১১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে ‘পর্তুগালে’ সোহেল রানা
![](/assets/news_photos/2023/05/19/image-310001-1684475933.jpg)
ই-অরেঞ্জ কেলেঙ্কারির হোতা ঢাকার বনানী থানার বরখাস্তকৃত পরিদর্শক সোহেল রানা বাংলাদেশ ও ভারতের পুলিশের খাতায় এখন পলাতক আসামি। ই-কমার্স প্রতারণার ফাঁদে গ্রাহকের ‘১১০০ কোটি টাকা’ হাতিয়ে দেশ ছাড়ার পথে সীমান্তে গ্রেপ্তারের পর জামিন পেয়ে ভারত থেকেও পালান তিনি। তবে এখন কোথায় আছেন, সে বিষয়ে তথ্য নেই পুলিশের কাছে। গোয়েন্দাদের একটি সূত্র জানিয়েছে, সোহেল রানা ভারত থেকে পালিয়ে নেপাল-থাইল্যান্ড হয়ে পর্তুগালে পাড়ি জমিয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে তারা তথ্য পেয়েছেন। পর্তুগালে সোহেল রানার ছোটভাই শেখ সাইফ থাকেন। সেখানেই তিনি থাকছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এসব তথ্য যাচাই করা হচ্ছে।
এদিকে ২৩২ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে দায়ের করা মানিলন্ডারিংয়ের একটি মামলা তদন্ত করে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা পাচারের প্রমাণ পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ মামলায় সোহেল রানাসহ এজাহারভুক্ত আসামি পাঁচ জন। তবে তদন্তে আরও কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে সিআইডি। তাদেরও এ মামলায় আসামি করে প্রস্তুত করা হচ্ছে অভিযোগপত্র। এছাড়া যেসব অভিযোগ মানিলন্ডারিং মামলার এজাহারে রয়েছে, তার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে সিআইডি সূত্র জানিয়েছে।
আরও পড়ুন>>কম্পিউটারের ক্যারিশমায় ৪০০০ কোটি টাকা লুট
তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ভারত থেকে পালিয়ে যাওয়ায় সোহেল রানাকে দেশে ফেরানো নিয়ে আপাতত অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। যদিও ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশের পুলিশই এখন সোহেল রানাকে খুঁজছে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, সোহেল রানাকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভারতীয় পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) থেকে চিঠি দেওয়া হয়। সোহেল তখন কারাগারে ছিলেন বলে জানিয়েছে ভারত। গত ডিসেম্বরে জামিন পেলে তথ্য চেয়ে ফের চিঠি দেয় পুলিশ। কিন্তু ভারত থেকে এখনো উত্তর আসেনি।
জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মনজুর আহমেদ বলেন, ‘সোহেল রানার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে ভারত এখনো কিছু জানায়নি।’
এ পর্যন্ত সোহেল রানা ও তার বোন মেহজাবিন, বোনের স্বামী মাসুদুরের বিরুদ্ধে ২৭টি মামলার তথ্য পেয়েছে ঢাকা টাইমস। একটি মানিলন্ডারিং, দুটি ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে এবং বাকিগুলো প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাতের মামলা। এর মধ্যে গুলশান থানার পাঁচটি মামলায় সোহেল রানা ও তার বোন-দুলাভাইকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেছে পুলিশ।
আরও পড়ুন>>‘ইন্টারপোলের হাতে গ্রেপ্তার জেল খাটার’ দাবির পেছনে আরাভ খানের নতুন ‘মিশন’?
চার্জশিটে সোহেল রানা ছাড়া অন্য অভিযুক্তরা হলেন- ই-অরেঞ্জের মূল মালিক সোনিয়া মেহজাবিন, তার স্বামী মাসুদুর রহমান, আরেক পরিচালক বীথি আকতার, প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) আমানউল্লাহ চৌধুরী, প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা কাওসার আহমেদ এবং সাবেক সিও নাজমুল রাসেল। এদের মধ্যে সোহেল রানা, বীথি আকতার ও কাওসার পলাতক। নাজমুল রাসেল গত ফেব্রুয়ারিতে জামিনে কারামুক্ত হন। বাকিরা কারাগারে রয়েছেন।
এসব মামলার মধ্যে মানিলন্ডারিং মামলা তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক সাদেক আলী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘তদন্তে অগ্রগতি আছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতি সাপেক্ষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।’ তদন্তসংশ্লিষ্ট সিআইডির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলাটির অ্যামি (তদন্তে পাওয়া তথ্য, কেস ডায়েরিসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে দাখিলযোগ্য কাগজপত্র) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছেন। এরপর তা সংযোজন-বিয়োজন শেষে সিআইডি প্রধানের অনুমতির জন্য দাখিল করা হবে। তিনি অনুমতি দেওয়ার পর চার্জশিট আকারে আদালতে দাখিল করা হবে।’
তদন্ত তদারককারী এক কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মামলাটিতে পাচারের অর্থ ও আসামির সংখ্যা বেড়ে যাবে।’
টাকা কোথায় পাচার করা হয়েছে সে বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা সাদেক আলী বলেন, ‘মানিলন্ডারিং আইন অনুযায়ী টাকা দেশের মধ্যেও পাচার হতে পারে। শুধু বিদেশে পাঠিয়ে দিলেই টাকা পাচার হয়, বিষয়টি এমন নয়।’
তবে সোহেল রানা ও তার বোনসহ ই-অরেঞ্জ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেয়েছে সিআইডি। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, কাগজপত্র ও তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে যে পরিমাণ অর্থপাচারের প্রমাণ মিলেছে পাচারকৃত প্রকৃত অর্থ এর চেয়ে অনেক বেশি হবে।গ্রাহকরা ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে মামলা করার পর সোহেল বিনা অনুমতিতে কর্মক্ষেত্র ছেড়ে যান এবং ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের কুচবিহারে বিএসএফের হাতে আটক হন। সেখানে অনুপ্রবেশের দায়ে তিন বছর কারাদণ্ড হয় তার। এরপর ভারতের কারাগারে বন্দি ছিলেন তিনি। কিন্তু তিনি অসুস্থতার কথা বলে কলকাতার হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চে আবেদন করে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর জামিন পান। আদালতে ভারতীয় নাগরিক কোচবিহার মেখলিগঞ্জ থানার ইসমাইল হোসেনের ছেলে নূর আলম এবং একই থানার চৌরঙ্গীবাজারের রফিকুল রহমান তার জামিনদার ছিলেন। তবে সোহেল রানা জামিনে বের হয়ে পালান। এরপর ফেব্রুয়ারিতে জামিনদার নূর আলমকে গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশ। বাতিল হয় সোহেল রানার জামিন।
পুলিশের একটি সূত্র বলছে, সোহেল রানা পালিয়ে প্রথমে নেপালে গিয়েছেন। সেখান থেকে অন্য কোনো দেশে গিয়ে থাকতে পারেন। তার নেপাল, থাইল্যান্ড, পর্তুগালসহ কয়েকটি দেশে নেটওয়ার্ক রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সোহেল রানা যখন বাংলাদেশ থেকে পালিয়েছিলেন, তখনও ব্যাংকক হয়ে পর্তুগাল যাওয়ার জন্যই ভারতে প্রবেশ করেছিলেন বলে সেখানকার পুলিশের জিজ্ঞসাবাদে স্বীকার করেছিলেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বিভিন্ন পেমেন্ট গেটওয়েতে ই-অরেঞ্জের ৩৪ কোটি ৬২ লাখ ১৭ হাজার ৪৮৯ টাকা আটকা রয়েছে। অন্যান্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের আটকে থাকা টাকা ফেরত দিলেও ই-অরেঞ্জের টাকা ফেরত দিচ্ছে না বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কারণ হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ই-কমার্স সেলের প্রধান মো. হাফিজুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালতে মামলা চলমান থাকায় গেটওয়ের টাকা আটকে রয়েছে। তবে টাকা দ্রুত ছাড় করতে চেষ্টা চলছে।’
২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর গুলশান থানায় রাসেল নামে একজন প্রতারণার মামলা করেন। সেই মামলায় সোহেলের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এ মামলায় ২০২২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। একই বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর গুলশান থানায় ফজলে রাব্বি নামে একজনের মামলায় সোহেলের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। পলাতক থাকায় ২০২২ সালের ২৯ আগস্ট আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর গুলশান থানায় এস এম রিফাত হোসেন বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেন। এ মামলায়ও সোহেলের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ২০২২ সালের ৩ নভেম্বর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।
২০২১ সালের ২ অক্টোবর গুলশান থানায় মেহেদী আদনান নামের একজন বাদী হয়ে মামলা করেন। এ মামলায়ও তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। ২০২২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর জারি হয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। এছাড়া গুলশান থানার আরও একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে সোহেল রানার বিরুদ্ধে।
(ঢাকাটাইমস/১৯মে/আরআর/আরকেএইচ)
সংবাদটি শেয়ার করুন
বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ
![](/cache-images/news_photos/2024/07/03/resize-90x60x0image-358347.jpg)
বেড়ার মেয়র আসিফ ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি, দেশ ছাড়লেন কীভাবে? কৌতূহল সর্বত্র
![](/cache-images/news_photos/2024/07/02/resize-90x60x0image-358194.jpg)
শিক্ষকদের পেনশনের টেনসনে স্থবির উচ্চশিক্ষা
![](/cache-images/news_photos/2024/07/01/resize-90x60x0image-358165.jpg)
কেরাণীগঞ্জে দেড় কোটি টাকার নিষিদ্ধ ব্রাহমা গরুর সন্ধান
![](/cache-images/news_photos/2024/06/30/resize-90x60x0image-357958.jpg)
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি চালুর উদ্যোগ কতটা গ্রহণযোগ্য? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা
![](/cache-images/news_photos/2024/06/28/resize-90x60x0image-357767.jpg)
সর্বজনীন পেনশনে অনীহা কেন, যা বলছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকনেতারা
![](/cache-images/news_photos/2024/06/28/resize-90x60x0image-357765.jpg)
সাদিক অ্যাগ্রোর সবই ছিল চটক
![](/cache-images/news_photos/2024/06/26/resize-90x60x0image-357537-1719373181.jpg)
ঢাকা মহানগর বিএনপি ও যুবদলের কমিটি দিতে ধীরগতি যে কারণে
![](/cache-images/news_photos/2024/06/25/resize-90x60x0image-357433.jpg)
রাসেলস ভাইপার আতঙ্ক: উপজেলা হাসপাতালগুলোতে নেই চিকিৎসা সক্ষমতা
![](/cache-images/news_photos/2024/06/22/resize-90x60x0image-357190.jpg)
মাগুরায় বাড়ি-জমি উত্তম কুমারের: কোথাও খোঁজ নেই তার, দুদকের অনুসন্ধান সম্পন্ন
![](/cache-images/news_photos/2024/06/21/resize-90x60x0image-357067.jpg)