আরও ভারী খেলাপির বোঝা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১০ জুন ২০২৩, ০৮:৩১ | প্রকাশিত : ১০ জুন ২০২৩, ০৮:২৭

এক লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকার বেশি খেলাপি ঋণ এখন ব্যাংক খাতের গলার কাটা। এ টাকা কবে আদায় হবে, তা অনিশ্চিত। খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমানোর শর্ত রয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলেরও। এ পরিস্থিতিতে- সরকার যখন খেলাপির লাগাম টেনে ধরতে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে, সেই সময়েও বেড়েই চলছে খেলাপির পরিমাণ। যা ভালো চোখে দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। নিশ্চিত করে বলতে পারছে না ঋণ প্রদানকারী কোনো ব্যাংক।

গত বছর মার্চ প্রান্তিক শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। তখন থেকেই এ খেলাপি ঋণ এ খাতের গলার কাটা হয়ে দাঁড়ায়। এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে খেলাপি ঋণ আদায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বেশকিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়। খেলাপি ঋণ আদায় এবং নতুন করে খেলাপির বোঝা যাতে না বাড়ে- চলে সেই প্রচেষ্টা। এর ওপর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া খেলাপি ঋণ কমানোর শর্ত সামনে এলে- তৎপরতা আরও বাড়ে। দেওয়া হয় বিশেষ সুযোগও। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। চলতি বছর মার্চ প্রান্তিক শেষে খেলাপির পরিমান দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি ৮০ লাখ টাকা। যা আগের বছরের তুলনায় ১৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছর মার্চ প্রান্তিক পর্যন্ত সরকারি ব্যাংক ঋণ বিতরণ করেছে ২ লাখ ৯১ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। যার মধ্যে ৫৭ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা খেলাপি। আর বেসরকারি ব্যাংক ১১ লাখ ৫ হাজার ৮৯ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। যার মধ্যে খেলাপির পরিমান ৫৬ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইএমএফের শর্ত এবং ঋণ খেলাপিদের জন্য বিশেষ সুবিধা দেওয়ার পরও খেলাপি ঋণ কমছে না। বরং ব্যাংক খাতের ‘প্রধান সমস্যা’ খেলাপি ঋণের পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। করপোরেট গভর্ন্যান্স ও খেলাপি ঋণকে দেশের ব্যাংক খাতের বড় দুই সমস্যা বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, মাত্র তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১১ হাজার কোটি টাকা। আর এক বছরে বেড়েছে ১৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। তবে অর্ধেকের বেশি খেলাপি ঋণই মাত্র ১০ ব্যাংকের। দেশে কার্যক্রম চালানো ৬১টি তফসিলি ব্যাংকের মধ্যে ১০ ব্যাংকেই খেলাপি ঋণ ৮১ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা। যা মোট খেলাপি ঋণের প্রায় ৬২ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্যমতে, চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিক শেষে ব্যাংক খাতের মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ খেলাপি হয়েছে।

গত বছরের (২০২২ সালের) মার্চ প্রান্তিক শেষে খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। এছাড়া গত বছরের ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ ২০ হাজার ৫৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে অর্থাৎ চলতি বছরের মার্চ শেষে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা।

মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের মধ্যে ৬২ শতাংশই ১০ ব্যাংকের। এসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ৮১ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্র মালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১৪ হাজার ৯৪৩ কোটি। এছাড়া জনতা ব্যাংকের খেলাপি ১৪ হাজার ৮৮৭ কোটি, সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ১২ হাজার ছয় কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংকে খেলাপি ৭ হাজার ৭৭৩ কোটি, রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ৭ হাজার ৫৮৫ কোটি, বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ৭ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা। ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ৬ হাজার ১০১ কোটি, এবি ব্যাংকের খেলাপি ৪ হাজার ৬৯ কোটি, পদ্মা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৩ হাজার ৪২৭ কোটি এবং বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২০৯ কোটি টাকায়।

ব্যাংকের মতো ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও বাড়ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। দেশে কার্যক্রম চালানো ৩৫টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৩টির খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যমতে, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মোট ঋণস্থিতি ৭০ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে ১৬ হাজার ৮২১ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ২৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ।

খেলাপি ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, করপোরেট গভর্ন্যান্স ও খেলাপি ঋণ দেশের ব্যাংকিং খাতের বড় দুই সমস্যা। পরিকল্পনার মাধ্যমে আমাদের ব্যাংকিং সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। ব্যাংকিং ব্যবস্থায় নৈতিকতার অনুশীলন প্রয়োগ করতে হবে। খেলাপি ঋণ কমাতে ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের আরও ভূমিকা রাখতে হবে।

ধারাবাহিকভাবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়াকে ভালো চোখে দেখছেন না অর্থনীতিবিদরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও অর্থনীতিবিদ ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, খেলাপি ঋণ কমানোর ক্ষেত্রে সফলতা আসছে না। খেলাপি ঋণ আদায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরও কঠোর হতে হবে। প্রয়োজনে কঠিন পদক্ষেপ নিতে হবে, ঋণ আদায়ে সময় বেঁধে দিতে হবে। সে সময়ের মধ্যে ব্যাংকগুলোকে কমাতে হবে খেলাপি ঋণ। না পারলে সেসব ব্যাংকের শাখা বন্ধের নির্দেশ দিতে হবে। কঠোরভাবে এটা তদারকি করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাংকগুলোকে গ্রাহকের দুর্বলতাও দেখতে হবে। সেখানে মাত্র কয়েকজনের সমস্যা থাকতেই পারে। তাই বলে ঢালাওভাবে খেলাপিতে ছাড় কেন!’

ঢাকাটাইমস/১০জুন/আরআর/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

দুঃস্থ ও অসহায়দের মাঝে জনতা ব্যাংকের ইফতার সামগ্রী বিতরণ

ঈদ উৎসব মাতাতে ‘ঢেউ’য়ের ওয়েস্টার্ন সংগ্রহ

৮ হাজার কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন একনেকে

সিটি ব্যাংকের ২০২৩ সালের মুনাফা ৬৩৮ কোটি টাকা, বেড়েছে ৩৩%

ঈদ অফারে বিনামূল্যে মিনিস্টারের রেফ্রিজারেটর পেলেন আসাদুজ্জামান সুমন

সোনালী ব্যাংকে ‘বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক নেতৃত্ব ও দেশের উন্নয়ন’ শীর্ষক আলোচনাসভা

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৭টি নতুন উপশাখার উদ্বোধন

স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের শ্রদ্ধা

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে কর্মসংস্থান ব্যাংকের শ্রদ্ধা

স্বাধীনতা দিবসে স্মৃতিসৌধে ইসলামী ব্যাংকের শ্রদ্ধা

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :