ফের বাড়ছে ডেঙ্গু

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২১ মে ২০২৩, ০৮:৫৬ | প্রকাশিত : ২১ মে ২০২৩, ০৮:২৪

২০২২ সালের মে মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৫ জন। আর এ বছর একই সময়ে সেই সংখ্যা ৬-৭ গুন বেড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, চলতি মাসের ২০ দিনে ৪২৮ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এই সংখ্যা গত তিন মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মোট রোগীর চেয়ে বেশি। ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪২০ জন। এই সময়ে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২০ দিনে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চলিত জানুয়ারি থেকে মে মাসের ২০ দিন পর্যন্ত ১ হাজার ৪১৪ জন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী ছিল জানুয়ারিতে। এ মাসে ৫৬৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬, মার্চে ১১১ এবং এপ্রিলে ১৪৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। গত পাঁচ মাসে হাসপাতাল ছেড়েছে ১ হাজার ২৪০ জন।

বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ১৬২ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। ঢাকার ৫৩টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ১৪২ জন এবং অন্যান্য বিভাগে ২০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। দেশে ২৪ ঘণ্টায় (শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) নতুন করে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে ৫২ জনের দেহে। এর মধ্যে ঢাকার ৫১ জন এবং ঢাকার বাইরের একজন।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ঢাকার বাইরে এবার দ্রুত ডেঙ্গু বাড়ছে। এ বছর ঢাকাসহ ৪৪ জেলাতেই মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।

ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এবার গ্রামেও ডেঙ্গুর ঝুঁকি রয়েছে। সারা দেশে বিরামহীন মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার করার পাশাপাশি দক্ষ চিকিৎসা জনবল গড়ে তুলতে হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, ডেঙ্গু রূপ বদলাচ্ছে বারবার। ২০১৯ সালে এযাবৎকালের সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায় বাংলাদেশে। সেই বছর ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন। তখন ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়েছিল মে মাসের শেষে। সেই প্রকোপ কমেছে পরের বছরের জানুয়ারিতে। ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে ৫০ হাজারের বেশি রোগী পাওয়া যায় এবং ৯০ জন মৃত্যুবরণ করেন। পরের বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয় অক্টোবর মাসে।

২০২০ সালে ১ হাজার ৪০৫ জন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায় এবং মৃত্যুবরণ করেন ৭ জন। করোনার কারণে এই বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ কম দেখা দেয়।

২০২১ সালে আবার ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয় জুলাই মাসে। এই বছর ২৮ হাজার ৪২৯ জন রোগী পাওয়া যায় এবং মারা যান ১০৫ জন।

২০২২ সালে ৬২ হাজার রোগী পাওয়া যায় দেশে, যেখানে রেকর্ড সংখ্যক মৃত্যু হয় ২৮১ জন। মৃত্যু বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা বলেছেন, দেরী করে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসায় এমনটি হতে পারে।

ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব শহরে বেশি হলেও ২০২২ সালের পরিসংখ্যান বলছে, রোগী বাড়ছে রাজধানী ঢাকার বাইরেও। গেল বছর মোট ৬২ হাজার ৩৮২ ভর্তি রোগীর মধ্যে ঢাকার বাইরের রোগী ছিল ২৩ হাজার ১৬২ জন। এর বাইরে শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার ৩৫২ জন।

চলতি বছরও ঢাকা শহরে রোগী বেশি দেখা যাচ্ছে, পাশাপাশি ঢাকার বাইরেও রোগী পাওয়া যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বর্ষাকাল দীর্ঘায়িত হচ্ছে। যার ফলে ডেঙ্গুর মৌসুম দীর্ঘ হচ্ছে। সাধারণত সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমার কথা থাকলেও গতবছর নভেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হয়েছে।

আরও পড়ুন>> ‘আসল’ না ‘নকল’ ধরতে ইনসেপ্টার এক ব্যাচের সব ‘প্যানটোনিক্স’ বড়ি পরীক্ষার নির্দেশ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, ‘এবার যে ধরন আমরা দেখছি তাতে মনে হচ্ছে এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ গত বছরের তুলনায় বাড়বে। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার অনেকগুলো কারণের মধ্যে আছে অপরিকল্পিত নগরায়ন। এছাড়া আছে পানি প্রবাহের সিস্টেম এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। সব মিলিয়ে মৌসুম যেমন ছিল সেটি হয়তো থাকবে না। ডেঙ্গুর পিক সিজন আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর মাস। কিন্তু গতবছর এর ব্যতিক্রম ছিল, পিক হয়েছিল অক্টোবর মাসে। মার্চে সার্ভে করা হয়েছিল এডিস মশার। তবে এখন সেটা অনেকখানি পরিবর্তন হয়ে গেছে। যার কারণে ডেঙ্গু বেড়েছে।’

কবিরুল বাশার বলেন, ‘উত্তর সিটি করপোরেশন জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করেছে। সেখানে স্কাউট, বিএনসিসি সদস্যদের সম্পৃক্ত করেছে। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের যদি এসব কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা যায়, সাধারণ নাগরিকদের সচেতন করা যায়, কোনোভাবেই যেন বাড়ির আঙ্গিনায় এডিস মশার প্রজননস্থল তৈরি না হয়। উন্মুক্ত স্থানে যদি সিটি করপোরেশন কাজ করে এবং ব্যক্তি উদ্যোগে বাসাবাড়িতে কাজ করা হয় তাহলে দুই পক্ষের সম্পৃক্ততায় এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংসের কাজে গতি আসবে। এতে ডেঙ্গু একটি নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে আসবে।’

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশ

ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া রোধে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা অফিস পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানের ভবন ও আশপাশে মশার সম্ভাব্য প্রজননস্থলে যাতে পানি জমতে না পারে তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে স্কুল-কলেজ ও শিক্ষা অফিসগুলোকে।

এছাড়া ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার বিস্তার রোধে স্থানীয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে সব শিক্ষক, শিক্ষা কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে এসব নির্দেশনা দিয়ে আদেশ জারি করা হয়েছে। আদেশটি সব সরকারি- বেসরকারি স্কুল-কলেজের প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষদের পাঠানো হয়েছে।

আদেশে অধিদপ্তর বলেছে, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার বিস্তাররোধে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিসগুলোর ভবন ও আশপাশের খোলা জায়গা নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিসগুলো ভবন, খোলা জায়গা, মাঠ, ফুলের টব, পানির পাম্প বা পানি জমে এ রকম পাত্র, ফ্রিজ বা এসির পানি জমার ট্রে. পানির ট্যাপের আশেপাশের জায়গা, বাথরুম ও কমোড, গ্যারেজ, নির্মাণাধীন ভবন, লিফট ও সিডি, পরিত্যক্ত বস্তুসহ মশার সম্ভাব্য প্রজননস্থলে যাতে পানি জমতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।

গত ১৭ মে জারি করা এই নির্দেশনায় আরও বলা হয়, শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া বিস্তার রোধে স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণের বিষয়ে পরামর্শ দেবেন।

আর শিক্ষা অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার বিস্তার রোধে স্থানীয় প্রশাসন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও সিটি কর্পোরেশনকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে আদেশে।

(ঢাকাটাইমস/২১মে/আরআর/আরকেএইচ/এফএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :