সাতক্ষীরার এসপির নির্দেশে ৬ বছর পর গ্রেপ্তার চেয়ারম্যান রউফ, জানুন তার কর্মকাণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১২ মে ২০২৩, ২৩:২১

নাশকতার মামলায় অবশেষে গ্রেপ্তার হয়েছেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আলিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আব্দুর রউফ সরদার। গত শনিবার রাত ৯টার দিকে আলিপুর চেকপোস্ট এলাকায় সোনালী ফিলিং স্টেশনের নিজ অফিস থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ সরদার সদর উপজেলার আলিপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তার সরদারের ছেলে। তার বিরুদ্ধে ২০২২ সালের শেষে রুজু হওয়া নাশকতা মামলা ছিল। যার মামলার নম্বর ৭। গ্রেপ্তারের পর রবিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

আব্দুর রউফের গ্রেপ্তারে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে স্বস্তি নেমে এসেছে। তারা বলছেন, আব্দুর রউফ একাধিক মামলার আসামি হয়েও প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। বিএনপির নেতা হলেও তিনি বিএনপির আমলেই অপারেশন ক্লিন হার্টের সময় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কারণে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর তিনি নির্যাতন চালিয়েছেন। অবশেষে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামানের নির্দেশনায় নাশকতা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করে সদর থানা পুলিশ।

জানা গেছে, আব্দুর রউফ প্রায় দুই আগে থেকেই সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে আসছেন। ২০০১ সালের নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে সাতক্ষীরা সীমান্ত এলাকার ইউনিয়নগুলিতে মূর্তিমান আতঙ্ক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। সে সময়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অনেকে আতঙ্কে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন। এমনকি সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত এক নির্বাচনি জনসভায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রউফের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী তৎপরতা ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ এনে তাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। পরবর্তীতে রউফের তৎপরতা ব্যাপক আকার ধারণ করে। সে সময় রউফ প্রকাশ্যে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ ও আপত্তিকর ভাষায় উসকানিমূলক বক্তব্য দিতেন।

তবে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কারণে বিএনপির রাজনীতি করেও রউফ বিএনপির আমলে কোণঠাসা হয়ে ছিলেন। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পর অপারেশন ক্লিনহার্টে প্রথমবারের মতো রউফ গ্রেপ্তার হন। দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার পর মুক্তি পেয়ে বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে যান তিনি।

পরবর্তীতে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় এলে রউফ আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে বিএনপির হয়ে স্বরূপে আত্মপ্রকাশ করেন। রউফের নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসীরা ২০১৩ সালে সারাদেশ থেকে সাতক্ষীরাকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা চালায়। বিএনপির আমলে সাতক্ষীরায় কোণাঠাসা হয়ে থাকা রউফ পুনরায় ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন। ২০১৭ সালের ৬ মার্চ তাকে পুনরায় পুলিশ গ্রেপ্তার করে। অভিযোগ আছে, এরপর থেকে দীর্ঘ ৬ বছর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মদদে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকেন তিনি।

তবে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে সাতক্ষীরা সদরের আলিপুর এলাকায় তার প্রভাব ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। নির্বাচিত হন আলিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। গত বছরের শুরুতে কয়েকটি জনসভায় তিনি সাতক্ষীরাকে অচল করার হুমকিও দেন।

সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ ফখরুল আলম খান বলেন, আব্দুর রউফকে দীর্ঘদিন ধরে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালানো হচ্ছিল। তার বিরুদ্ধে ১২টি মামলা রয়েছে। গত শনিবার রাত ৯টার দিকে গোপন সংবাদের মাধ্যমে জানা যায়, আবদুর রউফ আলীপুর এলাকার সোনালী ফিলিং স্টেশনের সামনে অবস্থান করছেন। এরপর পুলিশ পরিদর্শক নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে রাত সাড়ে নয়টার দিকে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা করে।

তিনি বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী কোনো অপশক্তিকে ছাড় না দেওয়া নির্দেশ দিয়েছেন সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান স্যার। তারই নির্দেশে দেশবিরোধী শক্তিকে নির্মূল করতে আমরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২০২২ সালের ২ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা সদর থানার উপপরিদর্শক ইসমাইল হোসেনের করা একটি নাশকতা মামলার আসামি হিসেবে আবদুর রউফকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১২মে/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :