ঈদ সামনে রেখে মসলার বাজার নিয়ন্ত্রণে মাঠে ভোক্তা অধিকার
আসন্ন কোরবানি ঈদ সামনে রেখে মসলার বাজার নিয়ন্ত্রণে মৌলভীবাজার ও শ্যামবাজারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কাজ করবে বলে জানিয়েছে তদারককারি সংস্থাটি। রবিবার দুপুরে কারওয়ান বাজারে গরম মসলার মূল্য ও সরবরাহ স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, আগামীকাল সোমবার থেকে সারা বাংলাদেশে মসলার বাজার, বিশেষ করে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাই এবং পুরান ঢাকার মৌলভীবাজার, শ্যামবাজারের মসলার বাজার নজরদারিতে রাখছি। এখানে আন্ডার ইনভয়েসিং হলে এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কাজ করবো। এক সপ্তাহ আমি এটা অবজার্ভ করবো। তারপর ডিটেইলস রিপোর্ট সরকারের কাছে দেবো। ক্যাব থেকে বলা হয়েছে, সব আদা চাইনিজ আদা নামে বিক্রি হচ্ছে। চট্টগ্রামে আমাদের ভালো মানের আদা হয়, সেটা হার্ভেস্টিং এর আগেই কাঁচা বিক্রি করে অতি মুনাফা করবে, এটা দুই ধরনের প্রতারণা।
হঠাৎ আদার দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রসংগে তিনি বলেন, গরম মসলা এবং আদার ক্ষেত্রে বাজারে একটা অস্থিরতা তৈরি করা হচ্ছে। দাম বেড়ে যাচ্ছে। কোরবানিকে টার্গেট করে এটা করা হচ্ছে বলে আমাদের ধারণা। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টও তাই বলছে।
অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মঞ্জুর শাহরিয়ার বলেন, সারা বছর মসলার বাজার স্থিতিশীল ছিল, এখন যখন ঈদ ঘনিয়ে আসলো, ব্যবসায়ীরা মোচড় দিয়ে উঠেছে। ঈদের আগে কেউ কেউ বাজারে কারসাজি করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত আছে।
এসময় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আবদুল জব্বার মণ্ডল মসলার বাজারে অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে বলেন, মৌলভীবাজারের মসলা ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো দাম নির্ধারণ করেন। সেখানে কোনো মূল্য তালিকা দেখা যায় না। কোথা থেকে কত দামে এনেছেন তা-ও জানাতে চান না। এখানে আমাদের কাজ করার জায়গা আছে। মসলার দোকানে টেক্সটাইল কালার ব্যবহার করতেও দেখছি। ফুডগ্রেড কালার নয়।
তিনি বলেন, পাইকারিতে ১২৯ টাকা থেকে ২৫০ টাকা দরে আদা বিক্রি করা হচ্ছে। পাইকারির ১২৯ টাকার আদা খুচরা বাজারে গিয়ে ১০০ টাকারও বেশি লাভ করা হচ্ছে। ২৫০-২৮০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীরা নিজেদের কমিশন এজেন্ট দাবি করেন। তারা বলেন এই পণ্যগুলো আমাদের নয়। কমিশনের বিনিময়ে পণ্য বিক্রি করি। কিন্তু উৎপাদকের কোনো ক্যাশমেমো তারা দিতে পারেন না। মৌখিকভাবে এই মূল্য নির্ধারণ করে থাকে।
আদার নাম নিয়ে ঢাকা নিউ মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের বলেন, খুচরা ও পাইকারির মধ্যে এত পার্থক্য হতে পারে না। আপনারা শুধু মার্কেটগুলো মনিটরিং করেন। মহল্লার মধ্যেও এটা হতে পারে। আমি নিজেও ৩০০ টাকা করে কিনেছি আজকে। মূল বিষয়টা খতিয়ে দেখা দরকার। আপনারা অভিযানে না গিয়ে, ব্যক্তিগতভাবে বাজারে যান। তাহলে মূল চিত্রটা দেখতে পারবেন। পাড়া মহল্লায় বিভিন্ন দোকান হয়ে গেছে। তারা অনেকভাবেই বিক্রি করেন। আদা ৫০০ টাকা বলছে, এটি আমি কখনো শুনিনি।
অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক ভার্চুয়ালি সংযুক্ত থেকে খাতুনগঞ্জের মসলার বাজার সম্পর্কে সভাকে অবহিত করেন। তিনি জানান সেখানে চায়না আদা মার্কেটে তেমন নেই আর বার্মিজ ও ইন্ডিয়ান আদা ১৮০-১৯০ টাকা কেজি দরে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে যা খুচরা বাজারে ২২০-২৮০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-আযহার জন্য পর্যাপ্ত মসলার মজুদ রয়েছে।
বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের উপপ্রধান জানান, আদা-জিরাসহ আমদানিকৃত মসলার আমদানি মূল্যের সাথে বিক্রয় মূল্যে বেশ অসঙ্গতি রয়েছে যা অধিকতর পর্যালোচনার প্রয়োজন।
নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি, শ্যামবাজার, কারওয়ান বাজার, শাহ আলী মার্কেটসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়, পাড়া-মহল্লার দোকানে মসলার বাজারে পর্যাপ্ত শৃঙ্খলা নেই যা সামগ্রীকভাবে মসলার বাজারে প্রভাব ফেলছে। তাদের মতে পোর্টে মসলা খালাসের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সময় লাগে যা মসলার মূল্য বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলছে। এছাড়াও তারা বলেন, পাইকারি ব্যবসায়ীগণ খুচরা ব্যবসায়ীদের ক্রয় রশিদ প্রদান করছেন না। এক্ষেত্রে খুচরা ব্যবসায়ীগণ পাইকারী বাজার কঠোরভাবে তদারকির অনুরোধ জানান।
সভায় ক্যাবের প্রতিনিধি বলেন, মসলার খুচরা ও পাইকারী বাজারে মূল্যের অসঙ্গতি রয়েছে। এছাড়াও সুপার শপ গুলোতে দেখা যায়, তাঁরা পাইকারী বাজার থেকে মসলা সংগ্রহ না করে বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে সংগ্রহ করছে। এতে একাধিক হাত বদলের মাধ্যমে মসলার মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও পার্বত্য অঞ্চলের আদা, চায়না আদা নামে বিক্রির মাধ্যমে ভোক্তাদের প্রতারণা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে অধিদপ্তরকে তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক ও সহকারী পরিচালকগণ, বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধি, এনএসআইয়ের প্রতিনিধি, ক্যাবের প্রতিনিধি, স্বপ্ন মীনাবাজারসহ বিভিন্ন সুপারশপ প্রতিনিধি, নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধিরা।
(ঢাকাটাইমস/২৮মে/কেআর/কেএম)