বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ড: ফায়ার সার্ভিসে কেন হামলা, হিসাব মেলাতে পারছে না পুলিশ

রুদ্র রাসেল, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০৭ | প্রকাশিত : ২৭ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৫৯

ঢাকার বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের সময় ফায়ার সার্ভিসের সদরদপ্তর কর্মীদের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা কেন-কারা ঘটালো, সেই বিষয়ে এখনো অন্ধকারে রয়েছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত তিনজনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদেও জানা যায়নি হামলার পেছনের রহস্য বা ইন্ধনদাতা কারা।

গত ৪ এপ্রিল আগুনে পুড়ে ছারখার হয় দেশের অন্যতম পাইকারি পোশাকের এই মার্কেট। ওইদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উত্তেজিত জনতা ফায়ার সার্ভিস সদরদপ্তরে ঢিল ছোড়ে এবং নিয়ন্ত্রণ কক্ষে হামলা চালায়।

ওই হামলার আড়ালে ‘ক্ষোভ’ ছিল নাকি তা ‘পরিকল্পিত’ অগ্নিকাণ্ডের ২২ দিন পরও উদ্ধার হয়নি সে মোটিভ। এমনকি ধারাল অস্ত্র নিয়ে অত সকালে হামলাকারীরা একত্রিত হলেন কিভাবে, পেছনে কেউ কলকাঠি নেড়েছে কি না, হামলার মতো বিশৃঙ্খলতা সৃষ্টি করে আগুন নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের গতিকে ধীর বা ব্যাহত করার ষড়যন্ত্র ছিল কি না—উত্তর মেলেনি সেসব প্রশ্নেরও।

এ ঘটনায় বংশাল থানায় করা মামলায় এ পর্যন্ত ১৭ জন গ্রেপ্তারের তথ্য ঢাকা টাইমসকে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আদালতের নির্দেশে পুলিশ তিনজনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেও গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য বের করতে পারেনি। জানা যায়নি ইন্দনদাতার নাম।

বঙ্গবাজারে অগ্নিনির্বাপণের সময় হামলা ও ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে গত ৭ এপ্রিল মামলাটি করেন ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. শাহিন আলম। মামলায় অজ্ঞাতনামা ২৫০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়।

সেসময় পুলিশ জানিয়েছিল, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে রিমান্ডে নেওয়া তিনজনকে ধরা হয়। তাদের কেউ ব্যবসায়ী নন। এরা উৎসুক জনতা, যারা হামলায় অংশ নিয়েছিল।

তবে বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ী বা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়েও গ্রেপ্তারকৃতরা কেন হামলা চালালেন, মেলেনি সেই উত্তর। মামলাটির প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আদালত আগামী ১৭ মে দিন ধার্য করেছেন বলে জানা গেছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বংশাল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সমীরন মণ্ডল ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এ মামলায় গ্রেপ্তারকৃত ১৭ জন কারাগারে রয়েছেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। আসামিরা হামলার বিষয়ে মুখ খুলতে চায় না।’

এ হামলার ইন্ধনদাতা কারা, সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি বলেও জানান এসআই সমীরন মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে কারণ বেরিয়ে আসবে।’

হামলার কারণ জানা যায়নি জানিয়ে বংশাল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কামরুল হাসান কামাল ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আসামিদের কাছ থেকে হামলার কারণ জানা যায়নি।’ তবে ক্ষোভ থেকে এ হামলা হয়েছে বলে মনে করেন না এ পুলিশ কর্মকর্তা।

কী আছে এজাহারে

মামলার এজাহারে বলা হয়, ফায়ার সার্ভিসের সদরদপ্তরে হামলায় সরকারি সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়। হামলায় আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ ৩৯ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ টাকা।

এ ঘটনায় সিনিয়র কর্মকর্তাসহ আহত হন ফায়ার সার্ভিসের চার সদস্য। অতর্কিত এ হামলায় ভাঙচুর করা হয় ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন মডেলের ১৪টি গাড়ি, মেইন গেটের সেন্ট্রি পোস্ট, প্রশাসনিক ভবন ও সিনিয়র স্টেশন অফিসারের অফিস।

এজাহারে বাদী অভিযোগ করেন, গত ৪ এপ্রিল সকাল ৬টা ১০ মিনিটে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ থেকে অগ্নিকাণ্ডের সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে অফিসার ও ফায়ার ফাইটারদের সঙ্গে নিয়ে গাড়ি, পাম্প ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদিসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করি। আগুনের ভয়াবহতা দেখে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়।

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী, বিভিন্ন স্টেশনের ফায়ার সার্ভিসের ৫০টি ইউনিট, পুলিশ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, র‌্যাব, বিজিবি, আনসার ও স্বেচ্ছাসেবক টিমের সহায়তায় আগুন নেভানোর কাজ চলছিল।

সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে সিদ্দিক বাজারে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরে হামলার ঘটনা ঘটে। অজ্ঞাতনামা ২৫০-৩০০ জন হাতে লোহার রড, লাঠিসোঁটা ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা করে। উচ্ছৃঙ্খল জনতা একযোগে অফিসে প্রবেশ করে সরকারি কাজে বাধা দেয়।

সেসময় হামলাকারীরা ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের বিভিন্ন সদস্যকে মারধর শুরু করে। ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মো. ওয়াহিদুল ইসলাম ও পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেনেন্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী জনতাকে থামাতে গেলে তারা তাদেরও হত্যার উদ্দেশ্যে ধাওয়া করে। তারা জীবন রক্ষার্থে দৌড়ে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের কার্যালয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেন।

এসময় বাধা দিলে তারা ফায়ার ফাইটার ইসলাম অন্তরকে লোহার রড দিয়ে ডান পায়ে আঘাত করে জখম করে। উপপরিচালক বাবুল চক্রবর্তীকে হত্যার উদ্দেশ্যে লাঠি দিয়ে তার মাথায় ও ডান হাতে সজোরে আঘাত করে গুরুতর জখম করেন দুর্বৃত্তরা। চালক ইমন হোসেনকেও লাঠি দিয়ে পিঠে আঘাত করে জখম করা হয়। তারা সবাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।

হামলার পুরো ঘটনা সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে রয়েছে উল্লেখ করে এজাহারে বলা হয়, অজ্ঞাতনামা ২৫০-৩০০ জন আসামি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের তথা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে হামলা ও সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করে।

এদিকে এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর বংশাল থানা গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে শওকত হোসেন (৫৫), ইদ্রিস (৩০) ও খলিলকে (৩৬) এক দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

এছাড়া আগুন নেভানোর সময় ‘পুলিশের ওপর হামলা ও কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গত ৬ এপ্রিল মো. রাজু, শাওন ও শাহাদাৎ হোসেন নামে তিনজনের এক দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। তাদের হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তবে হামলার রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি।

আদালতে সংশ্লিষ্ট থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক মো. সামাদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, মামলার প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ১৭ মে দিন ধার্য করেছেন আদালত।

(ঢাকাটাইমস/২৭এপ্রিল/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :