিটার। আর এর মধ্যে পাকা স্থাপনা বেড়েছে ২২ দশমিক ৫৪ বর্গকিলোমিটার জুড়ে। শতকরা হারে পাকা স্থাপনা দুই দশকে বেড়েছে ২৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ।

নগর গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি বিভিন্ন পরিকল্পনায় আছে জলাধার রাখতে হবে, সবুজ এলাকা রাখতে হবে। কিন্তু তারা নিজেরাও রাখতে পারছে না এবং বেসরকারি পর্যায়ে যেসব আবাসন হচ্ছে তাদেরকেও মানাতে পারছে না। এটা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যর্থতা।’

তিনি আরও বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের মুনাফার লোভ, ব্যক্তি পর্যায়ে আইন না মানা, সবুজ এলাকা, খোলা জায়গা না থাকার প্রবণতা মারাত্মক। এজন্য সরকারের পাশাপাশি বিশিষ্ট নাগরিকদেরও দায়ী করা যায়,তারা বিষয়টি নিয়ে তেমন কথা বলে না।’

(ঢাকাটাইমস/১৯এপ্রিল/আরআর/আরকেএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :