গাজীপুর সিটি নির্বাচন: প্রচার শেষ, অপেক্ষা ভোটের

গাজীপুর প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ২৪ মে ২০২৩, ১৮:২২ | প্রকাশিত : ২৪ মে ২০২৩, ০০:০০

মধ্যরাতে শেষ হয়েছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচার। বৃহস্পতিবার (২৫ মে) ভোট গ্রহণ হবে আয়তনে দেশের বৃহত্তম রাজধানী লাগোয়া এই সিটিতে। প্রায় দুই সপ্তাহের বিরামহীন প্রচারণার শেষ দিন মঙ্গলবারেও নানা প্রতিশ্রুতি আর ভোটের আবেদন নিয়ে নগরবাসীর দ্বারে দ্বারে ছুটে গেছেন প্রার্থীরা। পথসভা, কর্মীসভাসহ নানা উপায়ে ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণে ব্যস্ত সময় পার করেছেন তারা।

দেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি এই নির্বাচন বর্জন করলেও নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতায় কোনো কমতি রাখেনি নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার পর থেকেই আওয়ামী লীগের আলোচিত- সমালোচিত দল থেকে বহিষ্কৃত নেতা সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বাড়িয়েছেন নির্বাচনের উত্তেজনার পারদ। নিজে নির্বাচনে অংশ নিতে না পেরে তার মা জায়েদা খাতুনকে করে তুলেছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী অ্যডভোকেট আজমত উল্লা খানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা বারবার তুলেছেন হামলা ও প্রচার প্রচারে বাধা দেয়ার অভিযোগ। আর এভাবেই দু'একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়াই শেষ হয়েছে নির্বাচনের প্রার্থীদের প্রচার। এখন অপেক্ষা ভোটের।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মোট ৩৩৪ জন প্রার্থী এবারের নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে মেয়র পদে ৮ জন, সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ২৪৬জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৭৯জন প্রার্থী। এর মধ্যে সাধারণ ওয়ার্ডে একজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় ২৫মে নির্বাচনে লড়বেন ৩৩৩জন প্রার্থী। ৫৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৬৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৯২হাজার ৭৪৭জন, মহিলা ভোটার ৫লাখ ৮৬হাজার ৬৯৮জন ও হিজড়া ভোটার আছে ১৮জন। ৪৮০টি ভোট কেন্দ্রে এ ভোট গ্রহণ করা হবে। ইতিমধ্যেই ১০৯৭১ জন ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। আজ সকাল থেকেই প্রতিটি কেন্দ্রে নির্বাচনী মালামাল পাঠানো শুরু হবে।

কঠোর অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্র ও আশপাশে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায়ের স্বার্থে র‌্যাব পুলিশের পাশাপাশি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে বিজিবি। এছাড়াও ৪৮০টি কেন্দ্রের মধ্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ৩৫১টি কেন্দ্রকে চিহিৃত করেছে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম জানান, সাধারণ ভোটকেন্দ্রে একজন অস্ত্রসহ এসআই/এএসআই ০১জন, ৩ জন কনস্টেবল, অস্ত্রসহ ১জন আনসার (পিসি), অস্ত্রসহ ১জন (এপিসি), ১০ জন আনসার সদস্য সহ মোট ১৬জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী লোক নিয়োগ থাকবে। পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ান আনসার এর সমন্বয়ে প্রতি সাধারণ ওয়ার্ডে ১টি করে মোবাইল ফোর্স, ৩টি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স, প্রতি থানায় একটি করে রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োজিত থাকবে। প্রতি ২ ওয়ার্ডে একটি করে র‌্যাবের টিম ও ৫টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১প্লাটুন করে বিজিবি নিয়োজিত থাকবে। এছাড়াও কেন্দ্র অনুযায়ী থাকবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের ভ্রাম্যমাণ আদালত টিম।

জমজমাট লড়াইয়ের আভাস

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের এ নির্বাচনে মেয়র পদে লড়াইয়ের আভাস মিলছে। প্রথমে নির্বাচন সহজ মনে হলেও শেষ সময়ে আওয়ামীলীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে পারেন। দলীয় কোন্দল ও বিবাদে অনেকটা আওয়ামী লীগে ঘরের শত্রু বিভীষণ পরিস্থিতি নগরজুড়ে। ভোটের নানা পরিসংখ্যানে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। মেয়র পদে ৮ জন প্রার্থী থাকলেও মূল লড়াইয়ে থাকবেন আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান, স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন, বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকারের ছেলে সরকার শাহনুর ইসলাম রনি। তবে ইসলামী আন্দোলনও উল্লেখযোগ্য একটি ভোট পেয়ে আলোচনায় আসতে পারেন।

নৌকার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে: আজমত উল্লা

মঙ্গলবার সকালে নগরীর টঙ্গী এলাকার নিজ বাসায় নেতাকর্মীদের নিয়ে ঘরোয়া বৈঠকে বসেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লা খান। প্রচারণার শেষ দিনে তিনি কোথাও গণসংযোগে বের হননি। আগামী ২৫ মে নৌকার পক্ষে রায় দিতে নগরবাসীর প্রতি আহবান জানান তিনি। এসময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে গাজীপুরে ভোট হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। চ্যালেঞ্জ থাকলেও নৌকার জয়ের ব্যপারে শতভাগ আশা প্রকাশ করে আজমত উল্লা বলেন, ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে কোনো প্রার্থীর প্রতি হয়রানিমূলক আচরণ হচ্ছে না, হবেও না।

তিনি বলেন, প্রচারণাকালে আমি নগরবাসীর ব্যাপক সমর্থন পেয়েছি, যেখানেই গিয়েছি নৌকার পক্ষে গণজোয়ার দেখতে পেয়েছি। গাজীপুরে ভোট উৎসব হচ্ছে, একটি দল অংশ না নিলেও উৎসবে কোনো ঘাটতি হয়নি।

বিকালে তিনি গাজীপুর মহানগরীর বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঘরোয়া বৈঠকে যোগ দেন। সকাল থেকেই আজমত উল্লা খানের পক্ষে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা, সংগঠনের বিভিন্ন ইউনিটসহ গাজীপুর ও এর আশপাশ জেলা ও উপজেলার নেতাকর্মীরা গণসংযোগ করেন।

নগরবাসীকে সকালেই ভোটকেন্দ্রে আসার আহবান জায়েদার: যতই বাধা আসুক, যতই হুমকি আসুক, ভোটের দিন সকাল সকাল ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসার আহবান জানিয়েছেন নির্বাচনের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুন। প্রচারণার শেষ দিন বিকাল ৪টায় ছেলে জাহাঙ্গীর আলমকে সঙ্গে নিয়ে তিনি প্রচারণায় বের হন। পরে তিনি নগরের ছয়দানা, মালেকের বাড়ী, সালনা, চান্দনাসহ গাজীপুর শহরে গণসংযোগ করেন।

তিনি ভোটারদের উদ্দেশ্যে বলেন, ভোটের দিন ভোটারদের হাতে থাকবে সকল ক্ষমতা। তাই ভোটারদের সকল ধরনের অন্যায়ের জবাব ভোটের মাধ্যমে দেয়ার আহবান জানান তিনি। এছাড়াও ভোট যাতে কেউ ছিনিয়ে নিতে না পারে সেজন্য কেন্দ্র পাহাড়া দেয়ারও আহবান জানান জায়েদা খাতুন।

গণমিছিল করেছে ইসলামী আন্দোলন

প্রচারণার শেষ দিন নগরের ৫৭টি ওয়ার্ডে একযোগে ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করেই গণমিছিল করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। গতকাল বাদ আসর থেকে মাগরিবের আগ পর্যন্ত তারা এ মিছিলের কার্যক্রম চালায়। এর আগে দলের প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান দুপুরে টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকায় গণসংযোগ কার্যক্রম চালান। পরে বিকালে গাজীপুর সদর মেট্রো থানার বিভিন্ন এলাকায় তিনি গণসংযোগ করেন।

গণসংযোগকালে তিনি বলেন, তারা অন্যান্য প্রার্থীদের চেয়ে ব্যতিক্রমধর্মী প্রচার চালিয়ে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শেষ করেছেন। প্রতিটি ভোটারের কাছে তারা ভোটের দাওয়াত দিয়েছেন। প্রভাবমুক্ত ও সুষ্ঠু ভোট হলে তারাও জয়ের বিষয়ে আশাবাদী।

এ প্রার্থী বলেন, আমরা বিকল্প শক্তি হিসেবে ভোটারদের বুঝাতে মাঠে কাজ করেছি, কেননা সিটি গঠনের পর কোনো নির্বাচিত মেয়র যেমন তার পূর্ণ মেয়াদ শেষ করতে পারেনি, তেমনি নগরেরও উন্নয়ন হয়নি। আমাদের আশা ভোটারই সব শক্তির নিয়ামত হিসেবে আমাদের ওপর আস্থা রাখবে।

বিএনপির ভোটে কড়া নজর রনির

বিএনপি ঘরনার স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সরকার শাহ নুর ইসলাম রনি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। প্রথম থেকেই তার নজর বিএনপির ভোটের দিকে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপি নির্বাচন না করায় ও প্রতি ওয়ার্ডে তাদের কাউন্সিলর প্রার্থী না থাকায় তৃণমূলে কর্মী সমর্থকরা ভোটে অংশ নেবেন কিনা তা নিশ্চিত না হওয়ায় তার কপালে এখন চিন্তার ভাজ। দলের ভোট না পেলে তাকে হতাশ হয়েই ভোটের মাঠ থেকে ফিরতে হবে। প্রচারণার শেষ দিন তিনি টঙ্গী এলাকায় গণসংযোগে ব্যস্ত সময় কাটান।

তিনি বলেন, বিএনপি দলীয়ভাবে প্রার্থী না দেয়ায় দলটির অগনিত কর্মী সমর্থক তাকে বেছে নেবে। এছাড়াও সরকারবিরোধী ভোটও তিনি পাবেন। আধুনিক নগর গড়তে তাকে বেছে নেয়ার জন্য নগরবাসীর কাছে তার হাতি প্রতিকে ভোট চান তিনি।

ভোটের প্রচারে খুশি জাতীয় পার্টির নিয়াজ:

জাতীয় পার্টির হয়ে মেয়র পদে ভোটের জন্য নগর চষে বেড়িয়েছেন সাবেক সচিব এম এম নিয়াজ উদ্দিন। প্রচারণার শেষদিন তার মেয়ে ইশরাত জাহান সুপ্তিকে নিয়ে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত নগরীর গাছা, বোর্ডবাজার ও মেট্রো সদর থানা এলাকায় গণসংযোগ চালান।

গণসংযোগকালে তিনি বলেন, তিনি গাজীপুরের স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। অনেক লোককে চাকরি দিয়েছেন, শিক্ষাখাতে উন্নয়ন করেছেন সবকিছু মিলিয়ে তিনি জনগণের ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন। প্রচারণার শেষ দিন নগরবাসীর কাছে নিজের দেয়া ইশতেহার বাস্তবায়নের সুযোগ দিতে লাঙ্গল প্রতীকে ভোট চান।

ফ্যাক্টর হবে তরুণদের ভোট

দেশের বৃহত্তম নগর গাজীপুরে গত নির্বাচনের সময় ভোটার ছিল ১১ লাখ ৩৮ হাজার ২০৪ জন, এবার বেড়ে হয়েছে ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। ভোটার বেড়েছে ৪১ হাজার ২৭২জন। বাড়ন্ত এই ভোটারের বিশাল অংশই তরুণ। তাই নির্বাচনে তরুনদের ভোটও একটি ফ্যাক্টর হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন অনেকেই।

গাজীপুর সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার শিশির বলেন, মহানগরের হালনাগাকৃত ভোটারের সিংহভাগই তরুণ। তারা রাষ্ট্র ও রাজনীতি সম্পর্কে সাধারণ ভোটারের চেয়েও বেশি সচেতন। অতিতে যারা দুর্নীতি করেছেন তারা তাকে ভোট দেবে না, একই সঙ্গে নতুন নেতৃত্ব বিকাশ হোক সেটাও প্রত্যাশা করেন।

(ঢাকাটাইমস/২৪মে/আরকেএইচ/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

উপজেলা ভোটের মাঠে বিএনপির তৃণমূল নেতারা

উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ: বিএনপির ৬৪ নেতাকে শোকজ

ভোটের মাঠ থেকে স্বজনদের সরাতে পারেননি আ.লীগের মন্ত্রী-এমপিরা

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে: বিএনপির আরও ৫ নেতা বহিষ্কার

সরকারকে পরাজয় বরণ করতেই হবে: মির্জা ফখরুল

এমপি-মন্ত্রীর স্বজন কারা, সংজ্ঞা নিয়ে ধোঁয়াশায় আ.লীগ

মন্ত্রী-এমপির স্বজনরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে ব্যবস্থা: ওবায়দুল কাদের

স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির আরও এক নেতা বহিষ্কার 

দেশ গরমে পুড়ছে, সরকার মিথ্যা উন্নয়নের বাঁশি বাজাচ্ছে: এবি পার্টি

বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদ সালাম-মজনুর

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :