বিএনপির ষড়যন্ত্রে অভিনয় ছেড়েছিলেন, দাবি শমী কায়সারের! কী ঘটেছিল?

বহু পরিচয়ে পরিচিত একজন মানুষ শমী কায়সার। তিনি একসময়ের সফল অভিনেত্রী। বর্তমানে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা, প্রযোজক ও রাজনীতিক। পাশাপাশি ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ই-ক্যাবের সভাপতি হিসেবেও অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন অভিনয় জগতের জনপ্রিয় এই মুখ।
শমী কায়সারের অভিনয়ে হাতেখড়ি হয়েছিল ঢাকা থিয়েটারে। এখানে তিনি ১২ বছর কাজ করেন। প্রথম নাটকে অভিনয় করেন ১৯৮৯ সালে। ওই সময় পরিচালক আতিকুল হক চৌধুরী এমন একজন মেয়ে খুঁজছিলেন, যে কিনা নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতে পারে। তিনি খুঁজে পান শমী কায়সারকে।
পরিচালক আতিকুল ইসলামের ‘কেবা আপন কেবা পর’-এ অভিনয়ের মাধ্যমেই টিভি পর্দায় পথচলা শুরু করেন শমী কায়সার। এরপর ইমদাদুল হক মিলনের উপন্যাস অবলম্বনে এবং আব্দুল্লাহ আল মামুনের পরিচালনায় তিন পর্বের ধারাবাহিক নাটক ‘যত দূরে যাই’ দিয়ে পান পরিচিত।
পরবর্তীকালে ‘নক্ষত্রের রাত’, ‘ছোট ছোট ঢেউ’, ‘স্পর্শ’, ‘অরণ্য’, ‘আকাশে অনেক রাত’, ‘মুক্তি’, ‘অন্তরে নিরন্তরে’, ‘স্বপ্ন’, ‘ঠিকানা’সহ বহু নাটকের প্রধান মুখ হয়ে উঠেছিলেন শমী কায়সার। তার সঙ্গে জাহিদ হাসান, মাহফুজ আহমেদ এবং তৌকীর আহমেদদের জুটি ছিল দর্শকনন্দিত।
তখন বাড়িতে বাড়িতে সাদা-কালো টেলিভিশন। তবু শমী কায়সার পর্দায় এলে যেন রঙিন লাগতো। এরপর এলো রঙিন টেলিভিশন। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এখন আরও কত প্ল্যাটফর্ম এসেছে। কিন্তু শমী কায়সার আর নিয়মিত পর্দায় আসেন না। কী এমন অভিমান ছিল? যার কারণে অভিনয় থেকে তিনি এভাবে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন?
একটি সাক্ষাৎকারে শমী কায়সার নিজেই জানান সে কথা। তার কথায়, ‘কিছু অভিমান তো থাকেই। অভিমান থাকতেই পারে। মানুষ যেমন জীবনে অনেক কিছু পায়, তেমন না পাওয়ার কষ্টও থাকে। নানা ধরনের অভিমানও থাকে। আমি অভিনয় দিয়ে নিজের জায়গা কষ্ট করে অর্জন করেছিলাম। কোনো রাজনৈতিক দলের সাহায্যে পাইনি বা কেউ গড়ে দেয়নি।’
তবে রাজনৈতিক দল বিএনপির কারণে অভিনয়ে অনিয়মিত হয়ে পড়েন বলে অভিযোগ করেন শমী কায়সার। তিনি বলেন, ‘যখন বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসল, আমার সব নাটক ব্যান্ড করে দিল, চালালো না।’
অভিনেত্রীর মতে, ‘সংস্কৃতি চর্চার সঙ্গে রাজনৈতিক চিন্তা ভাবনার দ্বন্দ্ব থাকতেই পারে। কিন্তু এমন নোংরাভাবে কাজটা করল বিএনপি! আমার পরিবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে আমি ধারণ করি। সে কারণেই ব্যক্তি শমী কায়সারের উপর ওই নিষেধাজ্ঞা এসেছিল।’
নিজের অভিমানের জায়গাটা সম্পর্কে জানিয়ে শমী কায়সার বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে আমি ভিকটিম হয়েছিলাম। কারণ, আমি রাজনৈতিক ভাবে ভোকাল। কিন্তু আমার অভিমানের জায়গাটা ছিল যে, অভিনয় জগতে এবং থিয়েটারে যাদের সঙ্গে আমি বেড়ে উঠেছিলাম, ওই দুঃসময়ে তাদের যে সাপোর্টটা আমার দরকার ছিল, সেটা আমি পাইনি।’
সেই অভিমান থেকেই পেশা বদল করে ব্যবসায়ী হওয়ার চিন্তা আসে বলে জানান শমী কায়সার। অভিনেত্রীর কথায়, ‘তখন আমার মনে হলো, অভিনয় না হয় করলাম না, কিন্তু বিকল্প কিছু তো করা দরকার। এরপরই আমি ধানসিড়ি কমিউনিকেশনের কাজ শুরু করি। পড়াশোনা করেছি মার্কেটিংয়ে। চিন্তা করলাম, ধানসিড়ি নিয়ে আমি নিজের একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করব। সেখান থেকেই বিজিনেসের যাত্রা শুরু।’
ধানসিড়ি হলো শমী কায়সারের মালিকানাধীন একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৭ সালে তিনি এটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠানের প্রযোজনায় ‘মুক্তি’ এবং ‘অন্তরে নিরন্তরে’সহ বেশ কয়েকটি নাটক নির্মিত হয়েছে। ২০১৩ সালের নভেম্বরে ধানসিড়ি কমিউনিকেশন লিমিটেড, রেডিও অ্যাক্টিভ নামে একটি বেতার কেন্দ্রের জন্য লাইসেন্স পায়।
তবে এখন আফসোস করেন শমী কায়সার। ওই সময় অন্যের উপর অভিমান করে অভিনয় ছাড়াটা ঠিক হয়নি বলে মনে করেন তিনি। তার কথায়, ‘এখনো অনেকে প্রশ্ন করেন, কবে অভিনয়ে ফিরব। কবে ফিরব জানি না। তবে যে অভিমানটা করেছিলাম, এখন পেছন ফিরলে মনে হয়, দরকার ছিল না। আমার একটা শিক্ষা হয়েছে যে, অন্যের উপর অভিমান করে নিজের কাজ বন্ধ করা ঠিক না।’
শমী বলেন, ‘নিন্দুকেরা অনেক কথাই বলে। দেখা গেল, যাকে নিয়ে বলে তার সঙ্গে ওই ঘটনার কোনো যোগসূত্রই নেই। আমাকে নিয়েও বলে। একটা হচ্ছে নিন্দা করা, আরেকটা মিথ্যা সমালোচনা করা, আরেকটা গঠনমূলক সমালোচনা করা। গঠনমূলক সমালোচনাকে সবসময় ওয়েলকাম করি। কিন্তু আমাদের চারপাশে শুধু মিথ্যা সমালোচনা আর নিন্দা।’
অভিনেত্রী বলেন, ‘২৫ বছর আগে যে অভিমানে অভিনয় ছেড়েছিলাম, সিদ্ধান্তটা ঠিক ছিল না। এটা হচ্ছে বয়সের ম্যাচারিটির কারণে। ২৫ বছর আগে আমার মধ্যে ওই ম্যাচুরিটি ছিল না। যাদেরকে সঙ্গে নিয়ে চলার কথা ছিল তারা তো সঙ্গে ছিল না। আমি সেই কারণে কেন অভিমান করব? এখনো অনেকে অনেক ধরনের নিন্দা আর সমালোচনা করে। এখন আর অভিমান হয় না।’
কিন্তু ২৫ বছর আগের আক্ষেপ ঘোচানোর সুযোগ যদি আসে, শমী কায়সার কি ফের অভিনয়ে আসবেন? অভিনেত্রী বলেন, ‘এটা এখন বলা মুশকিল। সময়ের খুব অভাব।’ বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে যদি মানানসই কোনো চরিত্র হয়? শমী কায়সার বলেন, ‘মানানসই হলে হয়তো দেখা যাবে। সেরকম চিত্রনাট্য, সেরকম ডিরেক্টর, সেরকম প্রোডাকশন হাউজ এবং সেরকম টিম যদি হয়, হোয়াই নট।’
অর্থাৎ, ভালো চরিত্র, গল্প এবং পরিচালক পেলে শমী কায়সার অভিনয়ে ফিরবেন বলে ইঙ্গিত দেন।
তবে শুধু নাটক নয়, দুটি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন এই অভিনেত্রী। ২০০২ সালে চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক ঘটকের জীবনী নিয়ে নির্মিত ‘দ্য নেম অব এ রিভার’ এবং ২০০৪ সালে ‘হাছন রাজা’ সিনেমা দুটিতে দেখা যায় শমী কায়সারকে। ফের কবে তাকে টেলিভিশন বা রুপালি পর্দায় দেখা যাবে, সেই অপেক্ষায় দর্শক।
শমী কায়সারের জন্ম ১৯৭০ সালের ১৫ জানুয়ারি ঢাকায়। তার বাবা শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সার। মা পান্না কায়সার একজন লেখিকা এবং সাবেক সংসদ সদস্য। সাবেক রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দুজা চৌধুরীর স্ত্রী মায়া হচ্ছেন পান্নার বোন। সেই হিসেবে শমী এবং রাজনীতিবিদ মাহি বি. চৌধুরী খালাতো ভাই-বোন।
(ঢাকাটাইমস/৭জুন/এজে)
সংবাদটি শেয়ার করুন
বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
বিনোদন এর সর্বশেষ

একবার নৌকা চেয়ে পাননি, ‘নাছোড়বান্দা’ সেই মাহির চোখ এবার দুই আসনে

গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে বাংলাদেশি মডেল তোরসা

নেটজনতার ওপর মহা বিরক্ত অভিনেতা নিলয়ের বর্তমান স্ত্রী

শ্রীদেবীর বিয়ের আগেই গর্ভে আসে বড় মেয়ে জাহ্নবী! কতটা সত্যি?

স্ত্রী থাকতেও দ্বিতীয় বিয়ে করে যেভাবে ফেঁসে যান উদিত নারায়ণ

বাংলাদেশি যেসব তারকা সঙ্গী পাল্টেছেন বারবার! হয়েছেন নিন্দিত

বোরকা পরে দুর্গাপূজার শপিং করবেন অপু বিশ্বাস

ফের বিয়ে করলেন শাহরুখ খানের এই পাকিস্তানি নায়িকা

এমন ঘন রেশমী চুল কীভাবে পেলেন মাধুরী? জানুন রহস্য
