মার্কিন নতুন ভিসানীতিকে স্বাগত জানালেন রাজনীতিকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৬ মে ২০২৩, ০৯:৪৪| আপডেট : ২৬ মে ২০২৩, ১৬:০৮
অ- অ+

বাংলাদেশিদের জন্য নতুন ভিসানীতিতে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, যারা সুষ্ঠু নির্বাচন বাধাগস্ত করবে তারা মার্কিন ভিসা পাবেন না। নতুন ভিসানীতি ঘোষণার পরদিন গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতারা। সেখানে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য ঘোষিত ভিসানীতি নিয়ে আলোচনা হয় বলে বৈঠক সূত্র জানিয়েছে।

বৈঠক শেষে মার্কিন দূতাবাসের ফেসবুক পেজে পিটার হাসের বার্তা প্রচার করা হয়। সেখানে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে সমর্থন করে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে এমন ব্যক্তিদের ভিসা সীমিত করার এই নতুন ভিসানীতি সবার জন্য প্রযোজ্য।’

আরও পড়ুন>> শিগগিরই শুরু হচ্ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

আরও পড়ুন>>উপকমিটির বিষয়ে সতর্ক আ.লীগ

এরপর গতকাল বিকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বলেন, ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে সহায়তা করতেই যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করা হয়েছে।’ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ওই সাক্ষাৎ শেষে পিটার হাস বলেন, ‘এটি পূর্বনির্ধারিত সাক্ষাৎ ছিল এবং আমাদের নিয়মিত বৈঠকের অংশ। বৈঠকে দুই দেশের চমৎকার সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি যে নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তা নিয়েও আমরা আলোচনা করেছি।’

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতিকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অব্যাহত অঙ্গীকারের প্রতি জোরালো সমর্থনের জন্য সরকার যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রশংসা করছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘এতে চিন্তার কিছুই নেই। আমাদের যে অঙ্গীকার, একটি অবাধ-সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন আমরা করতে চাই, এটাকেই তারা সমর্থন দিয়েছেন। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট আয়োজন করতে যত ধরনের আয়োজন করা প্রয়োজন, আমরা তা করব। প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে বদ্ধপরিকর।’

ঢাকার গুলশানে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে শুরু হওয়া এ বৈঠক শেষ হয় দুপুর পৌনে দুইটায়।

আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ ও সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. এ আরাফাত, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ এবং জাতীয় পার্টির মহাসচিব অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নু এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্য মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও মুজিবুল হক চুন্নু আলাদাভাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তবে আওয়ামী লীগের কোনো নেতা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি।

মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘মার্কিন সরকার বাংলাদেশের জন্য তাদের ঘোষিত ভিসানীতির বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত জানতে চেয়েছে। প্রতিটি দলই মতামত দিয়েছে। আগামী নির্বাচন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একদল আরেক দলের সম্পর্কে বলেছে।’

ওই ভিসানীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য বোঝা গেছে উল্লেখ করে জাপা মহাসচিব বলেন, ‘তারা একটা ফেয়ার ইলেকশন চায় এবং সেটি যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়। এই ব্যাপারে আমাদের দল জাপাও একমত।’

‘আমরা বলেছি, মার্কিন সরকার যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তাতে জাতীয় পার্টির কোনো আপত্তি নেই। যারা এ ধরনের কাজ করবে, ইলেকশন আনফেয়ার করার জন্য জোর-জবরদস্তি করবে, সে যেই হোক মার্কিন সরকার যদি ভিসার বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয় সেটি সরকারের বিষয়।’ বলেন তিনি। এদিকে বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন ভিসানীতি সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তারই প্রতিফলন বলে মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘যারাই ভোট চুরির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদের প্রত্যেকের জন্যই এটা প্রযোজ্য। তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) এই পদক্ষেপ আগামী নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার ক্ষেত্রে সহায়তা করবে। যুক্তরাষ্ট্রের এই বার্তা আওয়ামী লীগ না ভাবলে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে হবে।’

বৈঠক শেষে মার্কিন দূতাবাসের ফেসবুক পেজে পিটার হাসের বার্তা প্রচার করা হয়। সেখানে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে সমর্থন করে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে এমন ব্যক্তিদের ভিসা সীমিত করার এই নতুন ভিসানীতি সবার জন্য প্রযোজ্য।’

এর আগে গত বুধবার এক বিবৃতিতে মার্কিন নতুন ভিসা নীতিকে স্বাগত জানায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সমুন্নত রাখতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারের অঙ্গীকারের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘোষণাকে স্বাগত জানায়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল উল্লেখ করে এতে বলা হয়, জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে এই সরকারের ধারাবাহিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতা রয়েছে।

নির্বাচনে অনিয়ম মোকাবিলার সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, নির্বাচনি প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের কঠোর নজরদারির মধ্যে থাকবে। যেসব অগণতান্ত্রিক শক্তি সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায় তারা সতর্ক থাকবে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার প্রচেষ্টা থেকে বিরত থাকবে বলে সরকার আশা করছে।

এতে আরও বলা হয়, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও দেশে উন্নয়নের চলমান রাখা সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের জনগণের ওপর নির্ভর করে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে প্রধানমন্ত্রীর যে অঙ্গীকার তার পাশে দাঁড়ানোয় যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়য়ের প্রশংসা করেছে বাংলাদেশ সরকার।

(ঢাকাটাইমস/২৬মে/আরআর/আরকেএইচ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের, যাদের ওপর আসছে?
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা