গরমে কালোজাম যে নিয়মে খেলে উপকার পাবেন

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ৩০ মে ২০২৩, ০৯:৪৩ | প্রকাশিত : ৩০ মে ২০২৩, ০৯:০০

চলছে মধুমাস জৈষ্ঠ্য। গ্রীষ্মের প্রচন্ড দাবদাহে বাজারে মৌসুমী ফলের সমারোহ। গ্রীষ্মকালীন ফলের মধ্যে কালোজাম একটি জনপ্রিয় ফল। অন্য সব মৌসুমি ফলের তুলনায় জামের স্থায়ীকাল কম হলেও এটি পুষ্টিগুণে অতুলনীয়। এই গরমে প্রতিদিন কালোজাম খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা৷ কালো জামে সুক্রোজ একেবারেই থাকে না৷ ফলে কালো জাম রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে৷ চিরসবুজ কালোজাম উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম সিজিজিয়াম কামিনি। কালোজাম গাছের উদ্ভব হয় দক্ষিণ এশিয়া, সিলন, আন্দামান ও ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জে। বাংলাদেশ ছাড়াও পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও ইন্দোনেশিয়ায় কালোজাম ফল ব্যাপকভাবে চাষ হয়। আমাদের দেশে কুমিল্লা, নোয়াখালী, গাজীপুর, সিলেট, ঢাকা, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর ও টাঙ্গাইল জেলায় কালোজাম বেশি উৎপন্ন হয়।

জাম নানা দেশে নানা নামে পরিচিত, যেমন- জাম্বুল, জাম্ভুল, জাম্বু, জাম্বুলা, জাভা প্লাম, জামুন, কালোজাম, জামব্লাং, জাম্বোলান, কালো প্লাম, ড্যামসন প্লাম, ডুহাট প্লাম, জাম্বোলান প্লাম, পর্তুগিজ প্লাম ইত্যাদি।

জামে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ আছে যা অনেক ঔষধি বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। জামের রঙ সাধারণত বেগুনি বা কালো হয়ে থাকে এবং স্বাদে বেশিরভাগ মিষ্টি ও সামান্য টক। অন্যান্য ফলগুলোর তুলনায় এটি স্বাস্থ্যকর এবং এতে আছে প্রয়োজনীয় পুষ্টি। পটাশিয়াম, ফসফরাস, ক্যালশিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ জাম শরীরের অনেক সমস্যার সমাধান করে।

জামে ক্যালোরি খুব কম যা একে স্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসেবে উপস্থাপন করে। এই ফলের বীজ, পাতা এবং ছালের ঔষধি মূল্য রয়েছে এবং এটি বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাগুলোতে ব্যবহার করা হয় এবং এর চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

১০০ গ্রাম কালোজামে রয়েছে শক্তি ৬০ কিলোক্যালরী, শর্করা ১৫.৫৬ গ্রাম, স্নেহ পদার্থ ০.২৩ গ্রাম, প্রোটিন ০.৭২ গ্রাম, ভিটামিন এ ৩.০ আন্তর্জাতিক একক, থায়ামিন বি১ ০.০০৬ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লাভিন বি২ ০.০১২ মিলিগ্রাম, ন্যায়েসেন বি৪ ০.২৬০ মিলিগ্রাম, প্যানটোথেনিক অ্যাসিড বি৫ ০.১৬০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি৬ ০.০৩৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ১৪.৩ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৯ মিলিগ্রাম, লোহা ০.১৯ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১৫ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ১৭ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৭৯ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ১৪ মিলিগ্রাম, পানি ৮৩.১৩ গ্রাম।

গরমে বেশি করে কালোজাম খেলে নানা রোগ থেকে নিস্তার মিলবে। সেই সঙ্গে আপনার সারা বছরের পুষ্টির চাহিদাও মেটাবে। রক্তের টক্সিন দূর করা থেকে শুরু করে হাড় মজবুত করা। সব জায়গায় এর রয়েছে গুণাগুণ। আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ জাম হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে। এছাড়াও রয়েছে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা।

কালোজাম ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুব ভালো। কালোজামের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন সি, থিয়ামিন, রাইবোফ্লাভিন সমৃদ্ধ কালোজাম খেলে পেট ভালো থাকে। দাঁত আর মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও কালোজাম অপরিহার্য।

ডায়াবেটিস মোকাবিলায় অব্যর্থ কালোজাম৷ তাই প্রতিদিন কালোজাম খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা৷ কালোজামে সুক্রোজ একেবারেই থাকে না৷ ফলে কালোজাম রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে৷ তবে কালোজামের শাঁসের থেকে অনেক বেশি উপকারি কালোজামের বীচি৷ কালোজামের বীজে থাকে জাম্বোলিন৷ যা স্টার্চ সুগারে পরিণত করতে সাহায্য করে৷ ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে কালোজাম৷

ক্যানসার প্রতিরোধে উপকারী কালোজাম। কালোজাম মুখের ভেতর উৎপাদিত ক্যানসারের সহায়ক ব্যাকটেরিয়ার প্রভাব থেকে দেহকে রক্ষা করে মুখের ক্যানসার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রঙিন ফলের ভেতর যে পরিমাণ যৌগিক উপাদান রয়েছে, এর মধ্যে কালোজামে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ যৌগিক উপাদান রয়েছে যা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সাহায্য করে। জাম লড়াই করে জরায়ু, ডিম্বাশয় ও মলদ্বারের ক্যানসারের বিরুদ্ধে।

জামের পুষ্টিগুণ পেতে হলে যেভাবে খাবেন

ফল খাওয়ার পর এমনিতেই পানি খেতে না করা হয়। তৃষ্ণা পেলেও জাম খেয়ে কখনও পানি খাওয়া যাবে না। তা না হলে ডায়রিয়া ও বদহজমের মতো সমস্যা হতে পারে। জাম খাওয়ার অন্তত আধ ঘণ্টা পরে পানি খান।

খালি পেটে জাম না খাওয়া ভালো। এতে বদহজম, অম্বল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

জাম খাওয়ার পর দুধ, পনির, দইয়ের মতো দুগ্ধজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।

জাম খাওয়ার সাথে সাথে আচারজাতীয় কোনও খাবার না খাওয়াই ভালো।

জাম এবং হলুদ খুবই মারাত্মক জুড়ি। এই দুটো জিনিস কখনও একসঙ্গে খাবেন না। জাম খাওয়ার পর তাই হলুদ দিয়ে তৈরি কোনও খাবার না খাওয়াই ভালো।

(ঢাকাটাইমস/৩০ মে /আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :